ঋণের বোঝা চাপিয়ে কিডনি বিক্রির প্রলোভন

মো: রাশেদুজ্জামান
মো: রাশেদুজ্জামান মো: রাশেদুজ্জামান জয়পুরহাট
প্রকাশিত: ১২:৩৬ পিএম, ০৫ জুন ২০২২

অডিও শুনুন

জয়পুরহাটে দালালের ফাঁদে পা দিয়ে কিডনি বিক্রি করছেন গ্রামের অভাবি মানুষ। মূলত স্বাচ্ছন্দ্যে থাকার আশা, দাদন ব্যবসায়ীর চাপ, মেয়ের বিয়ের খরচ, জুয়া খেলা কিংবা নেশার টাকা জোগাড় করতে তারা কিডনি বিক্রি করেন। তবে এতে বিক্রেতারা সামান্য নগদ অর্থ হাতে পেলেও সিংহভাগ অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে দালাল চক্র।

গ্রামের বেকার, দিনমজুর, ভ্যানচালক, হতদরিদ্র সহজ সরল মানুষগুলোকে টার্গেট করে দালাল চক্র ও দাদন ব্যবসায়ীরা। অভাবের কারণে কিছু টাকা চড়া সুদে ধার দেন দালাল চক্র ও দাদন ব্যবসায়ীরা। তাদের ধার ও সুদের টাকা সময় মতো না দিতে পারলে শুরু হয় শরীর থেকে কিডনি নেওয়ার অভিনব সু-কৌশল।

অভাবি ও ঋণগ্রস্ত মানুষদের মোটা অর্থের প্রলোভন দেখিয়ে তাদের কিডনি বিক্রি করতে বাধ্য করা দালাল চক্রের ২ সদস্যকে সম্প্রতি গ্রেফতার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ। তথ্য-প্রযুক্তি ও গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার ওই দালালদের ঢাকার বিভিন্ন স্থান থেকে গ্রেফতার করা হয়।

গ্রেফতাররা হলেন- কালাই উপজেলার টাকাহুত গ্রামের মৃত বেলায়েত হোসেন সরকারের ছেলে আব্দুল গোফফার সরকার (৪৫) ও জয়পুর-বহুতি গ্রামের আব্দুস সাত্তারের ছেলে নূর আফতাব (৪২)।

কয়েক বছর ধরে কিডনি বিক্রির খবর শোনা না গেলেও ১৪ মে জেলার কালাই ও পাঁচবিবি উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম থেকে দালাল চক্রের আরও ৭ সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়। তারা হলেন- সাহারুল ইসলাম (৩৮), ফরহাদ হোসেন চপল (৩১), মোশাররফ হোসেন (৫৪), মোকাররম হোসেন (৫৪), শাহারুল ইসলাম (৩৫), সাইদুল ফকির (৪৫) ও সাদ্দাম হোসেন (৪০)।

জেলা পুলিশ সুপার মাছুম আহম্মদ ভূঞা জানান, কিডনির দালাল চক্র তিনটি স্তরে কাজ করে। প্রথম স্তরে আছে একবারে স্থানীয় পর্যায়ের কিছু অর্থলোভী, যাদের কাজ এলাকার বিভিন্ন অসহায় ব্যক্তিদের টার্গেট করা এবং মোটা অংকের টাকার লোভ দেখিয়ে প্রলুব্ধ করা। তাদের ফাঁদে পা দেয় বা রাজি হয় এমন ভিকটিমদেরকে ঢাকায় নিয়ে গিয়ে চক্রের দ্বিতীয় স্তরের সদস্যদের সঙ্গে সম্বনয় করে তাদের কাছে হস্তান্তর করে এ স্তরের দালালরা।

দ্বিতীয় স্তরের সদস্যরা ভিকটিমদের ঢাকা শহরে থাকা-খাওয়া, বিভিন্ন শারীরিক পরীক্ষা-নীরিক্ষা, পাসপোর্ট ভিসাসহ আনুষাঙ্গিক কাগজপত্র প্রস্তুত করে তৃতীয় স্তরের চক্রের কাছে হস্তান্তর করে। এই দ্বিতীয় স্তরের সদস্যদের মধ্যে কিছু অসাধু ডাক্তার ও ক্লিনিক জড়িত।

এই চক্রের তৃতীয় স্তরের সদস্যরা ভিকটিমদের দেশে ও দেশের বাইরে বিশেষ করে ভারত ও দুবাইতে নিয়ে যায়। পরবর্তীতে তাদের সুবিধামতো সময়ে ভিকটিমদের শরীর থেকে কিডনি অপসারণ করা হয়।

পুলিশ সুপার মাছুম আরও জানান, সাম্প্রতিক সময়ে কালাই থানা এলাকা থেকে কয়েকজন লোক কিডনি চক্রের প্রধান দালাল সাত্তারের মাধ্যমে দুবাই ও ভারতে অবস্থান করছেন। গ্রেফতার দালালরা দীর্ঘদিন ধরে জয়পুরহাট জেলাসহ পার্শ্ববর্তী নওগাঁ, গাইবান্ধা, দিনাজপুর এলাকার নিরীহ, ঋণগ্রস্ত ও হতদরিদ্র নারী এবং পুরুষদের মোটা অংকের টাকার লোভ দেখিয়ে তাদের কিডনি বিক্রি করতে বাধ্য করে আসছিলেন।

মূলহোতা ছাত্তার

জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার বহুতি গ্রামের আব্দুল জোব্বার খলিফার ছেলে আব্দুস ছাত্তার অভাবের তাড়নায় কাজের খোঁজে ২০০৫ সালে ঢাকায় পাড়ি জমান। সেখানে ঢাকার বুরাইজ কর্পোরেশন নামক একটি প্রতিষ্ঠানে দারোয়ানের চাকরি নেন। সেখানে চাকরিরত অবস্থায় ওই কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালকের ছেলে কিডনি রোগে আক্রান্ত হয়। সেসময় আব্দুস ছাত্তার আড়াই লাখ টাকার বিনিময়ে সিঙ্গাপুর মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে তার একটি কিডনি বিক্রি করেন।

কিডনি বিক্রির টাকা পেয়ে ওই চাকরি ছেড়ে গ্রামে ফিরে এসে দুই সন্তানের জননি চাচাতো বোন আছিয়া বেগমকে তার স্বামীর বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে বিয়ে করেন। এরপর গ্রামের বহুতি বহুমুখী আলিম মাদরাসার সভাপতি শ্বশুর বোরহান উদ্দিন ফকিরের মাধ্যমে চাকরি নেন নৈশ প্রহরীর। সেই ছাত্তার এখন রীতিমত স্বচ্ছল। ২০০৫ সালে কিডনি বিক্রি করতে গিয়ে পরিচয় হয় কিডনি বিক্রি চক্রের মূল হোতা ঢাকার দালাল তারেকের সঙ্গে। এক পর্যায়ে তার সঙ্গে সখ্যতা গড়ে ওঠে। দালাল তারেকের লোভনীয় দিক নির্দেশনায় তিনি জড়িয়ে পড়েন ওই চক্রের সঙ্গে। এরপরই অল্প সময়ের মধ্যে তিনি হয়ে ওঠেন ধনাঢ্য।

kid

গ্রামের অভাবি মানুষদের অভাব দূর করতে কিডনি বিক্রি করতে প্রলুব্ধ করেন তিনি। নীরিহ মানুষদের জানান, শরীরের দুটো কিডনির একটি বিক্রি করলে কোনো সমস্যা হবে না। আর বিনিময়ে পাওয়া যাবে দেড় থেকে দুই লাখ টাকা। এতে কাজও হয়। আর এ কাজে কিডনি প্রতি লক্ষাধিক টাকা কমিশন পেয়ে আব্দুস ছাত্তার প্রচুর বিত্ত বৈভবের মালিক হন।

প্রতি সপ্তাহে কিডনি দাতাদের রক্ত পরীক্ষার পাশাপাশি কিডনি প্রতিস্থাপনের জন্য ঢাকায় পাড়ি জমান ছাত্তার। তারপর থেকে ক্রমান্বয়ে এ এলাকায় কিডনি বিক্রেতাদের তালিকা বাড়তে থাকে। ২০১১ সালে গ্রেফতার হলেও জামিন নিয়ে ছাত্তার এখন ঢাকায় অবস্থান করে কিডনি চক্র পরিচালনা করেন।

কিডনি চক্রের দালাল, অভাবি কিডনি বিক্রেতা ও এর সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে এ পর্যন্ত থানায় ৪টি মামলা হলেও আইনের ফাঁক ফোকরে জামিনে বেরিয়ে এসে আবারো তারা সক্রিয় হয়ে উঠছে। ফিরে যাচ্ছে পুরনো পেশায়। যে কিডনি বিক্রি করে পরবর্তীতে সেই কিডনির দালালে পরিণত হয়, গ্রামের সহজ-সরল অভাবি মানুষদের একটি কিডনি দিলে কোনো ক্ষতি হয় না এই কথাগুলো বোঝায়।

তবে কালাই উপজেলার মাত্রাই, উদয়পুর, আহমেদাবাদ ইউনিয়নের ২০ গ্রামের কিডনি বিক্রেতারা রোগে শোকে কর্মক্ষমতা হারিয়ে এখন মৃত্যুর প্রহর গুনছেন। তারপরও থেমে নেই কিডনি কেনা-বেচা চক্রের অপতৎপরতা।

অনুসন্ধান ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ২০১১ সাল থেকে কালাই উপজেলার মাত্রাই ও উদয়পুর ইউনিয়নের প্রায় ৪০টি গ্রামে বেকার, দিনমজুর, ভ্যানচালক, হতদরিদ্র সহজ সরল মানুষগুলোকে টার্গেট করে দালাল চক্র ও দাদন ব্যবসায়ীরা। অভাবের কারণে কিছু টাকা চড়া সুদে ধার দেন দালাল চক্র ও দাদন ব্যবসায়ীরা। তাদের ধার ও সুদের টাকা সময় মতো না দিতে পারলে শুরু হয় শরীর থেকে কিডনি নেওয়ার অভিনব সু-কৌশল। কাউকে ঢাকায় গার্মেন্টসে চাকরি, কাউকে রিকশা চালানো, কাউকে মিল ফ্যাক্টারিতে কাজের বেশি বেতনের লোভ দেখায়। তারপর তাদের ঢাকায় নিয়ে যায়। এরপর সু-কৌশলে দালাল চক্রের চুক্তি করা ক্লিনিক ও হাসপাতালগুলোতে তাদেরকে কিডনি দেওয়ার জন্য ৩ থেকে ১০ লাখ টাকা দেওয়া হবে বলে পরীক্ষা করান। তারপরই তাদের নির্ধারিত জায়গায় রেখে বিভিন্ন জেলা থেকে পাসপোর্ট ও ভিসা সম্পন্ন করে তাদের ভারতে দালালদের চুক্তিকরা হাসপাতালে কিডনি ট্রান্সফারের জন্য পাঠান। কিডনি দেওয়ার পর হাসপাতালের ব্যবস্থাপত্র বা অন্য কোনো কাগজপত্র না দিয়ে শুধু পাসপোর্ট দিয়ে তাদেরকে বাংলাদেশে পাঠানো হয়।

দেশে আসার পরই শুরু হয় ভুক্তভোগীদের শারীরিক নানা অসুস্থতা। পড়েন আইনি নানা জটিলতায়। আবার স্থানীয় প্রভাবশালী দালালদের কাছে টাকা চাইলে চুক্তির টাকা না দিয়ে, দেন নানা রকম হুমকি। এ পর্যন্ত কিডনি সংক্রান্ত ১৬টি মামলা হয়েছে। কিন্তু আইনের ফাঁক ফোকরে জামিনে বেরিয়ে এসে আবারো সক্রিয় হয়ে উঠেছেন দালালরা।

জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার কয়েকটি গ্রামের কিডনি বিক্রেতারা বর্তমানে ভালো নেই। ঋণের বেড়াজাল থেকে বেড়িয়ে এসে যে মানুষগুলো একটু উন্নত জীবন যাপনের স্বপ্ন দেখেছিলেন তারা এখন রোগ শোকে কর্মশক্তি হারিয়ে মৃত্যুর প্রহর গুনছেন। ৫ থেকে ৭ বছর আগে কিডনি দেয়া এ মানুষগুলো এখন নানা ধরণের সমস্যায় ভুগছেন। এদের কোমরে ব্যথা হয়, মাঝে মধ্যেই জ্বর হয়, হয় প্রস্রাবের জ্বালা যন্ত্রণা। একটু হাঁটাচলা করলেই শাসকষ্ট দেখা দেয়। ভারী কাজ একেবারেই করতে পারছেন না তারা। এছাড়া কিডনি বিক্রি করায় সমাজে হেয় হচ্ছেন তারা।

কিডনি বিক্রেতা দুলাল মিয়া জানান, অভাবের কারণে তিনি গ্রামের পাঁচজন দাদন ব্যবসায়ীর কাছ থেকে চড়া সুদে এক লাখ টাকা ঋণ করেন। তিন মাস পরপর প্রতি হাজারে দেড় হাজার টাকা হারে কিস্তি দিতে হতো। শরীরই তার সম্পদ। যা রোজগার করতেন দাদন ব্যবসায়ীদের কিস্তি চালাতেই শেষ হতো। স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়ের ভরণ-পোষণ ভালোভাবে করতে পারতেন না। দুলালের দুর্বলতার সুযোগ নেন একই গ্রামের কিডনি বিক্রির দালাল কাউছার। দেনা থেকে মুক্তি পাওয়াসহ উন্নত জীবন যাপনের প্রলোভন দেখান তাকে। দালালের পাতা ফাঁদে পা দিয়ে ৬ লাখ টাকা চুক্তিতে কুমিল্লার মাহবুবুল আলম সিদ্দিকী নামে এক প্রকৌশলীর কাছে কিডনি বিক্রি করেন। কিন্তু বিনিময়ে পান মাত্র ৮০ হাজার টাকা।

বাকি টাকার কথা কিডনি গ্রহিতার লোকজনকে জিজ্ঞাসা করলে কাউছারকে সব টাকা দেওয়া হয়েছে বলে জানান। কাউছারের সঙ্গে টাকার জন্য যোগাযোগ করলে সে বিভিন্ন রকম ভয়-ভীতি দেখান এবং মেরে ফেলার হুমকিও দেন।

তিনি বলেন, ওই টাকায় আমার দেনাও মিটেনি, অভাবও ঘোচেনি। বরং কিডনি বিক্রির সঙ্গে সঙ্গে নিজের কাজ করার ক্ষমতাটুকুও হারিয়ে ফেলেছি।

তিনি আরও জানান, প্রায় চার মাস ধরে বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও যাবতীয় প্রক্রিয়া শেষে ভারতের ফোর্টিস হাসপাতালে তার কিডনি প্রতিস্থাপন করা হয়। এজন্য কুমিল্লার প্রকৌশলী মাহবুবুল আলম সিদ্দিকীর সঙ্গে তার ছোট ভাইয়ের সম্পর্ক দেখানো হয়। তার নাম ঠিক রেখে কুমিল্লার ঠিকানায় আইডিকার্ডসহ যাবতীয় কাগজপত্র জালিয়াতি করে তৈরি করা হয়।

জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার ভেরেন্ডি গ্রামের কিডনি বিক্রেতা মেহেরুল ইসলাম বলেন, ঋণের বোঝায় জর্জরিত হয়ে এবং অর্থের মোহে পড়ে দুই লাখ টাকার বিনিময়ে সাত বছর আগে আমি আমার শরীরের মূল্যবান অঙ্গ কিডনি বিক্রি করে নিজের কর্মক্ষমতাও বিক্রি করেছি। এখন আমি আর কোনো কাজ-কর্ম করতে পারি না। নিজেকে বড় অসহায় আর অপরাধী মনে হয়। আমি যে ভুল করেছি, এমন ভুল যেন আর কেউ না করে।’

তিনি আরো বলেন, বর্তমানে আমি ভালো নেই। ভারি কোনো কাজ করলে, হাঁটাচলা করলে সারা শরীরে ব্যথা হয়। মাঝে মধ্যেই জ্বর হয়, প্রস্রাবে জ্বালা যন্ত্রণা হয়, হয় শাসকষ্টও। শুধু আমিই নয়, আমার পরিবারের আরও তিন সদস্য কিডনি বিক্রি করেছে।

কেবল মেহেরুলই নয় একই ধরনের কথা বলেন, উপজেলার উলিপুর গ্রামের সোনিয়া আক্তার, ভেরেন্ডি গ্রামের আকতার আলম ও রেজাউল করিম, কাশিপুর গ্রামের আবেদ আলী, বোড়াই গ্রামের কিডনি বিক্রেতা দম্পতি বেলাল উদ্দিন ও জোসনা বেগম, আইনুল, ভেরেন্ডির আক্তারুজ্জামান, উলিপুর গ্রামের আজাদুল, বাগইলের মিজানসহ অনেকেই।

jagonews24

কালাই উপজেলার মাত্রাই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আ ন ম শওকত হাবীব তালুকদার লজিক ও উদয়পুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ওয়াজেদ আলী দাদা বলেন, যারাই কিডনি বিক্রি করছেন তারাই আবার দালাল হয়ে যাচ্ছেন। হটাৎ করে কিডনি বিক্রির প্রবণতা বেশি শোনা যাচ্ছে। স্থানীয় প্রশাসন ও আমরা জনপ্রতিনিধিরা তাদের সচেতন ও কিডনি বিক্রি বন্ধ করতে সভা সেমিনারসহ নানা কর্মসূচি করছি। এছাড়াও কিডনি বিক্রি দালাল চক্রের কোনো তথ্য পেলেই আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে জানানো হয়।

কালাই উপজেলা চেয়ারম্যান মিনফুজুর রহমান মিলন বলেন, অভাব আর ঋণের কারণে কিডনি বিক্রি করছে, পুরোপুরি এমনটি নয়। লোভে পড়ে কিছুটা আয়েশি জীবনের আশায় তারা শরীরের মূল্যবান অঙ্গ কিডনি বিক্রি করছেন। শত চেষ্টাতেও কিডনি বিক্রি আর দালালদের দৌরাত্ম্য বন্ধ করা যাচ্ছে না, পেছনে অদৃশ্য শক্তির হাত রয়েছে।

জয়পুরহাট সিভিল সার্জন ডা. ওয়াজেদ আলী বলেন, একটি কিডনি বিক্রি করলে ২ কিডনির বদলে ১টি কিডনির উপর চাপ পড়ে। এতে শরীরে নানা রকম ক্ষতি ও সমস্যা হতে পারে। সরাসরি আইন প্রয়োগ করা আমাদের সুযোগ নেই। কেবল কিডনি দেওয়ার কারণেই কিডনি দাতাদের শরীরের নানা রকম উপসর্গে দেখা দিয়েছে, এ কথা ঠিক নয়। তবে একটি কিডনি দিয়েও মানুষ চলতে পারে।

তিনি মনে করেন, অপুষ্টিসহ একজন সাধারণ মানুষের মতো এসব কিডনি দাতারাও অসুখে পড়তে পারেন। তবে স্বাস্থ্যবিভাগের মাধ্যমে অনেকেই চিকিৎসা নিচ্ছে, আমাদের কাছে এলে অবশ্যই তাদের চিকিৎসা দেওয়া হবে।

কিডনি বিক্রি রোধের ব্যাপারে তিনি জানান, কারও একার পক্ষে কিডনি বিক্রি রোধ করা সম্ভব নয়, তবে স্বাস্থ্যবিভাগ, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও ইউনিয়ন পরিষদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় রোধ করা সম্ভব।

জয়পুরহাট জেলা পুলিশ সুপার মো. মাছুম আহম্মদ ভূঁঞা জানান, কিডনি বিক্রি ও দালালদের বিরুদ্ধে ইতোপূর্বেও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, এখনো হচ্ছে ও বড়-বড় দালালদের ধরতে আমাদের কার্যক্রম অব্যাহত আছে বলে জানালেন পুলিশ সুপার।

মানবদেহের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ কেনাবেচা করা দেশের প্রচলিত আইনে দণ্ডনীয় অপরাধ। তবে এ আইনের বাইরে রক্তের সর্ম্পকে সম্পর্কীত মা-বাবা, ভাই-বোন, পুত্র-কন্যা, আপন চাচা, ফুফু, মামা, খালা এবং রক্তের সর্ম্পকের বাইরে শুধু স্বামী-স্ত্রীসহ ১২ সর্ম্পকের আত্মীয়কে স্বেচ্ছায় কিডনি দান করা যায়। সে ক্ষেত্রে দাতার বয়সসীমা অবশ্যই ১৮ বছরের কম এবং ৬৫ বছরের বেশি হবে না। স্বেচ্ছায় দানের ক্ষেত্রেও গৃহীতা রক্তের সম্পর্কীয় আত্মীয় জুডিসিয়াল স্ট্যাম্পে এমন লিখিত অঙ্গীকার চিকিৎসকদের কাছে জমা দিতে হয় কিডনি দাতাকে।

কিন্তু কালাই থেকে ইতোমধ্যে যারা কিডনি বিক্রি করেছেন, তারা কেউই হলফনামায় আসল তথ্য দেননি। গৃহীতারা পৃর্ব পরিচিত না হলেও হলফনামায় রক্তের সম্পর্কীয় আত্মীয়ের তথ্য দিয়ে কিডনি বিক্রি করেছেন।

‘মানবদেহে অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সংযোজন আইন-১৯৯৯’ এর ৯ ধারায় অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ক্রয়-বিক্রয় সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। আইনে বলা হয়েছে সুস্থ ও স্বাভাবিক জ্ঞান সম্পূর্ণ কোনো ব্যক্তি অন্যের দেহে সংযোজনযোগ্য কিডনি, হৃৎপিণ্ড, যকৃত, অগ্নাশয়, অস্থি, চর্ম, টিস্যুসহ কোনো অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ক্রয়-বিক্রয়, বিনিময়ে কোনো সুবিধা লাভ, সেই উদ্দেশ্যে কোন প্রকার বিজ্ঞাপন প্রদান বা প্রচারণা করতে পারবেন না।

একই আইনের ১০ ধারা অনুযায়ী এ আইন লংঘন করে কেউ অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বিক্রি বা ক্রয় কিংবা সহায়তা করলে সর্বনিম্ন ৩ বছর থেকে সর্বোচ্চ ৭ বছর পর্যন্ত সশ্রম কারাদণ্ড এবং কমপক্ষে ৩ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। ওই আইন অনুযায়ী আত্মীয়ের মিথ্যা পরিচয়ে কেউ কিডনি বিক্রি করলে দাতা ছাড়াও ক্রেতা, সহায়তাকারী দালাল এবং কিডনি সংযোজনে জড়িত চিকিৎসকদের ক্ষেত্রেও একই শাস্তি প্রযোজ্য হবে। এছাড়া চিকিৎসকের সনদ বাতিলের বিধান রাখা হয়েছে আইনে।

এফএ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।