শেওলা স্থলবন্দর সড়কের ৩ কিলোমিটার বেহাল, দুর্ভোগ চরমে
অডিও শুনুন
সিলেট-শেওলা স্থলবন্দর সড়কের তিন কিলোমিটার বেহাল দশা। গুরুত্বপূর্ণ এ সড়কে খানাখন্দ আর অসংখ্য গর্তের কারণে বিকল হচ্ছে পণ্যবাহী ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান। ঘটছে দুর্ঘটনাও। এতে ভোগান্তি পোহাচ্ছেন স্থলবন্দর দিয়ে পণ্য আমদানি-রপ্তানির সঙ্গে জড়িত সংশ্লিষ্টরা।
শেওলা স্থলবন্দর দিয়ে পণ্য আমদানি-রপ্তানি থেকে বছরে শত কোটি টাকা রাজস্ব আয় হলেও সড়ক সংস্কারে সংশ্লিষ্টরা উদাসীন রয়েছেন। ঝুঁকি নিয়ে এ সড়ক দিয়ে পণ্য পরিবহন করতে হয় বলে চালক ও শ্রমিকরাও দ্বিগুণ ভাড়া নেন। ফলে অনেকটা অসহায় স্থলবন্দর দিয়ে পণ্য আমদানি-রপ্তানিকারকরা।
বুধবার (১ জুন) দুপুরে সড়কের শেওলা সেতু থেকে স্থলবন্দর পর্যন্ত এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, পাঁচ টনের একটি একটি ট্রাক বড় গর্তের মধ্যে আটকে আছে। কী হয়েছে জিজ্ঞেস করতেই ট্রাকচালক জসিম উদ্দিন বলেন, ‘ভারত থেকে আমদানি করা পাথর নিয়ে ঢাকায় যাচ্ছিলাম। কিন্তু এক কিলোমিটার সড়ক পার হওয়ার আগেই চাকা গর্তে আটকে ট্রাকটিই বিকল হয়ে আছে। আগে সড়কে এমন অবস্থার কথা জানলে টিপই নিতাম না। সব সর্বনাশ হয়ে গেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভারি যানবাহন চলাচল করা এ সড়কে প্রাথমিকভাবে ইট সলিং দেওয়া হয়েছে। সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ) সিলেট সড়কটি রক্ষায় স্থায়ীভাবে সংস্কার না করায় এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এমন লোক দেখানো সংস্কারের কারণে কাজ শেষ হওয়ার আগেই সড়কটিতে গর্তের সৃষ্টি হয়। টেকসই সংস্কার কাজ না হওয়ায় মাস খানেকের মধ্যে সড়ক আগের অবস্থায় ফিরে যায়।
সড়ক ব্যবহারকারী একাধিক ট্রাকচালক ও পাথর ও কয়লা আমদানিকারক ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করে বলেন, মাঝে মধ্যে নামেমাত্র সংস্কার কাজ করা হয়। কাজ শেষ হতে না হতে আবার সড়কে গর্ত দেখা দেয়।
ওই সড়ক দিয়ে চলাচলকারী ট্রাকচালক আব্দুল মালিক বলেন, ‘এ সড়ক দিয়ে চলাচল করা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে লোড (মাল বোঝাই) নিয়ে যাওয়া খুবই ঝুঁকির। যে কোনো সময় ঘটতে পারে দুর্ঘটনা।’
কাভার্ডভ্যানচালক মো. সেলিম উদ্দিন বলেন, ‘ভারি যানবাহন উপযোগী করে এ সড়কের সংস্কার করা উচিত। মাত্র তিন কিলোমিটার সড়কের জন্য আমরা দুর্ভোগে আছি।’
ভারত থেকে কয়লা ও পাথর আমদানির সঙ্গে জড়িত ব্যবসায়ী বেলাল আহমদ বলেন, ‘সড়কের বেহাল দশার কারণে শেওলা স্থলবন্দর থেকে মাল আনলোড (গুদামে বা নির্দিষ্ট জায়গায়) নিতে ট্রাকচালকরা রাজি হয় না। অনেক ট্রাকচালক এ সড়কের বেহালদশার কারণে বাড়তি ভাড়া চেয়ে বসেন। এতে আমাদের ব্যবসায় লোকসান হচ্ছে।’
সিলেটের আমদানি-রপ্তানি ব্যবসায়ী নুরুল আম্বিয়া বলেন, ‘পণ্য আমদানি ও রপ্তানিতে ব্যবসায়ীরা সরকারকে বছরে শত কোটির বেশি টাকা রাজস্ব ও ভ্যাট দিয়ে আসছেন। কিন্তু পণ্য রাখতে যেমন শেড নেই, তেমনি সড়কের অবস্থাও ভালো নেই। কোথায় গিয়ে আমাদের দুঃখের কথা বলবো। একটি স্থলবন্দরে যেসব সুযোগ সুবিধা থাকার কথা তার কিছুই এখানে নেই। এটি নামেই স্থলবন্দর।’
এদিকে বেহাল দশা রাস্তাটি মেরামতের জন্য ১১ এপ্রিল সিলেট সড়ক ও জনপদ বিভাগের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ও ৯ মে নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মোস্তাফিজুর রহমানের কাছে স্মারকলিপি দেন সিলেট কয়লা আমদানিকারক গ্রুপের নেতারা।
এতে বলা হয়ে, বিয়ানীবাজার উপজেলার শেওলা সেতু থেকে স্থলবন্দর পর্যন্ত প্রায় তিন কিলোমিটার রাস্তার বিভিন্ন জায়গায় পাথর-খোয়া উঠে গিয়ে সৃষ্টি হয়েছে বড় বড় গর্তের। সড়কের মধ্যে ছোট পুকুর বা ডোবার মতো গর্তে যান চলাচল প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। একই সঙ্গে এসব গর্তে কাদাজলে যান চলাচল আরও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে গেছে।
এ বিষয়ে সিলেট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সহ-সভাপতি ও সিলেট কয়লা আমদানীকারক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক মো. আতিক হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, ‘বারবার সড়কটির স্থায়ী সংস্কারের দাবি জানানোর পরও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নেওয়ায় গত ১৭ মে বাধ্য হয়ে রাস্তায় যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। এতে দুপাশে কয়েকশ মালবাহী ট্রাক আটকে পড়ে। এরপর সড়কটি সংস্কারের আশ্বাসে ব্যবসায়ীরা কর্মসূচি থেকে সরে আসেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘এরপর সড়কটিতে কিছু ইট ফেলে বড় গর্তগুলো ভরার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু এ কাজ একদিকে শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অন্যদিকে গর্তের সৃষ্টি হচ্ছে। আমদানি-রপ্তানি ব্যবসার স্বার্থে তাৎক্ষণিক গ্রুপের নিজ খরচে রাস্তাটি মেরামত করা হলেও তা পর্যাপ্ত হয়নি। যতই দিন যাচ্ছে রাস্তটির অবস্থা আরও নাজুক হয়ে পড়েছে।’
এ বিষয়ে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর সিলেট জেলার নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মোস্তাফিজুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, ‘দুবাগ ইউনিয়নের শেওলা ব্রিজ থেকে শেওলা স্থলবন্দর পর্যন্ত প্রায় তিন কিলোমিটার সড়কটি জেলা সড়কমানের ছিল। ২০১৫ সালের ৩০ জুন শেওলা শুল্কস্টেশনকে স্থলবন্দর হিসেবে ঘোষণা করা হলে সড়কটি দিয়ে ভারি যানবাহন চলাচল শুরু হয়। একই সঙ্গে স্থলবন্দর দিয়ে পাথর-কয়লাসহ বিভিন্ন ধরনের ভারী মালামালও আমদানি রপ্তানি হচ্ছে। অতিরিক্ত লোডের কারণে সড়কটি ভেঙে যায়।’
তিনি আরও বলেন, ‘স্থলবন্দর ঘোষণার পর সিলেট নগরের কদমতলি-শ্রীরামপুর-গোলাপগঞ্জ-চারখাই-শেওলাস্থলবন্দর সড়ক নামের চারলেনের সড়ক নির্মাণের প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এরই মধ্যে সড়কের জন্য একটি প্রকল্প মন্ত্রণালয়ে রয়েছে। এ সড়ক নির্মাণে বিশ্বব্যাংক অর্থায়ন করতে আগ্রহ দেখিয়েছে। এ কারণে সড়কটির ওই তিন কিলোমিটার এলাকায় পুনরায় নির্মাণের জন্য বড় বাজেটের কোনো কাজ হাতে নেওয়া হচ্ছে না।’
নির্বাহী প্রকৌশলী বলেন, ‘সম্প্রতি সড়কটি বেশি ভেঙে যাওয়ার কারণে যানবাহন চলাচলের উপযোগী করতে ৩০-৩২ লাখ টাকা ব্যয়ে ইট সলিং (সিলিং এইচডিবি) করা হচ্ছে। এখন সড়কটি দিয়ে যানবাহন চলাচলে তেমন অসুবিধা হচ্ছে না।’
এসজে/জিকেএস