বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অবহেলায় পরীক্ষায় বসতে পারছে না ৫৮ ছাত্রী

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি গোপালগঞ্জ
প্রকাশিত: ১০:২২ এএম, ০৩ জুন ২০২২
মনববন্ধন করেন ছাত্রী ও অভিভাবকরা

গোপালগঞ্জের শেখ হাসিনা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ কর্তৃপক্ষের অবহেলায় ৫৮ ছাত্রীর পড়াশোনার ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। ভর্তির পর ছয়মাস ক্লাস করলেও অর্ধবার্ষিকী পরীক্ষায় বসতে পারছে না তারা। এতে মানবিক বিপর্যয়ের মধ্যে পড়েছে এসব ছাত্রী ও তাদের অভিভাবকরা।

এ নিয়ে বুধবার (১ জুন) সকালে জেলা প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন করেন তারা। পরে সংবাদ সম্মেলন করেন ভুক্তভোগী এসব ছাত্রীদের অভিভাবকরা।

ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী সারা হাচিনের বাবা মো. শহিদুল ইসলাম খান লিখিত বক্তব্যে বলেন, ‘২০২২ সালে শেখ হাসিনা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজে ষষ্ঠ, সপ্তম, আষ্টম ও নবম শ্রেণিতে ৫৮ ছাত্রী ভর্তি করা হয়। ছয় মাস ক্লাস করার পর ২ জুন অর্ধবার্ষিকী পরীক্ষার ফি জমা দিতে গেলে কর্তৃপক্ষ তাদের বিদ্যালয়ে যেতে নিষেধ করে। পরীক্ষায় বসা ও বিদ্যালয়ে যেতে না পেরে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছে তারা।’

তিনি আরও বলেন, ‘করোনার কারণে পরপর দুই বছর প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার পরিবর্তে লটারির মাধ্যমে সরকারি ও বেসরকারি বিদ্যালয়ে ষষ্ঠ শ্রেণিতে শিক্ষার্থীরা ভর্তি হয়ে আসছে। ওই সময় ষষ্ঠ শ্রেণিতে অপেক্ষমাণ তালিকা থেকে ১৩ ছাত্রী এবং কর্তৃপক্ষের অনুমোদন সাপেক্ষে সপ্তম শ্রেণিতে ১৮ ছাত্রী, অষ্টম শ্রেণিতে ১৬ ছাত্রী ও নবম শ্রেণিতে ১১ ছাত্রী ওই বিদ্যালয় ভর্তি হয়। বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আমাদের সন্তানদের ভর্তির আবেদন ফরম দিয়েছিল। আমরা তা পূরণ করে সরকারের আনুষঙ্গিকসহ নির্ধারিত ভর্তি ফি জমা দিলে কর্তৃপক্ষ রশিদও দেয়। ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে অদ্যাবধি আমাদের সন্তানরা নিয়মিত ক্লাস করে আসছে। এরমধ্যে বিদ্যালয় থেকে তাদের স্কুলড্রেসের কাপড় ও বোর্ডের বই সরবরাহ করে। অ্যাসাইনমেন্ট নেওয়া এবং যোগ্যতা অনুযায়ী ক্যাটাগরিতে প্রশিক্ষণ, গান ও চিত্রাঙ্কনসহ বিভিন্ন বিষয়ে নাম সংগ্রহ করে।’

শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘৫ এপ্রিল বিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ হুমায়রা আক্তার আকস্মিকভাবে বদলি হয়ে যান। তিনি ওই শিক্ষার্থীদের ভর্তি অনুমোদন করেন। এরই মধ্যে নতুন অধ্যক্ষ শাহানাজ রেজা এ্যানি নতুন অধ্যক্ষ হিসেবে যোগ দেওয়ার পর ওই শিক্ষার্থীদের অতিরিক্ত ছাত্রী ভর্তি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করে এবং ২ জুন থেকে বিদ্যালয়ে অর্ধবার্ষিকী পরীক্ষার রুটিন দেওয়া হয়। এ নিয়ে বিদ্যালয়ে যোগাযোগ করলে কর্তৃপক্ষ জানায়- সাবেক অধ্যক্ষ ষষ্ঠ শ্রেণিতে ১৩ শিক্ষার্থীসহ ৫৮ জনের ভর্তি রেজিস্ট্রারে নাম তুলে না যাওয়ায় এ জটিলটা দেখা দেয়। তাই জেলা প্রশাসকের নির্দেশে আমরা তাদের পরীক্ষা নিচ্ছি না।’

ভুক্তভোগী সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী সারিকা সাহেদ রেজার মা জাকিয়া রশীদ ইলা বলেন, ‘বছরের অর্ধেক সময় পার হয়ে গেছে, এখন আমার সন্তানকে কোথায় নিয়ে ভর্তি করাবো। এ বিদ্যালয়ের সিলেবাস অনুযায়ী সে পড়াশোনা করেছে এবং এ বিদ্যালয়ে তার সহপাঠীদের সঙ্গে মেলামেশা করেছে । শিক্ষকরা তাকে বিদ্যালয়ে আসতে নিষেধ করলে সে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছে এবং পড়াশোনা ছেড়ে দিয়েছে। যদি তখন ভর্তি কমিটি আমার সন্তানকে ভর্তি না করতো তাহলে আমরা অন্য জায়গায় যেতাম। ভর্তির সময় কমিটি ও অধ্যক্ষের অনুমোদন ছিল। তাহলে এখন কেন তাদের বাদ দেওয়া হচ্ছে?’

ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী হুমায়ারা কবীর আয়েশা বলে, আমাদের ভর্তি পরীক্ষা হয়নি। লটারির মাধ্যমে আমি এ বিদ্যালয়ে অপেক্ষমাণ তালিকার ছিলাম। বিদ্যালয়ে আবেদন করলে আমাকে ভর্তি নেয়। আমার কয়েকজন সহপাঠী অপেক্ষমাণ তালিকায় না থেকেও পরীক্ষা দিতে পারছে। তাহলে আমি কেন পারবো না?’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে অধ্যক্ষ শাহানাজ রেজা এ্যানি জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমি এখানে নতুন যোগ দিয়েছি। সাবেক অধ্যক্ষ ভর্তি রেজিস্ট্রারে ভুক্তভোগী ছাত্রীদের নাম লিপিবদ্ধ করে যাননি। এখানে আমি শিক্ষার্থীদের কোনো ত্রুটি দেখছি না। ভর্তি কমিটি এ দায় এড়াতে পারে না। আমাকে জেলা প্রশাসক এ বিষয়ে কোনো কথা বলতে নিষেধ করেছেন। যদি কিছু জানার থাকে তার কাছ থেকে জানতে পারবেন।’

সাবেক অধ্যক্ষ হুমায়ারা আক্তার বলেন, ‘৫৮ শিক্ষার্থীর ভর্তি বাতিল করা হয়েছে এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। আমি টাকা নিতে নিষেধ করলেও কতিপয় শিক্ষক ও কর্মচারীর যোগসাজশে এ কাজ হয়েছে। আমি এ বিষয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করেছিলাম। বদলিজনিত কারণে বিষয়টি নিয়ে আর এগোতে পারিনি।’

জেলা প্রশাসক শাহিদা সুলতানা জাগো নিউজকে বলেন, ‘যে ৫৮ ছাত্রীর ভর্তি বাতিলের কথা বলা হচ্ছে তারা এ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীই নয়। বিদ্যালয়ে তাদের কোনো কাগজপত্র জমা নেই। হাজিরা খাতায় নামও নেই। তারা অবৈধভাবে বিদ্যালয়ে ক্লাস করছিল। এ বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জানানো হয়েছে। তারা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবে।’

মেহেদী হাসান/এসজে/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।