‘হারানো যৌবন’ ফিরে পেতে শ্রমিককে হত্যা
যশোরের বাঘারপাড়ায় কৃষিশ্রমিক নকিম উদ্দিন হত্যার ঘটনায় দুজনকে গ্রেফতার করেছে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। দুদিন অভিযান চালিয়ে চুয়াডাঙ্গা ও মানিকগঞ্জ থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতাররা হলেন চুয়াডাঙ্গা সদর থানার মোহাম্মদ জুমা গ্রামের হানিফ মালিতার ছেলে লিটন মালিতা (৪০) ও একই জেলার দামুড়হুদা উপজেলার মোজাম্মেল হকের ছেলে আব্দুল বারেক (৬২)।
পুলিশ জানিয়েছে, যৌনরোগে ভুগছিলেন লিটন মালিতা। হারানো যৌবন ফিরে পেতে কবিরাজ আব্দুল বারেকের কথামতো তিনি কৃষিশ্রমিক নকিম উদ্দিনকে হত্যা করেন।
বৃহস্পতিবার (২ জুন) সকালে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান যশোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সাইফুল ইসলাম।
পুলিশ জানায়, লিটন মালিতা দীর্ঘদিন ধরে যৌনরোগে ভুগছিলেন। পরে স্থানীয় কবিরাজ আব্দুল বারেকের শরণাপন্ন হন লিটন। কবিরাজ তাকে জানান, তিনি যে কোনো একটি পুরুষাঙ্গ, অণ্ডকোষ ও একটি চোখ উপড়ে নিয়ে এলে হারানো যৌবন ফিরে পাবেন। তখন থেকে লিটন বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন সুযোগ খুঁজতে থাকেন। এরই ধারাবাহিকতায় ধান কাটার শ্রমিক সেজে যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার দরাজহাট ইউনিয়নের পাইকপাড়া গ্রামে কাজ নেন।
গত ২৬ মে ধান কাটার জন্য নকিম উদ্দিনসহ তিনজনকে বাড়িতে নিয়ে যান পাইকপাড়া গ্রামের মৃত ইবাদ মোল্যার ছেলে বেনজির আহম্মেদ (৪২)। এর মধ্যে রোববার (২৯ মে) বিকেলে পারিশ্রমিকের টাকা বুঝে নিয়ে একজন চলে যান। লিটন মালিতা ও নকিম উদ্দিন রাতে খাবার খেয়ে এক কক্ষে ঘুমিয়ে ছিলেন। বাড়ির মালিক বেনজির আহম্মেদ পরদিন ভোর ৬টায় তাদের ডাকতে গেলে বাইরে থেকে দরজা খোলা দেখতে পান। দরজা খোলা দেখে তিনি ভেতরে গিয়ে দেখেন জখম অবস্থায় শ্রমিক নকিম উদ্দিনের মরদেহ খাটের ওপর পড়ে আছে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয়, শ্রমিক নকিম উদ্দিনকে হত্যার পর কবিরাজি ওষুধের উপকরণ হিসেবে পুরুষাঙ্গ, অণ্ডকোষ ও একটি চোখ নিয়ে যান। পরে মানিকগঞ্জে চলে যান তিনি। এ ঘটনায় মঙ্গলবার (৩১ মে) বাঘারপাড়া থানায় মামলা করা হয়।
জড়িতদের ধরতে অভিযানে নামে যশোর ডিবির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রুপন কুমার সরকার, ইন্সপেক্টর শহিদুল ইসলাম ও উপ-পরিদর্শক (এসআই) মফিজুল ইসলামের নেতৃত্বে একটি চৌকস দল।
মঙ্গলবার মানিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ডে ধান কাটার শ্রমিক সেজে আসেন লিটন মালিতা। শ্রমিকের হাট থেকে ঘিওর উপজেলার পয়লা ইউনিয়নের চড় বাইলজুরী গ্রামের কৃষক জিতু তাকে ধান কাটার কাজে বাড়িতে নিয়ে আসেন।
বুধবার (১ জুন) দুপুরে ঘিওর উপজেলার পয়লা ইউনিয়নের চড় বাইলজুরী এলাকা থেকে ডিবি পুলিশের একজন সদস্য ধান কাটার শ্রমিক সেজে ধান কাটতে যান। তিনি শ্রমিকবেশে তার অবস্থান শনাক্ত করেন। পরে ঘিওর থানা পুলিশের সহায়তায় তাকে আটক করা হয়।
এর আগে মঙ্গলবার অভিযান চালিয়ে চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলা থেকে কবিরাজ আব্দুল বারেককে গ্রেফতার করে পুলিশ।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সাইফুল ইসলাম জানান, গ্রেফতার লিটন মালিতার কাছ থেকে কেটে নেওয়া পুরুষাঙ্গ, অণ্ডকোষ ও একটি চোখ উদ্ধার করা হয়েছে। আসামিদের আদালতে পাঠানো হয়েছে।
মিলন রহমান/এসআর/জেআইএম