জয়পুরহাটে ডিমের দাম নির্ধারণ করে সমিতি

মো: রাশেদুজ্জামান
মো: রাশেদুজ্জামান মো: রাশেদুজ্জামান জয়পুরহাট
প্রকাশিত: ০৯:৫৪ পিএম, ২৭ মে ২০২২

জয়পুরহাটের পাঁচ উপজেলার পৌর শহর, মহল্লা ও গ্রাম—সব জায়গাই ডিমের দাম চড়া। একমাস আগেও প্রতি পিস মুরগির ডিম সাড়ে সাত থেকে আট টাকা দরে পাওয়া যেতো। এখন স্থানভেদে কোথাও কোথাও ডিমের দাম বেড়ে সাড়ে ৯ থেকে ১২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

পোলট্রি খামারি ও ডিম ব্যবসায়ীদের দাবি, মাংস ও মাছের দাম বাড়ায় ডিমের ওপর চাপ বেড়েছে। এছাড়া বিভিন্ন ধরনের মড়ক ও করোনার কারণে অনেক খামার বন্ধ হয়ে গেছে। কয়েক দফায় ফিডের (মুরগির খাদ্য) দাম বাড়ায় কুলাতে না পেরে অনেকে খামারের মুরগি বিক্রি করে দিয়েছেন। এরপরও যেসব খামারি পুনরায় শুরু করতে চাইছেন তাদের বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে ফিডের দাম।

জেলায় প্রতিদিন প্রায় এক লাখ পরিমাণ লাল ডিম ও সাদা ডিমের প্রয়োজন হলেও অল্প কিছু পরিমাণ স্থানীয়ভাবে পূরণ হয়। এজন্য জেলার বাইরে থেকে ডিম আমদানি করতে হয়।

বুধবার (২৫ মে) জেলার বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ফার্মের লাল ডিম যা অন্য সময় প্রতি হালি ৩০ থেকে ৩২ টাকায় বিক্রি হতো, দাম বেড়ে তা এখন ৩৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সাদা ডিম প্রতি হালি ৩৭ টাকা, সোনালি মুরগির ডিম ৪০ টাকা এবং হাঁসের ডিম ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

jagonews24

জয়পুরহাট জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জেলায় ছোট-বড়-মাঝারি রকমের প্রায় ১০ হাজার মুরগির খামার, ১০০টি হ্যাচারি ও ১১টি ফিডমিল রয়েছে। কিন্তু ক্রমাগত লোকসানের কারণে প্রায় ৫০ ভাগ খামার বন্ধ হয়ে গেছে। করোনা মহামারির সময় সবচেয়ে বেশি খামার বন্ধ হয়ে গেছে। নতুন করে কোনো খামার তৈরি হয়নি।

সূত্র আরও জানায়, জেলার খামারগুলো থেকে বছরে প্রায় দুই লাখ মেট্রিক টন সোনালি মুরগির মাংস ও প্রায় ৪০ কোটি ডিম উৎপাদন হয়। তবে এ ডিম শুধু হ্যাচারির বাচ্চার জন্য ব্যবহার করা হয়। তবে অল্প কিছু খামারি হাঁসের ডিম ও লাল ডিম উৎপাদন করেন।

জেলার পদ্মা ফিড অ্যান্ড চিকস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আনোয়ারুল হক আনু, শেফালী পোলট্রি ফার্ম প্রাইভেট লিমিটেডের চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম আলমসহ পোলট্রি শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের অনেকে এ শিল্পের অস্থিতিশীলতার জন্য নানা কারণ উল্লেখ করেন। এসব কারণগুলো হলো কাঁচামালের শতকরা ৮০ ভাগ আমদানিনির্ভর হওয়ায় উৎপাদন খরচ বেশি, মুরগি ও ডিম রপ্তানি না হওয়া, চাহিদার সঙ্গে উৎপাদনের সমন্বয়হীনতা, সুষ্ঠু বাজার ব্যবস্থাপনা না থাকা, খাদ্য-ওষুধ-ভিটামিনের দফায় দফায় মূল্য বৃদ্ধি, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সঠিক ওজন না হওয়া, মধ্যস্বত্বভোগী ফড়িয়া বা দালালদের দৌরাত্ম্য, পাইকারি ও খুচরা বাজার মূল্যের বিস্তর পার্থক্য, প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে যোগাযোগ বিঘ্নিত হলে দেশের বিভিন্ন স্থানে মুরগি ও ডিম সরবরাহ বন্ধ হওয়া, মুরগির বাচ্চা-খাদ্য-ওষুধসহ বিভিন্ন উপকরণ বাকিতে বেচাকেনা ইত্যাদি।

জয়পুরহাট পৌর এলাকার আদর্শপাড়ার রুহুল আমিন, পাঁচবিবি উপজেলার বালিঘাটা এলাকার লেবু হোসেন, কালাই উপজেলার হাতিয়র গ্রামের আল-মামুন, ক্ষেতলাল উপজেলার আজিজুল হক, আক্কেলপুর উপজেলার বিউটি বেগম ও মাছুয়াবাজার এলাকার হোটেল ব্যবসায়ী দেলোয়ার হোসেন বলেন, কাঁচা সবজি থেকে শুরু করে বাজারে নিত্যপণ্যের দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়লেও কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণে আসছে না। সম্প্রতি কাঁচা বাজারের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ডিমের দামও বেড়েছে। ১৫ দিন আগেও প্রতি হালি ডিমের দাম ছিল সর্বোচ্চ ৩২ টাকা, তা এখন বেড়ে হয়েছে ৩৮ টাকা। এমন ঊর্ধ্বমুখী দাম কোন পর্যন্ত গিয়ে ঠেকবে তা নিয়ে আমরা চিন্তায় আছি।

শান্তিনগর এলাকার মুদি দোকানকার মাসুদ রানা ও তেঘর এলাকার মুদি দোকানকার বাবু হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, ‘দোকানে অল্প কিছু পরিমাণ ডিম রাখি ক্রেতাদের চাহিদার কথা চিন্তা করে। লাভের বিষয় তেমন একটা থাকে না। ডিমের মধ্যে ভাঙা ও পচা থাকে। এর লোকসান পাইকারি ডিম বিক্রেতা দেয় না। তাই স্থানীয় বাজার থেকে হালিতে এক থেকে দুই টাকা বেশি দামে বিক্রি করতে হয়।’

jagonews24

মাছুয়া বাজার এলাকার ডিম ব্যবসায়ী আসলাম হোসেন বাবু ও দিনেশ মহন্ত জাগো নিউজকে বলেন, ‘গাইবান্ধার বামনডাঙ্গা থেকে লাল ডিম ও রাজশাহীর তাহেরপুর থেকে সাদা ডিম আসে। সেখানকার সমিতিগুলো যেভাবে ডিমের দাম নির্ধারণ করে দেয় আমরা সেভাবে বিক্রি করি। আমরা ১০০ পিস লাল ডিম ৮৮০ টাকায় কিনি। পরিবহন খরচ পড়ে ২০ টাকা। বিক্রি করছি ৯৫০ টাকা। একইভাবে সাদা ডিম কিনি ৮৭০ টাকায়। পরিবহন খরচ ৩০ টাকা। বিক্রি করছি ৯২৫ টাকায়।’

তিনি আরও জানান, ঢাকার তেজগাঁওয়ে ডিমের নির্ধারিত দাম থেকে ২০-৩০ টাকা কমে দেশের বিভিন্ন জেলার সঙ্গে জয়পুরহাটেরও দাম নির্ধারিত হয়।

জয়পুরহাট সদর উপজেলার দুর্গাদহ কুজিশহর এলাকার পোলট্রি খামারি কামরুজ্জামান রতন বলেন, ‘ক্রমাগত লোকসান গুনতে গুনতে দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। ফলে বাধ্য হয়ে ফার্ম বন্ধ করে দিয়েছি।’

আল-আমিন অ্যান্ড বাদার্সের মালিক শহীদুল ইসলাম ও স্বর্ণ কিষাণ পোলট্রি ফার্মের মালিক আখতারুজ্জামান বলেন, মহামারি করোনা, বিভিন্ন ধরনের মড়ক, দীর্ঘদিন উৎপাদন খরচের তুলনায় বাজারে ডিমের দাম কম থাকায় এমনিতেই অনেক খামার বন্ধ হয়ে গেছে। সে কারণে এখন চাহিদার তুলনায় ডিমের উৎপাদন অনেক কম হচ্ছে। ফলে সরবরাহ সংকটের কারণে দাম বাড়ছে।

jagonews24

জয়পুরহাট সোনালি পোলট্রি ফার্মার্স সমিতির যুগ্ম-আহ্বায়ক একরামুল হক জাগো নিউজকে বলেন, ‘পোলট্রি খাবার উৎপাদনের জন্য উপকরণের দাম বেড়ে যাওয়ায় খাবারের দাম বেড়েছে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই বেশি দামে ডিম বিক্রি হচ্ছে। সরকার স্বল্প সুদে সহজ শর্তে ঋণ দিলেও অনেকে খামারিই ঘুরে দাঁড়াতে পারেননি।

এ বিষয়ে জয়পুরহাট জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মাহফুজার রহমান বলেন, বিদেশি কাঁচামালের দাম বৃদ্ধির কারণে পোলট্রি খাদ্যের দাম বাড়ছে। ফলে এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট পণ্যের ওপরও প্রভাব পড়েছে। তবে পোলট্রি শিল্প খুব শিগগির ঘুরে দাঁড়াবে বলে আশা করেন তিনি।

এসআর/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।