কর বকেয়ায় হাসপাতালের বর্জ্য নেওয়া বন্ধ, রাস্তা যেন ভাগাড়
ফরিদপুর শহরের প্রাণকেন্দ্র মুজিব সড়কের পাশে ফরিদপুর জেনারেল হাসপাতাল ও ফরিদপুর পৌরসভা ভবন পাশাপাশি অবস্থিত। হাসপাতাল সংলগ্ন সড়ক ও আশপাশে ময়লার স্তূপ জমেছে। চারদিকে বর্জ্যের দুর্গন্ধ।
পৌরকর বকেয়া থাকায় পৌরসভা হাসপাতালের বর্জ্য অপসারণ বন্ধ করে দিয়েছে। এতে দুই মাসেরও বেশি সময় ধরে ময়লা পরিষ্কার না করায় ডাস্টবিন উপচে বর্জ্য ছড়িয়ে পড়ছে সংলগ্ন সড়ক ও আশেপাশ।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ফরিদপুর জেনারেল হাসপাতালের এক কোটি ৬৪ লাখ ১২ হাজার ৮৩ টাকা পৌরকর বকেয়া রয়েছে। এ কারণে চিঠি দিয়ে ফরিদপুর পৌরসভা হাসপাতালের বর্জ্য অপসারণ বন্ধ করে দিয়েছে। গত দুই মাসের বেশি সময় পরিষ্কার না করায় হাসপাতালের উত্তর দিকে বর্জ্যের স্তূপ জমেছে। ডাস্টবিন উপচে সেখান থেকে মেডিক্যাল বর্জ্য ছড়িয়ে পড়েছে রাস্তায়। এতে তীব্র দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে।
ফরিদপুর পৌরসভা সূত্র জানায়, ২০১২-১৩ অর্থবছর থেকে ২০২১-২২ অর্থবছর পর্যন্ত ৯ বছর ফরিদপুর জেনারেল হাসপাতালের পৌরকর বকেয়া রয়েছে এক কোটি ৬৪ লাখ ১২ হাজার ৮৩ টাকা। কর পরিশোধের জন্য একাধিকবার চিঠিও দেওয়া হয়েছে। এরপরও পৌরকর পরিশোধ করা হয়নি। এজন্য হাসপাতালের বর্জ্য নেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে পৌরসভা।
অন্যদিকে জেলার স্বাস্থ্য বিভাগ বলছে, বছরওয়ারি বকেয়ার হিসাব দিতে না পারায় টাকা বরাদ্দ পাওয়ার পরও কর পরিশোধ করা হয়নি। এ অবস্থায় তারা হাল সনের করের টাকা পরিশোধ করে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সচল রাখার অনুরোধ জানিয়েছিলেন। তাতে সাড়া দেয়নি পৌর কর্তৃপক্ষ। তারা জানিয়েছেন, চলতি সালের টাকা দিতে হলে বকেয়াসহ দিতে হবে।
সরেজমিনে দেখা যায়, জেনারেল হাসপাতালের উত্তর-পশ্চিম সীমানায় রয়েছে বড় ডাস্টবিন। পাশেই রয়েছে আধা দেওয়াল দিয়ে ঘেরা হাসপাতালের সংরক্ষিত সবুজ চত্বর ও মসজিদ। ডাস্টবিন পেরিয়ে রয়েছে হাসপাতালের অনেকগুলো কোয়ার্টার। চিকিৎসক ও নার্সদের তিনটি কোয়ার্টারের বাসিন্দা ১৭টি পরিবারের সদস্য ও মসজিদের মুসল্লিসহ রোগীর স্বজন ও পথচারীদের নিয়মিত চলাচল এই পথে। সবাইকে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে বর্জ্যে দুর্গন্ধে।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, দুর্গন্ধে বাসাবাড়িতে থাকা যায় না। সব সময় দরজা-জানালা বন্ধ করে রাখতে হয়। মুখ ঢেকে ওই সড়ক দিয়ে চলতে হয়। দুর্গন্ধে বমির উপক্রম হয়। বৃষ্টি হলে পানি জমে ময়লা রাস্তায় ছড়িয়ে পড়ে।
এ ব্যাপারে হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স মর্জিয়া খানম জাগো নিউজকে বলেন, ‘ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার না করায় পাশে ডায়রিয়া ওয়ার্ডের রোগীরা মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছেনর। আমরা ওয়ার্ড মাস্টারের মাধ্যমে কর্তৃপক্ষকে বারবার এ বিষয়ে বলছি কিন্তু কোনো কাজ হয় না।’
ফরিদপুর জেনারেল হাসপাতালের ওয়ার্ড মাস্টার শহীদুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, ‘দূষিত পরিবেশের মধ্যে স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়ে আমাদের কাজ করতে হচ্ছে। আমরা সবাই চরম দুর্ভোগে আছি।’
এ বিষয়ে ফরিদপুর পৌরসভার মেয়র অমিতাভ বোস বলেন, মন্ত্রণালয় থেকে জেলার স্বাস্থ্য বিভাগকে বকেয়া পৌরকরের টাকা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সিভিল সার্জন ওই টাকা বরাদ্দ পেয়েও পৌরকর পরিশোধ করছেন না।
তিনি আরও বলেন, ‘বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য পরিচ্ছন্নকর্মীদের বেতন-ভাতা দিতে হয়। পৌর কর্মচারীদেরও বেতন-ভাতা দিতে হয়। কিন্তু পৌরকরের টাকা বকেয়া থাকায় তাদের বেতন দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। বকেয়া টাকা না পেলে তাদের বেতন দেবো কীভাবে?’
ফরিদপুরের সিভিল সার্জন ডা. ছিদ্দীকুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, ‘পৌরকর পরিশোধের আগে পৌরসভা থেকে বকেয়ার বছরওয়ারি হিসাব ও হিসাব বিভাগ থেকে বকেয়া পৌরকর জমা পড়েনি মর্মে একটি প্রত্যয়নপত্র চাওয়া হয়। জেলা হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তার কাছে ওই প্রতিবেদন চাইলে তিনি জানান, পাঁচ বছরের বেশি পুরোনো হিসাব দেওয়া সম্ভব নয়। কারণ সেগুলো বিনষ্ট করে ফেলা হয়েছে। এখন এই বছরওয়ারি হিসাব ও প্রত্যয়ন না পাওয়ায় বকেয়া করের টাকা পরিশোধ করা সম্ভব হচ্ছে না।’
এন কে বি নয়ন/এসআর/জেআইএম