১২ লাখ টাকার ঋণ থেকে বাঁচতে স্ত্রী-দুই সন্তানকে হত্যা করেন গিয়াস

১২ লাখ টাকার ঋণের বোঝা থেকে বাঁচতে নরসিংদীর বেলাবোতে স্ত্রী ও দুই সন্তানকে হত্যা করেন গিয়াস উদ্দিন শেখ। হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে দেওয়া ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিতে তিনি এ কথা জানান।

সোমবার (২৩ মে) দুপুরে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক রাকিবুল হকের আদালতে এ জবানবন্দি দেন তিনি। জবানবন্দিতে স্ত্রী-সন্তানদের হত্যার নেপথ্যের কারণসহ নানা দিক উল্লেখ করেন আসামি। জবানবন্দি শেষে গিয়াস উদ্দিন শেখকে কারাগারে পাঠান আদালত।

আদালতে সূত্রের বরাতে নরসিংদী পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) উপ-পরিদর্শক জামাল উদ্দিন এসব কথা জানিয়েছেন।

তিনি জানান, নরসিংদীর বেলাবোতে স্ত্রী ও দুই সন্তানকে হত্যার ঘটনায় নিহত রহিমার ভাই মোশারফ হোসেন বাদী হয়ে অজ্ঞাত নামা ৮/১০ জনকে আসামি করে থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। হত্যার ঘটনায় গ্রেফতার নিহত রহিমার স্বামী গিয়াস উদ্দিন শেখ পিবিআইয়ের কাছে হত্যার দায় স্বীকার করেন। পরে সোমবার দুপুরে তাকে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে নেওয়া হয়। ওই সময় হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতের বিচারকের কাছে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন তিনি।

জবানবন্দি থেকে জানা যায়, নিহত রহিমার স্বামী গিয়াস উদ্দিন শেখ পেশায় রং মিস্ত্রি। একইসঙ্গে মাদকাসক্ত ও জুয়ারি। জুয়ার টাকা যোগাড় করতে গিয়ে বিভিন্ন এনজিও থেকে আড়াই লাখ টাকা, শ্বশুর-শ্যালকসহ অন্য আত্মীয়ের কাছ থেকে ৫ লাখ টাকা ও সুদে আরও দুই লাখ টাকাসহ সাড়ে ৯ লাখ টাকা ঋণ নেন গিয়াস। তবে সব ঋণই স্ত্রীর নামে নেন তিনি। সুদে-আসলে ঋণের টাকা ১২ লাখ ছাড়িয়ে যায়। এই টাকা পরিশোধের জন্য নিহতের স্বামী গিয়াস উদ্দিনের ওপর চাপ ছিল। সর্বশেষ জুয়া খেলার মতো কোনো টাকা তার হাতে ছিল না। তাই বাড়ির আঙিনা থেকে কয়েকটি গাছ বিক্রি করেন এবং তা নেওয়ার সময় প্রতিবেশী চাচাতো ভাই রেনু মিয়ার সঙ্গে ঝগড়া হয়। এরইমধ্যে তিনি জানতে পারেন ঋণগ্রহীতা ব্যক্তি মারা গেলে ঋণের টাকা মওকুফ হয়ে যায়। এই চিন্তা থেকে গিয়াস স্ত্রী রহিমা বেগমকে হত্যার পরিকল্পনা করেন।

পরিকল্পনা অনুযায়ী রোববার (২২ মে) রাতে গ্রেফতার গিয়াস বাড়ি ফিরে সন্তানদের সঙ্গে ঘুমিয়ে পড়েন। পরে রাত আড়াইটার দিয়ে স্ত্রীকে ক্রিকেট ব্যাট দিয়ে পিটিয়ে ও ছুরি দিয়ে আঘাত করে হত্যা করেন। স্ত্রীকে হত্যার পর সন্তানরা সবাইকে বলে দেবে, এই ভয়ে গিয়াস তাদেরও হত্যা করেন। হত্যার পর পুলিশ ও মানুষের চোখ ফাঁকি দিতে রাতেই বাড়ি ছেড়ে চলে যান। পরে সকালে তাকে ফোন দিয়ে বাড়িতে ডেকে আনেন প্রতিবেশীরা।

রোববার দিবাগত রাতে নরসিংদীর বেলাবো উপজেলার পাটুলি ইউনিয়নের বাবলা গ্রামের শেখবাড়িতে স্ত্রী রহিমা বেগম (৩৫), ছেলে রাব্বি (১৩) ও মেয়ে রাকিবা আক্তারকে (৬) হত্যা করেন গিয়াস শেখ। হত্যাকাণ্ডের পর সকালে বাড়িতে ফিরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের মিথ্যা তথ্য দেওয়া শুরু করেন তিনি। একইসঙ্গে ঝগড়ার রেশ ধরে প্রতিপক্ষ রেনু মিয়া এই ঘটনা ঘটিয়েছেন বলে পুলিশসহ সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করেন। পরে দুপুর ১টার দিকে ঘটনাস্থলে তদন্তে যায় পিবিআই। সেখানে নিহতের স্বামী গিয়াসের অসঙ্গতিপূর্ণ আচরণে পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার মো. এনায়েত হোসেন মান্নানের সন্দেহ হয়। পরে তাকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদে পিবিআইয়ের কাছে স্ত্রী ও সন্তানদের হত্যার কথা স্বীকার করেন গিয়াস।

সঞ্জিত সাহা/এমআরআর/এএসএম