সুন্দরবনে বন্যপ্রাণিসহ খাল জরিপ চলছে


প্রকাশিত: ০৯:১৯ এএম, ২১ জানুয়ারি ২০১৬

ওয়ার্ল্ড হ্যারিটেজ সুন্দরবন জুড়ে এখন চলছে রয়েল বেঙ্গল টাইগারের আবাসস্থল, চিত্রল হরিণসহ বন্যপ্রাণি, জীববৈচিত্র ও খাল জরিপের কাজ। সুন্দরবনের বাঘ প্রকল্পের আওতায় ইউএসএআইডি ও বন বিভাগের ওয়াইল্ড টিমের বিশেষজ্ঞরা ৬ হাজার ১৭ বর্গ কিলোমিটার বাংলাদেশ অংশে সরেজমিনে জীববৈচিত্রসহ বন্যপ্রাণি ও খালের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে জরিপ ও গণনার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।

এসব জরিপ ও গণনার কাজে ইউএসএআইডি ব্যায় করছে এক কোটি ২৪ লাখ টাকা। এই গণনা বা জরিপের কাজ আগামী ১০ ফেব্রুয়ারি শেষ হবে। খুলনা সার্কেলের বন সংরক্ষক (সিএফ) জহির উদ্দিন আহমেদ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য ও জীববৈচিত্র্যে ভরপুর পৃথিবীর বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ এই সুন্দরবনের মোট আয়তনের স্থাল ভাগের পরিমাণ চার হাজার একশো ৪৩ বর্গকিলোমিটার যা সমগ্র সুন্দরবনের ৬৮.৮৫ ভাগ। এই ম্যানগ্রোভ বনের প্রধান উদ্ভিদ সুন্দরীসহ ৩শ` ৩৪ প্রজাতির গাছপালা, ১৬৫ প্রজাতির শৈবাল ও ১৩ প্রজাতির অরকিট রয়েছে।

বিশ্ববাসীর গর্ব সুন্দরবনে রয়েল বেঙ্গল টাইগার, চিত্রল হরিণ, মায়া হরিণ, বন্য শুকর, উটবিড়াল, বন মোরগ, বানরসহ ৩৭৫ প্রজাতির বন্যপ্রাণির বৃহত্তম আবাসভূমি। আরও রয়েছে তিন শতাধিক প্রজাতির পাখি। অন্যদিকে, এক হাজার ৮৭৪ বর্গ কিলোমিটার বা সমগ্র সুন্দরবনের ৩১.১৫ ভাগ এলাকাই হচ্ছে নদী-খাল। এই জলভাগে রয়েছে ছোট-বড় প্রায় সাড়ে ৪শ` নদ-নদী ও খাল।

সুন্দরবনের বিশাল এই জলভাগে মৎস্য সম্পদের মধ্যে রয়েছে রূপালি ইলিশসহ ২১০ প্রজাতির সাদা মাছ, ২৬ প্রজাতির চিংড়ি, বিশ্বখ্যাত শিলা কাঁকড়াসহ ১৩ প্রজাতির কাঁকড়া, এক প্রজাতির লবস্টার ও ৪২ প্রজাতির শামুক-ঝিনুক। রয়েছে বিলুপ্তপ্রায় ইরাবতীসহ ৬ প্রজাতির ডলফিন, কচ্ছপ, গুইসাপ, লোনা পানির কুমির, হাঙ্গর ও অজগরসহ বিভিন্ন প্রজাতির সাপ। এসব বন্যপ্রাণি, জীববৈচিত্রের মধ্যে সুন্দরবনের প্রকৃতির পাহারাদার রয়েল বেঙ্গল টাইগারের জরিপ বা গণনার কাজ শেষ হয়েছে।

সর্বাধুনিক ও বিজ্ঞান ভিত্তিক পদ্ধতিতে ওই বাঘ জরিপে সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা চার শতাধিক থেকে কমে  আশঙ্কাজনক হারে এসে দাঁড়ায় মাত্র ১০৬টিতে। এ নিয়ে সুন্দরবন বিশেষজ্ঞ ও পরিবেশবিদদের মধ্যে শুরু হয় তোলপাড়। এরই প্রেক্ষাপটে বাঘ কমে যাওয়ার কারণ অনুসন্ধানে বাঘের আবাসন্থল ও চলাচলের গতিপথ, হরিণসহ বন্যপ্রাণি, জীববৈচিত্র ও খালের সঠিক সংখ্যা ও বর্তমান অবস্থা হালনাগাদ জানতে ইউএসএআইডি ও বনবিভাগ সুন্দরবনে জরিপ বা গণনার কাজ শুরু করেছে।   

সুন্দরবনের বন্যপ্রাণি বিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা (ডিএফও) জহিদুল কবির জাগো নিউজকে জানান, ম্যানগ্রোভ সুন্দরবনের বন্যপ্রাণি ও জীববৈচিত্র্যের জরিপের পাশাপাশি এই বনের খালগুলো গণনাসহ হালনাগাদ প্রকৃত অবস্থা জানতে শুরু হয়েছে। সুন্দরবনের অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য ধরে রাখতে এক হাজার ৮৭৪ বর্গ কিলোমিটার নদ-নদী ও খাল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে। সমুদ্রের পলিবাহিত জোয়ারের পানির পলিমাটি জমে সুন্দরবনের খালগুলোর বর্তমান অবস্থা কোন পর্যায়ে রয়েছে হাল নাগাদ সেসব তথ্য জানতে এই ম্যানগ্রোভ বনজুড়ে সরেজমিনে জরিপ বা গণনার কাজও পাশাপাশি চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে।

এছাড়া, বিগত বছরগুলোতে সুন্দরবনের বঙ্গোপসাগর উপকূল জুড়ে বড় বড় চর জেগে ওঠার পর প্রাকৃতিকভাবে সেখানে ম্যানগ্রোভ বনের সৃষ্টি হয়েছে। এসব নতুন বন এলাকায়ও প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্টি হয়েছে নতুন নতুন খাল। এসব খালগুলো রয়ে গেছে সুন্দরবন বিভাগের জরিপ বা গণনার বাইরে। এসব বিষয়কে সামনে রেখে সুন্দরবনের বাঘ প্রকল্পের আওতায় গত ২০ ডিসেম্বর থেকে শুরু হয়েছে রয়েল বেঙ্গল টাইগারের আবাসস্থল, চিত্রল হরিণসহ বন্যপ্রাণি, জীববৈচিত্র ও খাল গণনা বা জরিপের কাজ। আগামী ১০ ফেব্রুয়ারি এসব জরিপ বা গণনার কাজ শেষ হবে বলে তিনি জানান।

শওকত আলী বাবু/এমজেড/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।