মঙ্গলবাড়িয়া লিচুতে এবার ১০ কোটি টাকা আয়ের আশা
নজরকাড়া রং, স্বাদ আর গন্ধের জন্য দেশ-বিদেশে প্রসিদ্ধ কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলার মঙ্গলবাড়িয়া লিচু। প্রায় দু’শো বছরের প্রসিদ্ধ সুমিষ্ট মঙ্গলবাড়িয়া লিচুর কদর শুধু দেশেই নয়, দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিশ্বের নানা জায়গায় পৌঁছেছে।
কিশোরগঞ্জের পাকুন্দয়া উপজেলা সদরের একটি গ্রামের নাম মঙ্গলবাড়িয়া। গ্রামের নামেই লিচুর নাম। লিচুর আবাদ বদলে দিয়েছে এই এলাকার মানুষের জীবনযাত্রা। লিচুচাষে ভাগ্য ফিরেছে মঙ্গলবাড়িয়া গ্রামে হাজারও মানুষের। কম খরচে লাভ বেশি হওয়ায় লিচুচাষে আগ্রহ বাড়ছে চাষিদের।
গ্রাম জুড়েই এখানে ওখানে ছড়িয়ে আছে ছোট-বড় লিচু গাছ। রাস্তার দুই পাশেও লিচুর বাগান। প্রতিটি গাছে থোকায় থোকায় ঝুলছে লিচু। যেদিকেই চোখ যায় লাল রঙের সমাহার।
প্রসিদ্ধ এ লিচুর ভরা মৌসুমে মঙ্গলবাড়িয়া গ্রামে চলছে উৎসবের আমেজ। দূর-দূরান্তের মানুষ আসছেন লিচু কিনতে। এলাকার আত্মীয়-স্বজন বেড়াতে আসছেন লিচুর মৌসুমে। এখান থেকে লিচু কিনে নিয়ে যাচ্ছেন ক্রেতারা। প্রতি ১০০ লিচু বিক্রি হচ্ছে ৩শ থেকে ৪শ টাকায়।
লিচু কিনতে আসা নান্দাইল উপজেলার অনির্বাণ দত্ত ও তার স্ত্রী বলেন, প্রতি বছরই আমরা এখানে লিচু কিনতে আসি। এখানকার লিচুর স্বাদই আলাদা। এবার মায়ের জন্য লিচু কিনতে এসেছি।
গাজীপুরের তিন বন্ধু রাকিব, আলমগীর ও আকাশ মোটরসাইকেল নিয়ে লিচু কিনতে এসেছেন। তারা বলেন, ইউটিউবসহ বিভিন্ন সামজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখে এখানে এসেছি। এ লিচুর কথা জানতে পারি অনেক দিন আগে। আজ কিনতে এসেছি। মঙ্গলবাড়িয়া লিচু অনেক ভালো। দেখতে যেমন সুন্দর, খেতেও খুব মজা।
মঙ্গলবাড়িয়া গ্রামের বেশিরভাগ মানুষের প্রধান পেশা লিচুচাষ। লিচুর আয় থেকেই চলে পরিবারের ভরণ-পোষণ আর সন্তানদের লেখাপড়ার খরচ। মৌসুমের শুরুতে মুকুল আসার পরই চাষিদের কাছ থেকে গাছ কিনে নেন স্থানীয় ব্যাপারীরা। এরপর পরিচর্যা করে গাছের পাকা লিচু বিক্রি করেন তারা। বংশ পরম্পরায় অনেকে জড়িত লিচু আবাদে।
লিচু গাছ মালিক ছফির উদ্দিন বলেন, আমাদের প্রধান ফসল হয়ে উঠেছে লিচু। এর আয় থেকেই পরিবারের ভরণ-পোষণসহ সন্তানের লেখাপড়ার খরচ চলে।
দীর্ঘ ৪০ বছর ধরে লিচুর ব্যবসা করছেন মঙ্গলবাড়িয়া গ্রামের ব্যবসায়ী মো. তওহিদ মিয়া। এবারও তিনি প্রায় ২০০ গাছ কিনেছেন। এখন পর্যন্ত ২ লাখ টাকার লিচু বিক্রি করেছেন। আশা করছেন আরও ৬ লাখ টাকার লিচু বিক্রি করতে পারবেন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা মো. শফিকুল ইসলাম জানান, মঙ্গলবাড়িয়া গ্রামে ছোট-বড় প্রায় ১৫ হাজার লিচু গাছ আছে। এবার লিচুর ফলন ভালো হয়েছে। ১০ কোটি টাকার লিচু বিক্রি হবে বলে ধারণা কৃষি বিভাগের। আগামীতে পুরো জেলায় এ জাতের লিচু আবাদের উদ্যোগ নেওয়া হবে।
বিক্রেতারা জানান, এবার তুলনামূলকভাবে লিচুর ফলন কিছুটা খারাপ হয়েছে। তবে দাম ভালো পেলে লাভের মুখ দেখা যাবে।
স্থানীয়দের দাবি, দু’শো বছর আগে মঙ্গলবাড়িয়া গ্রামের মো. হাশিম মুন্সি নামে এক ব্যক্তি চীন থেকে একটি লিচুর চারা এনে তার বাড়ির আঙিনায় রোপণ করেন। এভাবে উন্নত এ লিচুর জাত ছড়িয়ে পড়ে পুরো গ্রামে।
এফএ/এমএস