ফলনে হাসি ফুটলেও কালবৈশাখীতে মলিন চাষি
গত দুই বছর থেকে চাষিরা ধানের ভালো দাম পাচ্ছেন। এ বছরও অনেক আগ্রহ নিয়ে ইরি-বোরো ধানের আবাদ করেন চাষিরা। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় নওগাঁর মাঠে মাঠে ধানের আবাদ ভালো হয়েছে। ফসল দেখে উৎফুল্ল ছিলেন চাষিরা। কিন্তু ১৯ এপ্রিল রাতের কালবৈশাখীর তাণ্ডবে কৃষকদের সোনালী স্বপ্ন এখন দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছে। মাঠের আধাপাকা ধান জমিতে শুয়ে পড়েছে।
এদিকে শ্রমিক সংকটে চাষিরা দিশেহারা। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হওয়ার শঙ্কাও রয়েছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, জেলায় বোরো ধানের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ লাখ ৮৫ হাজার ৮০০ হেক্টর। সেখানে অর্জিত হয়েছে ১ লাখ ৮৯ হাজার ৪৯০ হেক্টর।
কালবৈশাখীর তাণ্ডবের পর থেকে কয়েক দফা ঝড়বৃষ্টি হয়েছে। আধাপাকা ধান মাটিতে শুয়ে পড়েছে। ধান না পাকায় কাটা-মাড়াই করাও সম্ভব হচ্ছে না। জমিতে পানি জমে থাকায় ধান ডুবে রয়েছে। কাটতে দেরি হওয়ায় ধান থেকে চারাও গজিয়েছে।
আবার শ্রমিক সংকটে ধান কাটা-মাড়াইয়েও বিলম্ব হচ্ছে। বাড়তি মজুরি দিয়েও মিলছে না শ্রমিক। জমিতে হেলে পড়া ধান কাটতে শ্রমিকরা অনিহা প্রকাশ করছেন। নুইয়ে পড়া ধানে চিটার পরিমাণও বেশি হচ্ছে। এলাকা ভেদে জমির ধান কাটতে বিঘাপ্রতি ৭-৮ মণ মজুরি দিতে হচ্ছে। আবার বিঘা প্রতি ৫-৭ হাজার টাকায় কাটা-মাড়াই করতে হচ্ছে। এ অবস্থায় আকাশে মেঘের আনাগোনা দেখলেই শঙ্কিত হয়ে পড়ছেন চাষিরা।
চিলাহাটি থেকে এক সপ্তাহ আগে ১৩ জন শ্রমিক ধান কাটার জন্য বোয়ালিয়া গ্রামে এসেছেন। শ্রমিক রাকিবুল ও শরিফুল বলেন, আমাদের থাকা ও খাওয়া জমির মালিকের। বিঘাপ্রতি ৬-৭ হাজার টাকায় আমরা ধান কাটা-মাড়াই করছি। ধান মাটিতে পড়ে গিয়ে চারা গজিয়ে গেছে। জমিতে পড়ে থাকা ধান পানি থেকে অনেক কষ্ট করেই কাটতে হচ্ছে। যে জমিতে বিঘা প্রতি ২২-২৫ মণ ফলন হওয়ার কথা ছিল সেখানে ১৫-১৭ মণ ফলন হচ্ছে। এতে করে কৃষকরা লোকসানে পড়বেন।
সদর উপজেলার বোয়ালিয়া উরাপাড়া গ্রামের দরিদ্র কৃষক সুরুজ আলী বলেন, দুই বিঘা জমি বন্ধক নিয়ে জিরাশাইল জাতের ধানের আবাদ করেছি। এ বছর শুরুর দিকে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় মাঠে ধান ভালো হয়েছিল। কিন্তু হঠাৎ করে কয়েক দফা প্রাকৃতিক দুর্যোগে মাঠের সব ধান মাটিতে শুয়ে পড়েছে। ধান পানিতে ডুবে থাকায় চারা গজিয়ে গেছে। এতে করে ফলন কম হবে। শ্রমিক সংকটে ধান কাটতেও দেরি হয়েছে। বিঘাপ্রতি ৭ হাজার টাকা দিয়ে ধান কেটে নিতে হয়েছে। সব মিলিয়ে এ বছর ধানের আবাদ করে লোকসান হয়েছে।
উপজেলার খট্টেশ্বর গ্রামের কৃষক আব্দুস সামাদ বলেন, এক বিঘা জমিতে বোরো আবাদে হাল চাষে খরচ ১ হাজার টাকা, পানি ১২০০ টাকা, চারা রোপন খরচ ৯০০ টাকা এবং আগাছা দমন ৬০০ টাকা। কীটনাশক ও সার খরচ প্রায় ৫ হাজার টাকা। এছাড়া ধান কাটা-মাড়াই খরচ ৫-৭ হাজার টাকা। এবছর সবকিছুর খরচই বেশি পড়েছে। তাই ধানের দাম বেশি না হলে কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এ বছর ফসলে শনির হানা দিয়েছে বলে দুঃখ প্রকাশ করেন তিনি।
নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. শামছুল ওয়াদুদ বলেন, মাঠের ৭০ শতাংশ ধান পেকে গেছে। ইতোমধ্যে ৩৫ শতাংশ ধান কাটা হয়েছে। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে মাঠের সব ধান কাটা শেষ হবে। তবে শ্রমিক সংকটে চাষিদের কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। এছাড়া বাড়তি মজুরিও গুনতে হচ্ছে চাষিদের। আগামী এক-দুই সপ্তাহের মধ্যে ঝড়-বৃষ্টি না হলে কোনো ক্ষয়ক্ষতি ছাড়াই মাঠের ধান কাটা হয়ে যাবে।
তিনি বলেন, শুরুর দিকে আবহাওয়া ভালো থাকলেও বর্তমানে প্রাকৃতিক দুর্যোগ শুরু হয়েছে। ধান কাটা মাড়াই শেষ না হলে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হওয়ার বিষয়টি বলা সম্ভব হচ্ছে না।
আব্বাস আলী/এফএ/জেআইএম