ইমামকে রাজকীয় বিদায় সংবর্ধনা দিলেন গ্রামবাসী

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি পাবনা
প্রকাশিত: ১২:৫৭ পিএম, ০৭ মে ২০২২

মাত্র ২৪-২৫ বছর বয়সে এসে ইমামতি ও গ্রামের মক্তবে পড়ানো শুরু করেন। ৮০ বছর বয়সে অবসর নিলেন হাফেজ মাওলানা আবু মুছা। তার বিদায়কে জাকজমকপূর্ণ করে অবিস্মরণীয় করে রাখলেন পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার যশমন্তদুলিয়া গ্রামের লোকজন।

বুধবার (৪ মে) বিদায়ের প্রাক্কালে গ্রামবাসী তার রাজকীয় বিদায় সংবর্ধনার অয়োজন করেন। তার হাতে তুলে দেওয়া হয় নগদ এক লাখ টাকা ও নানা উপহার সামগ্রী।

হাফেজ মাওলানা আবু মুছা পাবনার সুজানগর উপজেলার তাঁতীবন্ধ ইউনিয়নের বাড়ইপাড়া গ্রামের মৃত শাহাব উদ্দিনের ছেলে।

যশমন্তদুলিয়া গ্রামের স্কুলশিক্ষক রেজাউল করিম জানান, হাফেজ মাওলানা আবু মুছা হেফজ সম্পন্ন করে যশমন্তদুলিয়া কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে ইমামতি ও মক্তবে পড়ানোর চাকরি নেন। চাকরি করছেন, তবে তিনি কোনোদিন বেতন ভাতার জন্য দর কষাকষি করেননি। গ্রামবাসী তাকে যা খুশি দিয়েছেন, তিনি তা না গুণেই নিয়ে নিয়েছেন।

রেজাউল করিম আরো জানান, তিনি তারও ওস্তাদ। তার মতো হাজার হাজার ছেলে-মেয়ে ইমাম সাহেবের কাছে পড়েছেন।

jagonews24

গ্রামের আরেক স্কুলশিক্ষক আকরাম হোসেন জানান, একজন সাদা মনের মানুষ ইমাম আবু মুছা। একই কর্মস্থলে এত বছর তিনি চাকরি করছেন অথচ কারো সঙ্গে তার মনোমালিন্য হয়নি। এজন্য চাকরি বদল করারও দরকার হয়নি। তিনি বয়সের ভারে চাকরি ছাড়তে চাইলেও গ্রামবাসী তাকে এতদিন ছাড়েননি।

গ্রামের লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ইমাম সাহেব বার্ধক্যজনিত করণে চাকরি থেকে অবসরে গিয়েছেন। গ্রামবাসী তাকে না জানিয়েই বিশাল আয়োজনের প্রস্তুতি নিতে থাকেন। তারা চেয়েছিলেন এমন একজন মহৎ ব্যক্তির বিদায় অনুষ্ঠান যেন স্মরণীয় হয়ে থাকে। তাই তারা সুসজ্জিত মঞ্চ করে বিদায় অনুষ্ঠানের অয়োজন করেন। সেখানে নানা বয়সী মানুষ স্মৃতিচারণ করেন।

গ্রামবাসীর পক্ষ থেকে ইমাম সাহেবকে নগদ এক লাখ টাকা উপহার দেওয়া হয়। তাকে আরো নানা উপহার সামগ্রী দেওয়া হয়েছে। বিদায় সংবর্ধনা শেষে তাকে বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থাও করা হয়। এ সময় গ্রামের যুব সমাজ মোটরসাইকেল বহরে করে তাকে সুসজ্জিত ঘোড়ার গাড়িতে করে নিজবাড়ি পৌঁছে দিয়ে আসেন।

এমন রাজকীয় বিদায় সংবর্ধনায় অভিভূত হাফেজ মাওলানা আবু মুছা। তিনি জানান, অনেক কম বয়সে ওই গ্রামে চাকরিতে যান। তখনও দেশ স্বাধীন হয়নি। তাকে যারা চাকরিতে নিয়েছিলেন সেই সব মুরুব্বিরা আজ আর বেঁচে নেই। তবে তাদের সন্তানরা, গ্রামের অন্যান্যরা তাকে ভালোবাসেন, শ্রদ্ধা করেন।

jagonews24

তিনি জানান, তিনি যখন মক্তবে পড়াতেন তখন আশপাশের গ্রামে এত মসজিদ-মক্তব মাদরাসা ছিল না। তাই পার্শ্ববর্তী দহেরপড়া, ক্রোপদুলিয়া, ঘোড়াদহ, ভবানীপুর, জিয়লগাড়ী প্রভৃতি গ্রামের ছেলে মেয়েরা তার মক্তবে পড়তে আসত। তাই তার ছাত্র-ছাত্রী কয়েক গ্রাম জুড়ে রয়েছে। তিনি অসংখ্য ছাত্রীদের কোরান শিক্ষা দিয়েছেন। তদের অনেকেই আজ বড় বড় চাকরি পেয়েছেন। কিন্তু তারা তাকে ভুলে যাননি। তাকে ভালোবাসেন।

তিনি জানান, এ গ্রামের অন্যান্য মসজিদ, ঈদগাহ, কবরস্থান তাকে নিয়েই এলাকাবাসী প্রতিষ্ঠা করেছেন। বয়স হয়ে যাওয়ায় নানা রোগ-ব্যাধিতে আক্রান্ত তিনি। তাই তার পক্ষে আর দায়িত্ব পালন করা সম্ভব হয়নি। তিনি গ্রামবাসীর অনুরোধ সত্ত্বেও চাকরি ছেড়ে এসেছেন বলে জানান।

ব্যক্তি জীবনে তিনি ৩ ছেলে ও ৫ মেয়ের বাবা। তিনি তাদেরকে মাদরাসা শিক্ষা দিয়েছেন। পরে তারা উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করেছেন। দু’ ছেলে চাকরি করছেন, এক ছেলে পড়াশোনা করছেন বলেও জানান। মেয়েদের বিয়ে দিয়েছেন।

jagonews24

যশমন্তদুলিয়া কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ কমিটির সভাপতি মইনউদ্দিন আহমেদ বলেন, মসজিদের ইমাম আবু মুছা দীর্ঘ ৫৩ বছর তাদের মসজিদে ইমাম ও খতিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি বার্ধক্যজনিত কারণে বিদায় নিয়েছেন। গ্রামবাসী তাকে ছাড়তে চাননি। তিনি তাদের গ্রামেরই একজন, পরম আপনজন হয়ে ছিলেন। তিনি ছিলেন তাদের অভিভাবকের মতো।

পাবনা চাঁপাবিবি মসজিদের খতিব আলহাজ্ব সাওলান সিবগাতুল্লাহ জানান, একজন ইমাম সমাজের নেতা। তার এমন সম্মান ও রাজকীয় বিদায় সংবর্ধনা দিয়ে খুবই প্রশংসনীয় কাজ করেছেন এলাকাবাসী।

আমিন ইসলাম জুয়েল/এফএ/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।