ধান হারিয়ে হাওরে ঈদ আনন্দ ম্লান

নূর মোহাম্মদ
নূর মোহাম্মদ নূর মোহাম্মদ কিশোরগঞ্জ
প্রকাশিত: ০৯:২২ এএম, ৩০ এপ্রিল ২০২২
পানিতে ডুবেছে জমির ধান। সারাবছর কী খাবেন সেই চিন্তা এখন কৃষকের

অডিও শুনুন

দুদিন বাদেই ঈদ। এ সময়টাতে হাওরের কৃষকদের ঘরে ঘরে নবান্নের আনন্দ বিরাজ করার কথা। নতুন ধানের পিঠা-পায়েশের গন্ধে ম-ম করার কথা প্রতিটি কৃষক পরিবারে। তবে এবার বোরো ধানের ভরা মৌসুমেও ঈদ আনন্দ নেই কৃষক পরিবারে। বরং মহাজনী ঋণ পরিশোধ আর পরিবারের সারা বছরের ভরণ-পোষণ নিয়ে অজানা আতংকে হাওরের শত শত কৃষক।

এপ্রিল মাসের প্রথম দিকে উজানের পাহাড়ি ঢলের পানিতে তলিয়ে যায় হাওরের নদী তীরবর্তী বিস্তীর্ণ বোরো ফসলের জমি। ডুবে যায় ৭০৫ হেক্টর জমির ধান।

সেই ক্ষত শুকাতে না শুকাতেই এপিলের মাঝামাঝি সময়ে আবারও পাহাড়ি ঢলে ফসল ডোবার আতংক দেখা দেয় হাওরে। উজানে ভারী বৃষ্টিপাত হওয়ায় জমি তলিয়ে যেতে পারে এমন আশংকায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৮০ ভাগ ধান পাকলেই দ্রুত কেটে ফেলার পরামর্শ দেওয়া হয় কৃষকদের।

jagonews24

এমন পরিস্থিতিতে কাঁচা ও আধাপাকা ধান কেটে ফেলেন কৃষকরা। আর এতে করে চরম ক্ষতির সম্মুখীন হন তারা। পচা ও অপুষ্ট ধান বিক্রি হচ্ছে ৫-৬শ’ টাকা মণে। এতে মিলছে না উৎপাদন খরচের অর্ধেকও। ব্যাংক ও মহাজনি ঋণের টাকা পরিশোধ নিয়ে দিশেহারা প্রান্তিক কৃষকরা।

মহাজনের কাছ থেকে দেড়গুণ সূদে এক লাখ টাকা নিয়ে জিওলের হাওরে ৬ একর জমিতে বোরো ধানের আবাদ করেছিলেন কিশোরগঞ্জের ইটনা উপজেলার পূর্বগ্রামের প্রান্তিক চাষি আলী রহমান। কিন্তু উজানের পানি জমিতে উঠে পড়ায় অর্ধেক পাকার আগেই কেটে ফেলছেন জমির ধান।

তিনি জানান, অপুষ্ট ধান কেটে ফেলায় শুকানোর পর এগুলো বিক্রি করা যাচ্ছে না। ৬শ’ টাকা মণ বিক্রি করতে হয়েছে। এতে উৎপাদন খরচই উঠছে না। এমন অবস্থায় ঋণের টাকা পরিশোধ হবে কীভাবে, সারা বছর খাবোই বা কী? আমাদের পরিবারে কোনো ঈদের আনন্দ নেই।

jagonews24

উজানের পানিতে ফসলডুবি ও আতংকে কাঁচা ধান কেটে ফেলায় আলী হোসেনের মতো চরম দুর্দশায় হাওরের হাজার হাজার কৃষক। অনেকে জমির ধান হারিয়ে অন্যের জমিতে শ্রমিকের কাজ করছেন। ঋণের টাকা পরিশোধ ও পরিবারের সারা বছরের ভরণ-পোষণের চিন্তায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন তারা।

বছরের একটি মাত্র ফসলের ওপর নির্ভরশীল হওয়ায় না খেয়ে থাকার উপক্রম হয়েছে তাদের। ঈদের আনন্দ তাই এসব পরিবারের কাছে ধুসর হয়ে পড়েছে।

ইটনার মীরবাড়ি হাটির আব্দুল কাদির, পূর্ব গ্রামের হাবিব মিয়া ও একই এলাকার পিপলু মিয়া জানান, এনজিও থেকে টাকা নিয়ে তারা সামান্য জমিতে বোরো ধানের আবাদ করেছিলেন। কিন্তু ধান তলিয়ে যাওয়ায় তাদের এখন পথে বসার উপক্রম। অন্যের জমিতে দিনমজুরি করে সংসার চলছে। এদিকে এনজিওর লোকজন কিস্তির টাকার জন্য বাড়িতে এসে বসে থাকেন। তাই ঈদতো দূরের কথা, ঋণ পরিশোধ আর পরিবারের খাবারের খরচ চালানো নিয়ে তারা বিপাকে পড়েছেন।

jagonews24

কৃষকরা জানান, ধার-দেনা ও চড়া সুদে টাকা নিয়ে তারা ফসল আবাদ করেছেন। কিন্তু ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় এবং উৎপাদন খরচও ওঠাতে না পারায় তারা চোখে অন্ধকার দেখছেন। প্রতিমণ ধান উৎপাদনে এক হাজার টাকা খরচ হলেও শ্রমিকের খরচ মেটাতে জমির পাশেই অর্ধেক মূল্যে বিক্রি করতে হচ্ছে ধান। এরপরও মিলছে না ক্রেতা।

কিশোরগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শামীম আলম জানান, হাওরের ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা তৈরির কাজ চলছে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সরকারি সহযোগিতার আওতায় আনা হবে। এছাড়া দরিদ্র প্রান্তিক কৃষকদের মধ্যে ঈদ উপলক্ষে ত্রাণের চাল বিতরণ করা হচ্ছে।

এফএ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।