নারী ফুটবলারকে ধর্ষণচেষ্টা মামলায় গ্রেফতার সাবেক ছাত্রলীগ নেতা

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি ময়মনসিংহ
প্রকাশিত: ০৭:৪১ পিএম, ২৭ এপ্রিল ২০২২

ময়মনসিংহের নান্দাইলে এক নারী ফুটবলারকে (১৭) ধর্ষণের অভিযোগে ফয়সাল ফকির (৩৬) নামের সাবেক এক ছাত্রলীগ নেতাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

বুধবার (২৭ এপ্রিল) দুপুরে গাজীপুরের টঙ্গী থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।

ফয়সাল ফকির উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক। তিনি পৌর শহরের পাছপাড়া গ্রামের লাল মিয়া ফকিরের ছেলে।

শুক্রবার (২২ এপ্রিল) দুপুর ১২টার দিকে পৌর শহরের নান্দাইল সরকারি শহীদ স্মৃতি আদর্শ ডিগ্রি কলেজের পেছনে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় শনিবার (২৩ এপ্রিল) ওই নারী ফুটবলার বাদী হয়ে ধর্ষণের অভিযোগ করেন। তবে, নান্দাইল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ধর্ষণচেষ্টার মামলা নিয়েছেন বলে অভিযোগ করেন বাদী।

বুধবার ভুক্তভোগী ওই নারী ফুটবলার জাগো নিউজকে বলেন, ফয়সাল পার্শ্ববর্তী এলাকার বাসিন্দা হওয়া আগে থেকেই পরিচিত। ঘটনার দিন সকালে ফয়সাল ফোন করে বলেন, ‘উপবৃত্তির ফরমে সই দিতে হবে, তাড়াতাড়ি নান্দাইলের শহীদ স্মৃতি আদর্শ কলেজে আসো’। সরল বিশ্বাসে আমি কলেজের গেটে গিয়ে তাকে ফোন করি। ফোন করলে তিনি আমাকে কলেজের পেছনে যেতে বলেন। কলেজের পেছনে যেতেই মুখ চেপে ধরেন। এসময় চিৎকার করলে আশপাশ থেকে দু-তিনজন মানুষ আসতে চাইলে ফয়সাল তাদের চাকু দেখিয়ে হত্যার হুমকি দিলে তারা পালিয়ে যান। কলেজের পিয়ন আব্দুর রহিম আমার চিৎকার শুনে কাছে আসতে চাইলে তাকেও চাকু দেখিয়ে ভয় দেখালে তিনিও সেখান থেকে পালিয়ে যান।

jagonews24

‘পরে ফয়সাল ও তার দুই সঙ্গী আমাকে কলেজের পুরাতন বিল্ডিংয়ের চিপায় নিয়ে ধর্ষণ করেন। এসময় তার সঙ্গীরা মোবাইলে ভিডিও ধারণ করেন। ধর্ষণের পর এ ঘটনা কাউকে জানালে ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেন। পরে সেখান থেকে বাড়ি ফিরে মা-বাবাকে বিষয়টি জানাই। পরদিন সকালে থানায় গিয়ে ধর্ষণের অভিযোগ করি। তবে, এ ঘটনার চারদিন পার হলেও ওসি মামলার কোনো কপি দেননি। এমনকী তদন্তও করেননি।’

প্রত্যক্ষদর্শী শহীদ স্মৃতি আদর্শ কলেজের পিয়ন আব্দুর রহিম জাগো নিউজকে বলেন, ‘ওইদিন (শুক্রবার) বন্ধ থাকায় কলেজে আমার ডিউটি ছিল না। আমি গরুর ঘাস কাটতে এসে কলেজের পেছনে চিৎকার শুনে গিয়ে দেখতে পাই ফয়সাল ওই মেয়েকে ধর্ষণের চেষ্টা করছে। এসময় আমি এগিয়ে যেতে চাইলে ফয়সাল আমাকে চাকু দেখিয়ে হুমকি দিলে ভয়ে চলে যাই। আমার মোবাইলে টাকা না থাকায় কলেজের বাইরে গিয়ে টাকা লোড দেই। টাকা লোড দিয়ে অধ্যক্ষ বাদল কুমার দত্ত স্যারকে বিষয়টি জানাই। পরে অধ্যক্ষ স্যারের নির্দেশনামতে কলেজে এসে ফয়সালকে কলেজ প্রাঙ্গণ থেকে বেরিয়ে যেতে বলি।’

কলেজের অধ্যক্ষ বাদল কুমার দত্ত জাগো নিউজকে বলেন, ‘বিষয়টি পিয়ন আব্দুর রহিম ওইদিনই আমাকে ফোন করে জানায়। এরপর থেকে ফয়সালকে কলেজ প্রাঙ্গণে আসতে নিষেধ করেছি।’

আপনি এ ঘটনা পুলিশকে জানিয়েছিলেন কি না এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আমি বিষয়টি পুলিশকে জানাইনি’। পুলিশ তদন্ত করতে কলেজে এসেছিল কি না এমন প্রশ্নে অধ্যক্ষ বলেন, ‘পুলিশ কোনো প্রকার তদন্ত করতে কলেজে আসেনি’।

এ বিষয়ে জানতে নান্দাইল থানার ওসি মিজানুর রহমান আকন্দ জাগো নিউজকে বলেন, ‘এ ঘটনায় ওইদিন রাতেই থানায় ধর্ষণচেষ্টার মামলা হয়েছে। আসামি ফয়সাল ফকিরকে গ্রেফতার করা হয়েছে।’

ভুক্তভোগী কিশোরীর অভিযোগ তিনি ধর্ষণের অভিযোগ করেছেন। আপনি ধর্ষণচেষ্টার মামলা নিলেন কীভাবে জানতে চাইলে ওসি বলেন, ‘ওই মেয়ের জবানবন্দিতেই মামলা রুজু করা হয়েছে।’

এ বিষয়ে জেলা পুলিশ সুপার মোহা. আহমার উজ্জমান জাগো নিউজকে বলেন, ‘ভিক্টিম যদি ধর্ষণের অভিযোগ করে থাকে তাহলে অবশ্যই ধর্ষণের মামলা নেওয়া হবে। এরই মধ্যে ওসিকে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’

ধর্ষণের শিকার ওই নারী ফুটবলার জাতীয় পর্যায়ে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেসা গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্টে খেলেছেন। তিনি আনোয়ারা স্পোর্টিং ক্লাব ও ময়মনসিংহ কাচিঝুলি স্পোর্টিং ক্লাবের পক্ষে দীর্ঘদিন খেলে আসছেন। অসংখ্য মেডেলও জিতেছেন ওই নারী ফুটবলার।

মঞ্জুরুল ইসলাম/এসআর/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।