বগুড়া-সিরাজগঞ্জ রেলপথ হলে কমবে ২০০ কিলোমিটার
আলোর মুখ দেখতে যাচ্ছে বগুড়া-সিরাজগঞ্জ রেলপথ নির্মাণ প্রকল্প। এখন চলছে প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের শেষ পর্যায়ের কাজ। এরই মধ্যে রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন প্রকল্পের বগুড়া ও সিরাজগঞ্জ অংশের অ্যালাইনমেন্ট ও প্রস্তাবিত নতুন রেলজংশন পরিদর্শন করেছেন।
খোঁজ নিয়ে যায়, দুই জেলার মধ্যে সরাসরি রেলপথ না থাকায় বগুড়ার সান্তাহার জংশন হয়ে, নাটোর, পাবনা, ঈশ্বরদী দিয়ে সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া হয়ে যমুনা নদীর ওপর নির্মিত বঙ্গবন্ধু সেতুতে পৌঁছাতে হয়। শুধু বগুড়া রেলস্টেশন থেকে তিনটি জেলার পথ ঘুরে বঙ্গবন্ধু সেতুতে পৌঁছাতে সময় লাগে তিন থেকে চার ঘণ্টা। আর ৪০৫ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে ঢাকায় পৌঁছাতে সময় লাগে প্রায় ৯ ঘণ্টা। কিন্তু সড়ক পথে তা মাত্র ২০০ কিলোমিটার। ফলে বাসে ঢাকা যেতে সময় লাগে পাঁচ থেকে ছয় ঘণ্টা।
বগুড়া, জয়পুরহাট, নওগাঁ, গাইবান্ধা, রংপুর, নীলফামারী, ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুর, পঞ্চগড়, লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রাম জেলার বাসিন্দা এক সড়ক দিয়ে ঢাকায় যাতায়াত করেন। এতে সড়কে সবসময় যানজট লেগেই থাকে। যানজটের কারণে ঢাকা পৌঁছাতে পোহাতে হয় নানা দুর্ভোগ। এছাড়া ট্রেনে ঢাকায় যেতে বেশি সময় লাগে। বগুড়া থেকে সরাসরি বঙ্গবন্ধু সেতুতে ট্রেন সার্ভিস চালু হলে বগুড়াসহ প্রায় ২০০ কিলোমিটার পথ কমে আসবে। একইসঙ্গে কমবে খরচও। তাই বগুড়া ও সিরাজগঞ্জের বাসিন্দারা সরাসরি রেলপথ নির্মাণের দাবি তোলেন। এ পথটি নির্মাণ হলে উত্তরের ১০ জেলায় আর্থিক গতি আরও বাড়বে। পথ কমে বগুড়া থেকে সিরাজগঞ্জের বঙ্গবন্ধু সেতুর শহীদ এম মনসুর আলী স্টেশন পর্যন্ত ৭২ কিলোমিটার দাঁড়াবে।
এদিকে গত ২৩ এপ্রিল প্রকল্প এলাকা পরিদর্শনে যান রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন। একই সঙ্গে বগুড়া অংশে সম্ভাব্য আন্ডারপাস ও ওভারপাসের জন্য কয়েকটি পয়েন্টও ঘুরে দেখেন তিনি।
তিনি বলেন, এ প্রকল্পের কিছু জটিলতা ছিল। সেসব জটিলতা কেটে গেছে। এখন খুব দ্রুত রেলপথ নির্মাণের কাজ শুরু হবে। ভারতের লাইন অব ক্রেডিটের আওতায় এই প্রকল্পটিতে অর্থ ব্যয় করা হবে। পাশাপাশি পুরো প্রকল্পে সাড়ে ৫ থেকে ৬ হাজার কোটি টাকা খরচ হবে। প্রকল্প পরামর্শকরা এরই মধ্যে কোথায় কোথায় ব্রিজ, ফ্লাইওভার, আন্ডারপাস নির্মাণ হবে তা নিয়ে কাজ শুরু করেছেন।
বগুড়া রেলস্টেশন সূত্র জানায়, বগুড়া-সিরাজগঞ্জ রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পে মূল রুট ধরা হয়েছে ৭২ কিলোমিটার। বগুড়ার রাণীরহাট এলাকা থেকে সিরাজগঞ্জের শহীদ এম মনসুর আলী স্টেশন পর্যন্ত এ রুট হবে। এ প্রকল্পের আওতায় ডুয়েল গেজের দুটি রেলপথ নির্মাণের পরিকল্পনা হয়েছে।
এছাড়া বগুড়ার কাহালু স্টেশন থেকে রাণীরহাট পর্যন্ত ১২ কিলোমিটারসহ মোট ৮৪ কিলোমিটার ডুয়েল গেজ রেলপথ হবে। বগুড়া শহর থেকে আট কিলোমিটার দূরে রাণীরহাটে জংশন স্টেশন নির্মাণ হবে।
পাশাপাশি বগুড়া-সিরাজগঞ্জ রুটে শেরপুর, চাঁন্দাইকোনা, রায়গঞ্জ, কৃষাণদিয়া ও সদানন্দপুরে স্টেশন স্থাপন করা হবে। একই সঙ্গে সিরাজগঞ্জে একটি রেলওয়ে জংশন নির্মাণ করা হবে। প্রস্তাবিত ৮৪ কিলোমিটার রেলপথের জন্য ৯৬০ একর জমি অধিগ্রহণের প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মধ্যে বগুড়ায় ৫২ কিলোমিটার রেলপথের জন্য ৫১০ একর এবং সিরাজগঞ্জের ৩২ কিলোমিটারের জন্য ৪৫০ একর জমি অধিগ্রহণ করা হবে। এ রুটের মাধ্যমে ঢাকার সঙ্গে দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের আশপাশের এলাকার সরাসরি রেল যোগাযোগ নিশ্চিত হবে।
এর আগে ২০১৫ সালের ১২ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বগুড়ার আলতাফুন্নেছা খেলার মাঠে এক জনসভায় বগুড়া- সিরজাগঞ্জ রেলপথ নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দেন। ২০১৭ সালের ৪ অক্টোবর ঢাকায় ভারতের সঙ্গে যোগাযোগ অবকাঠামো ও বিদ্যুৎ খাতের উন্নয়নে স্বাক্ষরিত চুক্তির আওতায় তৃতীয় ক্রেডিট লাইনে ঋণ দিতে দেশটি সম্মত হয়। এরপর প্রকল্পটি বাস্তবায়নে প্রজেক্ট প্রোফাইল প্রণয়ন, নকশা তৈরি, স্টেশনের সংখ্যা নির্ধারণ ও জমির মূল্য নির্ধারণের কাজ শুরু হয়। ২০১৮ সালের ৩০ অক্টোবর একনেক সভায় বগুড়া-সিরাজগঞ্জ রেলপথ নির্মাণ প্রকল্প অনুমোদন পায়।
এসজে/জেআইএম