যানজটে অতিষ্ঠ মহিপালবাসী
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ফেনী শহরের মহিপালে ৬ লেন বিশিষ্ট ফ্লাইওভারের কাজ শুরুর আগেই নিত্য যানজট লেগেই রয়েছে। এতে করে স্কুল-কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থী, রোগীসহ কর্মস্থলমুখী জনসাধারণের ভোগান্তিক্রমেই চরম আকার ধারণ করেছে। এসব যানজটের জন্য অপরিকল্পিত স্ট্যান্ড ও ট্রাফিক ব্যবস্থাকে দায়ী করলেও কোনো সুরাহা মিলছে না।
সরেজমিনে দেখা গেছে, শহরের ব্যস্ততম সড়ক মহিপালে যানজট দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে। টার্নিং পয়েন্টের আশপাশজুড়ে যত্রতত্র পার্কিং, যাত্রী উঠানামা, মালামাল লোড-আনলোড করে বাস-ট্রাক ও সিএনজিচালিত অটোরিকশাসহ বিভিন্ন পরিবহন। ফ্লাইওভারের কাজ শুরুর পর থেকে যানজট কমাতে ফেনী-নোয়াখালী সড়কে সিএনজিচালিত অটোরিকশা আটকে দেয়া হয় আনসার ভিডিপি ক্যাম্পের সামনে। দূরপালা থেকে ছেড়ে আসা এই সড়কের বাসগুলো যাত্রী উঠানামা করে মসজিদের সামনে। একইভাবে নোয়াখালীগামী বাস ও আন্তঃজেলা সিএনজি অটোরিকশাগুলোর স্ট্যান্ড মোড় সংলগ্ন রেঙগুনী সুইটস ও আলমাস হোটেলের সামনে।
এছাড়া দুই পাশের ফল মার্কেটের মালামাল লোড-আনলোড হয় সড়কের উপরে। এতে করে মোড় থেকে পাঁচগাছিয়া বাজার পর্যন্ত যানজটের এ চিত্র নিত্য নৈমিত্তিক হয়ে দাঁড়িয়েছে। এদিকে চট্টগ্রাম স্ট্যান্ডের বিপরীতে ফ্লাইওভারের কাজের কারণে টিনের বেড়া দিয়ে সড়কের এক পাশ বন্ধ করে দেয়া হয়। ওই বেড়ার পাশেই বসেছে অস্থায়ী ফল দোকানিরা। চট্টগ্রামগামী ও ঢাকাগামী বাসস্ট্যান্ড সড়কের উপরে হওয়ায় যানজট কিছুতেই কমছে না। যাত্রীবাহী বাসের পাশাপাশি এ দুটি স্ট্যান্ডে শহরতলীর এলাকামুখী ইমা পরিবহন ও সিএনজিচালিত অটোরিকশা স্ট্যান্ড রয়েছে।
ট্রাফিক মোড়ের পাশেই রয়েছে ফেনী শহরমুখী টাউন সার্ভিস, সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও রিকশাস্ট্যান্ড। সবকটি স্ট্যান্ডেই সারিবদ্ধভাবে গাড়ি না দাঁড়ানোর কােণে যানজটের মাত্রা বেড়ে যায়। শুধু তাই নয়, দায়িত্বরত ট্রাফিক সদস্যদের কেউ কেউ যানজট নিয়ন্ত্রণে কাজ করলেও একাধিক সদস্য ব্যস্ত থাকেন গাড়ি থামিয়ে কাগজপত্র চেক করতে। একটি গাড়ির পেছনেই বেশ কিছুক্ষণ সময় কাটাতে গিয়ে দীর্ঘ যানজট তৈরি হয়। এসব স্ট্যান্ড থেকে অসাধু পুলিশ সদস্যরা মাসোহারা নিয়ে কোনো ব্যবস্থা না নেয়ায় যত্রতত্র স্ট্যান্ডের কারণ বলে জানিয়েছেন স্থানীয় দোকানীরা।
যানজটের সৃষ্টি হলে এটি ছাড়িয়ে যায় মহাসড়কের বিসিক রাস্তার মাথা এমনকি দেবিপুর-ফতেহপুর এবং লালপোল পর্যন্ত। দাাগনভূঞা-রাজাপুর, সিন্দুরপুর ও সেনবাগের গাজির হাট থেকে শহরমুখী সিএনজিচালিত অটোরিকশাগুলো বিকল্প পথ ব্যবহার করলে যানজট কিছুটা সহনীয় হতো বলে মনে করছেন সংশিষ্টরা। তবে বিকল্প সড়ক ব্যবহার করে মহাসড়ক পারাপার হতে গিয়ে কখনো কখনো টহলরত হাইওয়ে পুলিশ ও ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের হাতে আটকা পড়লে ৩ থেকে ৫ হাজার টাকা জরিমানা গুণতে হয়। টাকা না দিলে মামলা ঠুকে দেয়া হয় তাদের বিরুদ্ধে। এতে করে চালকরা মহিপাল হয়ে যাতায়াত করতে গিয়ে বাড়তি যানজটের সৃষ্টি হয়। এছাড়া সন্ধ্যার পর যানজটের চিত্র আরো ভয়াবহ। ট্রাফিক মোড়ের পাশে সড়কের উপরে বসে হাট-বাজার।
এ প্রসঙ্গে ফেনী কলেজ শিক্ষার্থী আমজাদ হোসেন বলেন, অপরিকল্পিত স্ট্যান্ডের কারণে যানজট লেগেই থাকে। এটি নিয়ন্ত্রণে জনগুরুত্বপূর্ণ এ স্পটে ট্রাফিক সদস্য বাড়ানো দরকার বলে তারা মনে করেন। হাজী নজির আহম্মদ ফল মার্কেটের ব্যবসায়ী হাজী মোস্তাফা মিয়া যানজটের জন্য সিএনজি অটোরিকশাকে দায়ী করেছেন।
তিনি বলেন, সংশিষ্ট কর্তৃপক্ষ এসব গাড়িগুলোর সুনির্দিষ্ট স্ট্যান্ড নিশ্চিত করলে যানজট কমে আসবে বলে তিনি মনে করেন। একই কথা বলেন ট্রাফিক সার্জেন্ট জাকির হোসেনও।
তিনি জাগো নিউজকে বলেন, সিএনজি অটোরিকশাগুলো সুনির্দিষ্ট স্থানে স্ট্যান্ড করা হলে যানজট অনেকাংশে কমে যাবে। প্রতি শিফটে ৬ জন ট্রাফিক সদস্য দায়িত্ব পালন করেও যানজট নিরসনে হিমশিম খেতে হয়।
জানতে চাইলে মহিপাল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক শহীদ উল্লাহ শহীদ বলেন, যানজট নিরসনে পৌরসভাসহ প্রশাসনকে একাধিকবার জানানো হলেও স্থায়ী সমাধান মিলেনি।
ফেনী জেলা ট্রাফিক বিভাগের পরিদর্শক (টিআই) মো. গোলাম ফারুক যানজটের সত্যতা নিশ্চিত করে জাগো নিউজকে বলেন, আমাদের জনবল সঙ্কট রয়েছে। আগে ৪০ জন ট্রাফিক কাজ করতো এখন তিন শিফটে আরও ৯ জন ট্রাফিক অতিরিক্ত দিয়ে কুল পাচ্ছি না। তবে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে নিরবিচ্ছিন্ন যাতায়াত নিশ্চিত করা হয়েছে।
জহিরুল হক মিলু/এসএস/আরআইপি