রিকশাচালক বেশে দুই মেয়েকে খুঁজে বেড়ান ইদ্রিস আলী
অডিও শুনুন
দুই মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে সুখের সংসার দিনাজপুরের কাহারোল উপজেলার বাসিন্দা ইদ্রিস আলীর (৩৮)। কৃষিকাজের পাশাপাশি মাঝেমধ্যে ঢাকায় এসে নির্মাণ শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন। আশা ছিল মেয়েদের লেখাপড়া করিয়ে ভাল জায়গায় বিয়ে দিবেন। কিন্তু স্ত্রীর উচ্চাকাঙ্ক্ষায় কোনো এক দালালের খপ্পরে পড়ে নিশ্চিহ্ন হয়ে পড়ে তার সংসার।
স্ত্রী ও সন্তান হারা ইদ্রিস আলী দিনাজপুর থেকে নারায়ণগঞ্জে এসে রিকশা চালান। এখানকার অলিগলিতে খুঁজে বেড়ান সন্তানদের। কিন্তু কোথাও তাদের দেখা মিলছে না। মেয়েদের ফিরে পাবার আশায় নাওয়া খাওয়া বন্ধ ইদ্রিস আলীর। এখানে মানবেতর জীবনযাপন করছেন তিনি।
বৃহস্পতিবার (১৪ এপ্রিল) রাতে এ প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হয় ইদ্রিস আলীর। মেয়েদের কথা জিজ্ঞেস করতেই কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। তিনি বলেন, আমার সংসারে কোনো অভাব ছিল না। দুই মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে আমার সুখের সংসার। এরমধ্যে একজন দালাল এসে আমার স্ত্রী শাহনাজ বেগমকে (২৭) কুমন্ত্রণা দেয়। তাকে বলে বিদেশ গেলে অনেক আয় হবে। আমি তাকে বিদেশ না যাওয়ার অনুরোধ করি। কিন্তু আমার কথা সে শুনে নাই।
একদিন বাড়ি ফিরে দেখি দুই মেয়ে ইতি (৯) এবং মীমকে (৫) নিয়ে স্ত্রী শাহনাজ বেগম বাড়ি ছেড়েছেন। এরপর থেকেই আর দুই মেয়ের মুখ দেখতে পারছি না। মাঝে মধ্যে ফোনে কথা হলেও তাদের কোনো ঠিকানা জানার সুযোগ হয়নি।
ইদ্রিস আলী বলেন, ২০ দিন আগে মেয়েদের সঙ্গে কথা বলি। তারা আমাকে বলে নারায়ণগঞ্জে আছে। তাই আমি নারায়ণগঞ্জে ছুটে এসেছি। এখানে এসে রিকশা চালাই আর মেয়েদের খুঁজছি। এখানকার সব জায়গায় মেয়েদের খুঁজেছি কিন্তু কোথাও পাচ্ছি না। আমি আমার মেয়েদের ফেরত চাই।
এদিকে এ ঘটনায় গত ১০ এপ্রিল (রোববার) নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা মডেল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) হয়েছে। পুলিশ সেই জিডি আমলে নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে।
ইদ্রিস আলীর বড় ভাই হবিব জাগো নিউজকে বলেন, তার স্ত্রী মেয়েদের নিয়ে গেছেন। সে বিদেশ চলে গেছে। এখন তার শ্বশুরবাড়ির লোকজন মেয়েদের বাবার কাছে আসতে দিচ্ছেন না।
জিডিতে উল্লেখিত ইদ্রিস আলীর শাশুড়ি আকলিমা বেগমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জাগো নিউজকে বলেন, দুই নাতনিকে চাষাঢ়া এলাকার একটি প্রাইমারি স্কুলে ভর্তি করা হয়েছে। তারা বড় হলে এমনিতেই বাবার কাছে চলে যাবে। আমার মেয়ে শাহনাজ দেশে নেই। সে বিদেশ থেকে আসুক। ঈদে দুই নাতনিকে নিয়ে তাদের বাড়ি নিয়ে যাবো।
জিডির তদন্ত কর্মকর্তা ফতুল্লা মডেল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) রাশেদুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, আমরা এ বিষয়ে তদন্ত কাজ শুরু করেছি। অল্প সময়ের মধ্যে আমরা এ বিষয়ে একটি সুষ্ঠু সমাধানে পৌঁছতে পারবো।
ফতুল্লা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রকিবুজ্জামান জাগো নিউজকে বলেন, আশা করছি ওই ভুক্তভোগী অল্প সময়ে তার মেয়েদের খুঁজে পাবেন।
মোবাশ্বির শ্রাবণ/আরএইচ/জিকেএস