সাবিনার চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন পূরণের পথে বাধা অর্থ!

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি ঠাকুরগাঁও
প্রকাশিত: ০১:১৩ পিএম, ১৪ এপ্রিল ২০২২
সাবিনা

দিনমজুরের মেয়ে সাবিনা। ছোটো থেকে স্বপ্ন ছিল চিকিৎসক হওয়ার। পরিবারে অভাব নিত্যসঙ্গী হলেও কখনো লেখাপড়ার হাল ছাড়েননি। পিএসসি, জেএসসি, এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়ে নিজের মেধার পরিচয় দিয়েছেন তিনি। একটু একটু করে এগিয়ে গেছেন স্বপ্নের গন্তব্যে।

তবে স্বপ্নের কাছাকাছি পৌঁছেও বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে অর্থ। ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে এমবিবিএস কোর্সে মেধা তালিকায় উত্তীর্ণ হয়েও অর্থাভাবে ভর্তি অনিশ্চিত সাবিনার। এ নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছে তার পরিবার।

সাবিনা ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার আরাজি ঝাড়গাঁও গ্রামের আনিসুর রহমানের মেয়ে। তিন ভাই বোনের মধ্যে বড় তিনি। ছোট বোন নাসরিন ষষ্ঠ শ্রেণিতে আর ছোট ভাই নাহিদ পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ে। দিনমজুর বাবা আনিসুরের আয়ে তাদের পড়াশোনার খরচ ও পাঁচ সদস্যের সংসার চলছিল। কিন্তু বেশ কয়েকমাস ধরে তিনি অসুস্থ। পাঁচ শতক ভিটাবাড়ি, একটি গরু ও কয়েকটি ছাগল তাদের সম্পদ। এ অবস্থায় মেয়ের জন্য টাকা জোগাড় করা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে বাবা অনিসুরের।

jagonews24

আনিসুর রহমান বলেন, ‘মেয়ে ডাক্তারি পড়ার সুযোগ পাইছে। তাই বাসার সবাই খুশি। গ্রামের মানুষরা দেখতে আসতেছে। কিন্তু আমি হাসতে পারতেছি না। যখনি মনে হচ্ছে টাকার অভাবে মাইয়াটার স্বপ্ন শেষ হইয়া যাবে, বুকটা ধড়পড় করতেছে। সে অনেক কষ্ট করে পড়াশোনা করছে। কখনোই একটা প্রাইভেট পাড়াতে পারি নাই।’

মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পাওয়া সাবিনা বলেন, ‘আমার পরিবার বেশ গরীব। তাই কখনো প্রাইভেট খরচ নেওয়ার সুযোগ ছিল না। তবে স্কুল শিক্ষকরা আমাকে বিনা বেতনে পড়াতেন। সবসময় ভালো পরামর্শ দিতেন। আর প্রতি মুহূর্তে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার সাহস ও প্রেরণার যুগিয়েছেন মা।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমি মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পেয়েছি, এটা আমার জন্য অনেক বড় পাওয়া। আমার বাবা অসুস্থ মানুষ। এখন আর কাজ করতে পারে না। তাই জানি না পড়াশোনা কতদূর আর করতে পারবো।’

সাবিনার মা বিউটি আক্তার বলেন, ‘সাবিনা ছোটবেলায় খুব অসুস্থ হয়ে পড়ে। তখন ঠাকুরগাঁওয়ে শিশু ডাক্তার শাহজাহান নেওয়াজের কাছে নিয়ে যাই। তিনি আমার মেয়ের চিকিৎসা দেন। আমার মেয়ে সুস্থ হয়ে ওঠে। কিন্তু সেদিন ডা. নেওয়াজ আমাদের কাছে কোনো টাকাপয়সা নেননি। তার মহৎকর্ম আমাকে প্রভাবিত করে। তখন থেকেই ইচ্ছা ছিল আমার এই মেয়ে ডাক্তার হবে। স্বপ্নের দিক অনেকদূর এগিয়েছি। তবে এখন ভয় হচ্ছে, টাকার অভাবে সেই স্বপ্ন যেন অসম্পূর্ণ না থেকে যায়।’

ঝাড়গাঁও গ্রামের বাসিন্দা জলিল বলেন, ‘আমাদের গ্রামে এর আগে কোনো মেয়ে মাধ্যমিক পাশ করেনি। সেই গ্রাম থেকে এবার আমরা ডাক্তার পাওয়ার স্বপ্ন দেখতেছি। ছোটো থেকে মেয়েটি অনেক কষ্ট করেছে। সমাজের বিত্তবানরা এগিয়ে আসলে মেয়েটি পড়ালেখা শেষ করতে পারবে।’

এ বিষয়ে ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক মাহাবুবুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, সাবিনার জন্য শুভকামনা ও তার পরিবারকে সম্মান জানাই। এ বিষয়ে আমাদের জানা ছিল না। অবশ্যই যোগাযোগ করে তাকে সহযোগিতার চেষ্টা করবো।

তানভীর হাসান তানু/এসজে/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।