গাছ-বাঁশ প্যাঁচানো বিদ্যুৎ সংযোগ থেকে রেহাই পেলেন সেই গ্রামবাসী

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি ফরিদপুর
প্রকাশিত: ০৯:৫২ এএম, ১৪ এপ্রিল ২০২২
স্থায়ী খুঁটি বসিয়ে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হচ্ছে

ফরিদপুরের মধুখালীতে গাছ-বাঁশে পেঁচিয়ে ১০ বছর ধরে চলছিল বিদ্যুৎ সংযোগ। উপজেলার মেগচামী গ্রামে গাছের ডালে ও বাঁশের খুঁটি বসিয়ে তার টেনে প্রায় এক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিদ্যুৎ সংযোগ সঞ্চালনের খবর প্রকাশের পর টনক নড়ে কর্তৃপক্ষের। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ সরেজমিনে পরিদর্শন করে সংবাদের সত্যতা পেয়ে বিদ্যুতের স্থায়ী খুঁটি স্থাপনের কাজ বাস্তবায়ন করেছেন। এতে স্বস্তি ফিরেছে ওই গ্রামের সাধারণ মানুষের মাঝে।

‘গাছ-বাঁশ পেঁচিয়ে ১০ বছর ধরে চলছে বিদ্যুৎ সংযোগ’ শিরোনামে গত ৩১ মার্চ জাগো নিউজে সংবাদ প্রকাশ হয়। এরপরই বিষয়টি নজরে আসে কর্তৃপক্ষের।

এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, মধুখালী উপজেলার মেগচামী ১ নম্বর ওয়ার্ডের মধ্যপাড়া খানবাড়ী থেকে মধ্যপাড়া গোরস্থান মডেল বাজার পর্যন্ত এলাকায় গাছ ও বাঁশের ঝাড়ের মধ্য দিয়ে ঝুঁকিপূর্ণভাবে সংযোগ দেয় ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (ওজোপাডিকো) রাজবাড়ী অফিস। বৈদ্যুতিক খুঁটি না বসিয়ে বাঁশ ও গাছের ডালে বিদ্যুতের তার টেনে নেওয়া হয়েছিল। অনেক স্থানে তারের ভারে বাঁশগুলো হেলে পড়ে। কোথাও বা হেলে থাকা বাঁশ আরও একটা বাঁশ দিয়ে ঠেকনা দেওয়া হয়। রাস্তার আশপাশের মেহগনি গাছের সঙ্গেও বিদ্যুতের তার পেঁচানো ছিলো। এভাবে গ্রামের মেগগনি বাগান, ফসলি জমি ও বাঁশের সঙ্গে তার ঝুলিয়ে বিদ্যুৎ লাইন সঞ্চালনে জীবনের ঝুঁকিতে ছিলেন গ্রামের শত শত মানুষ।

সংবাদটি জাগো নিউজে প্রকাশের পর রাজবাড়ীর ওয়েস্ট জোন ডিস্ট্রিবিউশন কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী আমিনুর রহমান ৩ এপ্রিল সরেজমিনে পরিদর্শনে আসেন। এসময় ওই কাজের ঠিকাদার আনিসুর রহমান ও অফিসের কর্মকর্তাদের নিয়ে তিনি এলাকাটি পরিদর্শন করেন এবং দ্রুত স্থায়ী খুঁটি স্থাপন ও বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্টদের কড়া বার্তা দেন।

jagonews24

এলাকাবাসী ও সংশ্লিষ্ট পরিবার জানায়, দীর্ঘদিন ধরেই বিদ্যুতের খুঁটি বসানোর দাবি জানানো হলেও কোনো গুরুত্ব দেয়নি সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার ও কর্মকর্তারা। তবে পত্রিকায় খবর প্রকাশের দুই দিন পর বিদ্যুৎ অফিস থেকে বড় অফিসারেরা ছুটে আসেন।

মেগচামী ১ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা মিজান শেখ জাগো নিউজকে বলেন, কয়েকদিন আগে বিদ্যুৎ অফিস থেকে কয়েকজন লোক আসেন লাইন দেখতে। আমাদের বাড়ির পাশে পরিদর্শন করেন এবং কথা বলেন। এরমধ্যে একজন বললো দ্রুত কাজ করেন নয়তো কারোরই চাকরির থাকবে না।

মেগচামী গ্রামের আরেক বাসিন্দা বাদশা মিয়া জাগো নিউজকে বলেন, আমরা খুব ভয়ংকর অবস্থার মধ্যে ছিলাম। যেকোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারতো। জাগো নিউজ ও সাংবাদিকদের ধন্যবাদ জানাই। তারা এই বিদ্যুতের সমস্যার নিউজ করায় দ্রুতই বিদ্যুতের লাইনের সমাধান হলো। বুধবার (১৩ এপ্রিল) কাজ সম্পন্ন করা হয়।

এ ব্যাপারে স্থানীয় বাসিন্দা ও সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য (মেম্বার) মো. সুইট মিয়া জাগো নিউজকে বলেন, এই এলাকায় বিদ্যুতের খুঁটি না থাকায় অত্র এলাকার মানুষ খুব বিপদ ও ঝুঁকির মধ্যে ছিল। এজন্য আমি ধন্যবাদ জানাই যারা এই বিষয় নিয়ে সংবাদ প্রচার করেছেন তাদেরকে।

এ ব্যপারে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার সজল শেখ জাগো নিউজকে বলেন, আমাকে ৩ এপ্রিল জানানো হয় এবং নির্দেশনা দেওয়া হয়। ৪ এপ্রিল কাজ শুরু করে ২৩টি খুঁটি স্থাপন করেছি ৬ দিন ধরে। প্রতিদিন আমাদের ৮ জন শ্রমিক দিয়ে কাজ করে কাজটি সম্পন্ন করেছি।

এ বিষয়ে রাজবাড়ী অফিসের ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (ওজোপাডিকো) নির্বাহী প্রকৌশলী আমিনুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, এতোদিন আমি ওই এলাকার বিদ্যুতের লাইন দেখিনি। তবে জাগো নিউজে সংবাদ প্রকাশের মাধ্যমে জানতে পেরে আমি দ্রুত কাজটি সম্পন্ন করার নির্দেশ দিই।

এন কে বি নয়ন/এফএ/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।