রাজশাহীতে সাড়া ফেলেছে কাঁচা আমের জিলাপি

ফয়সাল আহমেদ ফয়সাল আহমেদ , রাজশাহী
প্রকাশিত: ০৭:১৮ পিএম, ১০ এপ্রিল ২০২২
সবুজ রঙের কাঁচা আমের জিলাপির স্বাদ নিতে প্রতিদিন ক্রেতাদের ভিড় বাড়ছে

বাংলাদেশে রমজান মাসে ইফতারিতে একটি জনপ্রিয় খাবার জিলাপি। অঞ্চলভেদে এর স্বাদ ও প্রস্তুত প্রণালিতে রয়েছে ভিন্নতা। যেমন পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী শাহী জিলাপি, ময়মনসিংহের জগৎবিখ্যাত চিকন জিলাপি ও রাজশাহীর ঐতিহ্যবাসী বাটার মোড়ের জিলাপি বেশ জনপ্রিয়। তবে গতানুগতিক এসব জিলাপির থেকে সম্পূর্ণ আলাদা ও ভিন্ন স্বাদের কাঁচা আমের জিলাপি তৈরি করে সাড়া ফেলেছে রাজশাহীর রসগোল্লা নামের একটি মিষ্টির দোকান।

জানতে চাইলে কাঁচা আমের সবুজ রঙের জিলাপির কারিগর মাসুম আলী জাগো নিউজকে বলেন, ‘জিলাপি তৈরির উপকরণ হিসেবে গম ও চালের আটার সঙ্গে কাঁচা আম ব্লেন্ড করে যুক্ত করা হয়। কাঁচা আমের ঘ্রাণ যেন মানুষ পায় সেজন্য সামান্য ম্যাংগো ফ্লেভার মেশানো হচ্ছে। চিনির সিরার মধ্যে দেওয়া হচ্ছে ফুড গ্রেডের সবুজ রং। মচমচে জিলাপি তৈরির পরপরই তা ডোবানো হয় রংমিশ্রিত সিরার সঙ্গে। এতে জিলাপিটা দেখতে বেশ আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে।’

jagonews24

শুধু কাঁচা আমের জিলাপিই নয়, মাসকলাই আটার জিলাপিও মিলছে রসগোল্লায়। বিশেষ এই জিলাপি চিনির রসের পরিবর্তে ডোবানো হচ্ছে খেজুরগুড়ের রসে। এছাড়া রয়েছে পোলাওয়ের চালের আটার রেশমি জিলাপি। তবে ইফতারে ব্যতিক্রমধর্মী এ কাঁচা আমের জিলাপি নিতেই মানুষ ভিড় জমাচ্ছেন বলে জানালেন কারিগর মাসুম আলী।

রসগোল্লায় জিলাপিসহ অন্যান্য মিষ্টিজাত পণ্যের বিক্রির দায়িত্বে ছিলেন মনিরুজ্জামান ইশা। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, রোজার প্রথমদিন থেকেই রসগোল্লায় যোগ হয়েছে জিলাপির আইটেম। প্রথমদিকে মাসকলাই ও রেশমি জিলাপি থাকলেও শুক্রবার (৮ এপ্রিল) থেকে শুরু হয় কাঁচা আমের জিলাপি বিক্রি। প্রথমদিকে তেমন কোনো ধারণা ছিল না কত কেজি বিক্রি হয়েছে। তবে শনিবার (৯ এপ্রিল) শুধু কাঁচা আমের জিলাপিই বিক্রি হয়েছে প্রায় ৭০ থেকে ৮০ কেজি।

jagonews24

রসগোল্লায় প্রতি কেজি কাঁচা আমের জিলাপি ২৫০ টাকা, মাসকলাইয়ের জিলাপি ২০০ টাকা এবং রেশমি জিলাপি ২২০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। তবে দাম বেশি হলেও ক্রেতারা কাঁচা আমের জিলাপিই বেশি কিনছেন।

আসরের নামাজ শেষ হতে না হতেই উপশহর নিউমার্কেটের রসগোল্লার বিক্রয়কেন্দ্রে দেখা যায় ক্রেতাদের ভিড়। ইফতারের তখন অনেক দেরি। তবুও ক্রেতারা নিত্যপণ্যের বাজার ও ইফতারের অন্যান্য অনুষঙ্গ কিনে ফেরার পথে কাঁচা আমের জিলাপি নিতে ভিড় জমাচ্ছেন রসগোল্লায়। তবে এ দোকানের বেশিরভাগ ক্রেতাই নতুন।

ঘাড়ে ব্যাগ ও হাতে ইফতারের অনুষঙ্গ নিয়ে রসগোল্লায় এসেছেন মো. আবু সাঈদ। জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কাঁচা আমের জিলাপিটা আসলে আমার কাছে নতুনত্ব ও ব্যতিক্রম মনে হয়েছে। যে কারণে আমি এটি নিচ্ছি। তবে দেখেই মনে হচ্ছে স্বাদ ভালোই হবে।’

jagonews24

আধাকেজি করে কাঁচা আম ও মাসকলাইয়ের জিলাপি নিয়েছেন গোলাম সাকলাইন। রাজশাহীর স্থানীয় বাসিন্দা তিনি। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘মাসকলাইয়ের জিলাপি খেয়েছি কিন্তু কাঁচা আমেরটা খাওয়া হয়নি। বলা যায় অনেকটা কৌতূহলবশত এই জিলাপি নিয়েছি। তবে এর নামের সঙ্গে স্বাদের কেমন সম্পর্ক থাকবে তা খেলেই বোঝা যাবে। তবে আমার মনে হচ্ছে মন্দ হবে না।’

ভিন্নতা ও নতুনত্ব দিয়ে রাজশাহী মহানগরীতে রসগোল্লা নামের মিষ্টির দোকান শুরু করেছিলেন উদ্যোক্তা আরাফাত রুবেল। আম, মরিচ, নারিকেলসহ নানান ধরনের ব্যতিক্রমী মিষ্টি তৈরি করে রীতিমতো সাড়া ফেলেছেন। সফলতাও পেয়েছেন তিনি। এবার রোজায় এনেছেন কাঁচা আমের জিলাপি।

jagonews24

আরাফাত রুবেল জাগো নিউজকে বলেন, ‘রোজার আগে ভেবেছিলাম ব্যতিক্রমধর্মী কিছু একটা করার। সেই ভাবনা থেকেই রোজা উপলক্ষে রসগোল্লাতে এবার কাঁচা আমের জিলাপি ও মাসকলাইয়ের জিলাপি যুক্ত করেছি। সবাই সনাতন টাইপের মিষ্টিজাত জিনিস তৈরি করেন, কিন্তু আমি যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে একটু ভিন্ন ধরনের জিনিস তৈরি করার চেষ্টা করেছি। বেশ সফল হয়েছি।’

তিনি বলেন, মৌসুমের শুরুতে গাছ থেকে প্রচুর পরিমাণে গুটি আম ঝরে পড়ে। সেগুলো জিলাপিতে ব্যবহার করেছি। এতে জিলাপি খেতেও বেশ সুস্বাদু হয়েছে এবং কৃষকও কিছুটা লাভবান হচ্ছেন।

ফয়সাল আহমেদ/এসআর/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।