গাছ-বাঁশ পেঁচিয়ে ১০ বছর ধরে চলছে বিদ্যুৎ সংযোগ
ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলার মেগচামী গ্রামে গাছ ও বাঁশে তার পেঁচিয়ে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়েছে। এতে জীবনের ঝুঁকিতে রয়েছেন ওই এলাকার কয়েকশ মানুষ।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরেই বিদ্যুতের খুঁটি বসানোর দাবি জানিয়ে আসছেন তারা। কিন্তু কাজের কাজ হয়নি কিছুই। কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। ফলে যে কোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা করছেন এলাকাবাসী।
সরেজমিনে দেখা গেছে, উপজেলার মেগচামী ১ নম্বর ওয়ার্ডের মধ্যপাড়া খানবাড়ী থেকে মধ্যপাড়া গোরস্থান মডেল বাজার এলাকায় গাছ ও বাঁশঝাড়ের মধ্য দিয়ে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়েছে ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (ওজোপাডিকো) রাজবাড়ী অফিস। বৈদ্যুতিক খুঁটি না বসিয়ে বাঁশ ও গাছের ডাল ব্যবহার করে বিদ্যুতের তার টানিয়ে দেওয়া হয়েছে। অনেক জায়গায় তারের ভারে বাঁশগুলো হেলে পড়েছে। কোথাও বা হেলে থাকা বাঁশ আরও একটা বাঁশ দিয়ে ঠেকনা দেওয়া হয়েছে।
রাস্তার আশেপাশের মেহগনি গাছের সঙ্গেও বিদ্যুতের তার পেচানো। রয়েছে বিদ্যুৎ সংযোগ। কোথাও তারে লতাপাতা জড়িয়ে বৈদ্যুতিক তারগুলোকে আরও ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় ফেলেছে। এক কিলোমিটারের কিছু বেশি রাস্তা জুড়ে বসানো বাঁশের খুঁটিতে ভরসা করেই প্রায় ১০০ বাড়িতে বিদ্যুতের সংযোগ দেওয়া হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ওই এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যুতের খুঁটির জন্য চেষ্টা করছিলেন ওই এলাকার বাসিন্দারা। কিন্তু খুঁটির ব্যবস্থা না করে কর্তৃপক্ষ বাঁশ বসিয়ে সংযোগ দিয়েছে। গত দশ-বারো বছর ধরে এভাবেই চলছে।
এ বিষয়ে মেগচামী এলাকার বাসিন্দা মো. বাদশা মিয়া জাগো নিউজকে বলেন, আমার বাড়ির সামনে একটি সিমেন্টের খুঁটি ছিল সেটি ভেঙে যাওয়ার পর অফিসের লোক এসে মেহগনি গাছের সঙ্গে বিদ্যুতের তার পেঁচিয়ে রেখেছে। আমরা খুঁটি লাগাতে বলছি কিন্তু কর্তৃপক্ষ অপেক্ষা করতে বলছে। কিন্তু আজও হয়নি। গত প্রায় দশ-বার বছর এভাবেই চলছে।
ওই এলাকার শাহিন খন্দকার, এরশাদ খন্দকার, রাজিবুল হাসান ও সাব্বির খানসহ একাধিক ব্যক্তি জাগো নিউজকে বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ জেনেও নিরুপায় হয়ে এভাবে ঝুঁকি নিয়েই বিদ্যুৎ ব্যবহার করতে হচ্ছে। যে কোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটার আগেই এই সংযোগগুলোর নিরাপদ ব্যবস্থা প্রয়োজন। অফিসের লোকজন বিদ্যুতের মিটার দেখে বিল দেয় না। তারা অফিসে বসে থেকে মনগড়া বিল তৈরি করে দেয়। এসব নিয়ে অভিযোগ করতে করতে আমরা নিজেরাই বিরক্ত হয়ে গেছি।
ওই এলাকার শাহিন খন্দকারের স্ত্রী স্বপ্না বেগম জাগো নিউজকে বলেন, মিটারের একটি তার কয়েকদিন আগে খুলে গিয়েছিল। অফিসে ফোন দিলে বলে আবেদন করতে হবে, ৫৭০ টাকা লাগবে। জিয়া খান নামে একজন এসে ১৫০০ টাকা নিয়ে তার লাগিয়ে দিয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিদ্যুৎ বিভাগের একজন কর্মকর্তা বলেন, ১০০ গজের বেশি দূরত্বে সার্ভিস লাইন দেওয়ার কোনো নিয়ম নেই। ১০০ গজের অতিরিক্ত দূরত্ব হলে অবশ্যই খুঁটি দিতে হবে, অন্যথায় সংযোগ দেওয়া যাবে না। অথচ এ এলাকায় ২০৩ মিটারের বেশি দূরে গিয়ে খুঁটি বসানো হয়েছে। মাঝের জায়গাগুলোতে বসানো হয়েছে বাঁশের খুঁটি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ওজোপাডিকো রাজবাড়ী অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলী আমিনুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমার এ বিষয়ে কিছু জানা নেই। তবে ওই এলাকায় গিয়ে খোঁজ নিয়ে সমাধান করবো।’
এন কে বি নয়ন/এসজে/এএসএম