বাড়ি থেকে সন্তানদের জন্য গরুর দুধ আর আনা হলো না ডা. বুলবুলের
মাঝে মধ্যেই ঢাকা থেকে রংপুরে মায়ের কাছে টাকা পাঠাতেন চিকিৎসক আহমেদ মাহি বুলবুল (৩৪)। সেই টাকায় তার সন্তানদের জন্য দুধ কিনে ঢাকায় পাঠানো হতো। শনিবার(২৬ মার্চ) রাত সাড়ে দশটার দিকে মায়ের কাছে দুই হাজার টাকা পাঠিয়েছিলেন। দু‘একদিনের মধ্যে বাড়িতে এসে গরুর দুধ নিয়ে যেতেন। কিন্তু তা আর হলো না।
রোববার (২৭ মার্চ) ভোরে দুর্বৃত্তদের হামলায় মারা যান গরিবের ডাক্তার খ্যাত আহমেদ মাহী বুলবুল। বুলবুলের বাড়ি রংপুর নগরীর ভগিবালা পাড়ায়।
বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সামাদ সেনাবাহিনীর সদস্য ছিলেন। চাকরি করাকালীন ১৯৯৯ সালে মারা যান। দুই ভাই ও এক বোনের মধ্যে সবার বড় ছিলেন বুলবুল। ১৯৯৭ সালে রংপুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি ও রংপুর ক্যান্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করে ঢাকার মগবাজারে একটি বেসরকারি ডেন্টাল কলেজে ভর্তি হন। সেখান থেকে পড়াশোনা শেষ করে প্র্যাকটিস শুরু করেন।
দিনাজপুরে বিয়ে করে স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে শেওড়াপাড়ায় বাসা ভাড়া নিয়ে থাকতেন। দেড় বছর বয়সী ছেলে ও সাত বছরের মেয়ে রয়েছে বুলবুলের।
কী কারণে বা কেন এ হত্যাকাণ্ডের শিকার বুলবুল তা বুঝে উঠতে পারছেন না স্বজনরা।

প্রতিবেশী সালমা বেগম বলেন, ছেলেটা খুব ভদ্র ছিল। কোনো ঝামেলায় জড়াতে দেখিনি। মাঝে মধ্যেই বেড়াতে আসতো।
বুলবুলের ছোট ভাই বকুল বলেন, সকাল বেলা মুঠোফোনে খবর পাই ভাইকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়েছে। ভাইয়ের সঙ্গে কারো কোনো বিরোধ ছিল না। কেন তাকে হত্যা করা হয়েছে তা বুঝে উঠতে পারছি না। যারাই এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত তাদেরকে আইনের আওতায় আনার দাবি জানান বকুল।
ছোট বোন লাভলী সামাদ বলেন, পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন বড় ভাই বুলবুল। চিকিৎসা পেশার পাশাপাশি ঠিকাদারি করতেন। ঠিকাদারি কাজে আজ নোয়াখালী যাওয়ার কথা ছিল। এখন ভাই নেই। দুই শিশু সন্তানসহ পরিবারের সদস্যরা কীভাবে দিন পাড়ি দেবেন?
বুলবুলের মা বুলবুলি বেগম বলেন, গতকাল রাতেও বিকাশে দুই হাজার টাকা পাঠিয়ে গরুর দুধ কিনে রাখতে বলেছিল বুলবুল। দুই একদিনের মধ্যেই বাড়িতে আসার কথা ছিল। বাড়িতে এসে সেই দুধ নিয়ে যেত। কিন্তু তা আর হলো না। ছেলের খুনি যেই হোক তাকে গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন বুলবুলি।
এফএ/জেআইএম