শত বছর ধরে গ্রামবাসীর জীবন চলে বিন্নি ধানের খৈ ভেজে
অডিও শুনুন
নেই কাজ, তো খৈ ভাজ! প্রাচীন প্রবাদ। তবে কিশোরগঞ্জের দাসের গাঁওয়ে যেন এ প্রবাদ অচল। বিন্নি ধানের খৈ ভাজার নান্দনিক ছন্দে মিশে আছে এ গ্রামের মানুষের জীবন-জীবিকা।
গ্রাম-বাংলার কৃষ্টি আর ঐতিহ্যের সঙ্গে মিশে আছে বিন্নি ধানের খৈ। গ্রামীণ মেলায় এই খৈ এর যেন বিকল্প নেই। শত বছর ধরে বংশ পরম্পরায় উন্নত মানের বিন্নি ধানের খৈ তৈরি করছে কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলার দাশের গাঁও গ্রামের শতাধিত পরিবার। গ্রামের মানুষের প্রধান পেশা বিন্নি ধানের খৈ ভাজা। এখানকার খৈ যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন স্থানে। খৈ ভেজেই চলে গ্রামবাসীর ভরণ-পোষণ। এ পেশাই সমৃদ্ধি এনে দিয়েছে গ্রামের দরিদ্র মানুষকে।
উপজেলার বনগ্রাম ইউনিয়নের পাখিডাকা ও ছায়াঢাকা সুনিবিড় এ পল্লীর মেঠো পথ ধরে ভেতরে প্রবেশ করলেই চোখে পড়বে গ্রামবাসীর এক ভিন্ন রকম কর্মতৎপরতা। পল্লীর পরতে পরতে মিশে আছে বিন্নি ধান আর ধান থেকে তৈরি খৈ এর গন্ধ। প্রতিটি বাড়িতে চোখে পড়বে বিন্নি ধানের খৈ ভাজার নানা আয়োজন
দাসের গাঁও গ্রামের ৮০ ভাগ মানুষের পেশাই খৈ ভাজা ও বিক্রি। প্রতিটি বাড়িতে জ্বলন্ত চুলায় গরম বালুতে বিন্নি ধানের চাল থেকে খৈ ভাজছেন নারীরা। বড়দের কাজে হাত লাগাচ্ছে শিশুরাও।
প্রায় ১২০ বছর ধরে গ্রামের মানুষ বংশ পরম্পরায় জড়িত এ পেশায়। জেলার বড় বড় গ্রামীণ মেলা ছাড়াও এখানকার বিন্নি ধানের খৈ যাচ্ছে দেশের নানা স্থানে। খৈ ভেজেই দিন বদলেছে অনেকের। তবে চলমান করোনা পরিস্থিতিতে মেলা বন্ধ থাকায় কিছুটা দূরাবস্থায় পড়তে হচ্ছে গ্রামবাসীকে।
দাসের গাঁওয়ের প্রতিটি পরিবার দৈনিক এক মণ করে খৈ ভাজতে পারে। বাজারে প্রতিমণ খৈ বিক্রি হচ্ছে ১৪ হাজার টাকায়। প্রতি মৌসুমে এ গ্রাম থেকে বিক্রি হয় ১৫ থেকে ১৮ কোটি টাকার খৈ।
গ্রামের কারিগর জয়নাল মিয়া বলেন, আমার বাপ-দাদারা খৈ ভেজে সংসার চালাতেন। আমরাও এ পেশায় জড়িত ৫০ বছর ধরে।
গৃহবধূ মনিরা বলেন, বিয়ের পর শাশুড়িকে খৈ ভাজতে দেখেছি। এখন আমিও ভালো খৈ ভাজতে পারি। এতে পরিশ্রম হলেও ভালো লাভ হয়।
কার্তিক থেকে চৈত্র মাস পর্যন্ত মেলার মৌসুমে খৈ ভাজার ধুম পড়ে। দেশের নানা এলাকা থেকে পাইকাররা এখানে আসেন খৈ কিনতে। নিজেদের জমিতে উৎপাদিত বিন্নি ধান থেকে চাল করে সেই চালে তৈরি হয় খৈ।
ক্রেতা-বিক্রেতারা জানান, উন্নত মানের এই বিন্নি খৈ এর কদর সবখানেই অনেক বেশি। তবে পুঁজির অভাবে অনেক কারিগর স্বাচ্ছন্দ্যে এ পেশা চালাতে পারছেন না।
কটিয়াদী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মুশতাকুর রহমান বলেন, এটি আমাদের এলাকার একটি পুরোনো ঐতিহ্য। আমরা এ শিল্পের সঙ্গে জড়িতদের সহজ শর্তে ব্যাংক ঋণসহ সব ধরনের সহযোগিতা দেওয়ার চেষ্টা করছি।
এফএ/এএসএম