বিআইডব্লিউটিএ নাটক করছে: লঞ্চ মালিক সমিতি
শীতলক্ষ্যা নদীতে যে পাঁচটি লঞ্চডুবির ঘটনা ঘটেছে তাতে প্রথমে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) কর্মকর্তা বাদী হয়ে মামলা করেছেন। প্রতিটি মামলাতেই জাহাজের মালিকপক্ষকে বাদ দেওয়া হয়েছে। এতে তারা ম্যানেজ মামলা করেছেন বলে দাবি করেছেন বাংলাদেশ লঞ্চ মালিক সমিতি নারায়ণগঞ্জ জেলা শাখার সভাপতি বদিউজ্জামান বাদল।
সোমবার (২১ মার্চ) দুপুরে লঞ্চ টার্মিনালে নিজস্ব কার্যালয়ে বাংলাদেশ লঞ্চ মালিক সমিতি আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ দাবি করেন।
নারায়ণগঞ্জ থেকে লঞ্চ চলাচল বন্ধের নির্দেশনা দেওয়ার প্রতিবাদে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
বদিউজ্জামান বাদল বলেন, ‘শীতলক্ষ্যা নদীতে দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ হচ্ছে নদীর প্রশস্ততা কমে যাওয়া এবং নদীর উভয় তীরে গড়ে ওঠা অসংখ্য কল-কারখানার জাহাজগুলোর এলোপাতাড়ি পার্কিং। শীতলক্ষ্যা নদী দিয়ে বালুবাহী বাল্কহেড চলাচলও অনেক বেড়েছে। কিন্তু নদীতে ট্রাফিক কন্ট্রোল চালু হয়নি। যেকোনো দুর্ঘটনা ঘটলেই সব দোষ শুধুমাত্র লঞ্চ চালক, শ্রমিক ও মালিকদের ওপর চাপানো হয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘যাদের ধাক্কা দিয়ে ডুবিয়ে দেওয়া হয়েছে সেসব লঞ্চ মালিকপক্ষকেও আসামি করা হয়েছে। আমরা মামলা করতে চাইলেও আমাদের মামলা নেওয়া হয়নি। সোমবার সকালেও ডুবে যাওয়া লঞ্চটির মালিক দিল মোহাম্মদের ছেলে মো. আল ইসলাম বন্দর থানায় মামলা করতে গেলে তার মামলার আবেদন পুলিশ গ্রহণ করেনি। এতে মনে হচ্ছে বিআইডব্লিউটিএ নাটক করছে।’
‘গেল বছরেও লঞ্চডুবির ঘটনায় বিআইডব্লিউটিএ মামলা করলেও সেই মামলা কিন্তু আপস পর্যায়ে চলে গেছে। কার্গো জাহাজটি যদি ব্রেক করতো অর্থাৎ স্পিড কম করতো তাহলে লঞ্চটি ডুবতো না। আমাদের লঞ্চগুলোর শতভাগ ফিটনেস ছিল। ফিটনেস ছাড়া কোনো লঞ্চ চলাচলের অনুমতি নেই’, যোগ করেন লঞ্চ মালিক সমিতির এ নেতা।
এক প্রশ্নের জবাবে বদিউজ্জামান বাদল বলেন, ‘আগে কাঠের বডিগুলো পাল্টে স্টিলের বডি করা হয়েছে। তবে আমাদের সরকারের কোনো সংস্থা সহযোগিতা করেনি। সরকারের তরফ থেকে সহযোগিতা পেলে আমরাও লঞ্চগুলোকে আধুনিক করতে চাই। কিন্তু আমাদের কোনো ধরনের নির্দেশনা না দিয়ে আকস্মিক বলপূর্বক সব ধরনের লঞ্চ চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা চাই নদীতে পণ্যবাহী জাহাজ, বাল্কহেড ও যাত্রীবাহী লঞ্চ চলাচলের জন্য রিভার ট্র্যাক করা হোক। এর আগেও রিভার ট্র্যাকের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হলেও ওই পর্যন্তই। কোনো ধরনের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হয়নি।’
নারায়ণগঞ্জ থেকে সাতটি রুটে ৭০টি লঞ্চ চলাচল করে জানিয়ে বাদল বলেন, ‘এরমধ্যে দুটি রুট নাব্য সংকটে বন্ধ হয়ে গেছে। বাকি পাঁচটি রুট সচল ছিল। এসব লঞ্চের প্রতিটিতে আটজন করে পাঁচ শতাধিক শ্রমিক কর্মরত। লঞ্চ চলাচলের অনুমতি না দিলে এসব শ্রমিক বেকার হয়ে পড়বেন। এজন্য আমরা অতিদ্রুত লঞ্চ চলাচলের অনুমতি দাবি করছি। পাশাপাশি নারায়ণগঞ্জের লঞ্চগুলোকে আধুনিকায়নের জন্য সরকারের সহযোগিতা চাই।’
লঞ্চ মালিক পক্ষের মামলা না নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দীপক চন্দ্র সাহা জাগো নিউজকে বলেন, ‘এ-সংক্রান্ত একটি মামলা করেছে বিআইডব্লিউটিএ। তাদের (লঞ্চ মালিক পক্ষ) অভিযোগের বিষয়ে পূর্ণাঙ্গভাবে বিস্তারিত আছে। একই ঘটনায় একাধিক মামলা নেওয়া যায় না।’
সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ লঞ্চ মালিক সমিতি নারায়ণগঞ্জ জেলা শাখার সিনিয়র সহ-সভাপতি মনিরুজ্জামান রাজা, সহ-সভাপতি ওয়াহিদুজ্জামান দুদু, নুরুল আমিন কাজল, কার্যকরী সদস্য আলমগীর মিয়া, আবুল হোসেন, মোহাম্মদ হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
রোববার (২০ মার্চ) দুপুরে সিটি গ্রুপের মালিকানাধীন কার্গো জাহাজ এমভি রূপসী-৯-এর ধাক্কায় নারায়ণগঞ্জ-মুন্সিগঞ্জগামী আশরাফ উদ্দিন নামে লঞ্চটি ডুবে যায়। এ ঘটনায় শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত আটজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এখনো নিখোঁজ রয়েছেন চারজন।
এ ঘটনায় আটজনকে আসামি করে বিআইডব্লিউটিএর পক্ষ থেকে দুটি মামলা করা হয়েছে। একটি নৌ থানায়, আরেকটি সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্তরে। মামলা দুটির বাদী হয়েছেন নৌ নিরাপত্তা উপ-পরিচালক বাবু লাল বৌদ্ধ।
মোবাশ্বির শ্রাবণ/এসআর/এমএস