ঝিনুকে মিটছে প্রোটিনের চাহিদা
দিনাজপুরের কাহারোল উপজেলার রামচন্দ্রপুর ইউনিয়নের পাশ ঘেঁষে বয়ে যাওয়া ঢেপা নদীর পানিতে কিছু মানুষ ডুবছে আর উঠছে। কাছে গিয়ে বোঝা গেলো তারা নদী থেকে ঝিনুক সংগ্রহ করছেন। আদিবাসী, ক্ষত্রিয় এবং জেলে সম্প্রদায়ের লোকজনই এর মধ্যে বেশি।
ঝিনুক সংগ্রহকারীরা সকলেই নদীর পার্শ্ববর্তী ঈশানপুর, পরমেশ্বরপুর, নয়াবাদ গ্রামের বাসিন্দা। প্রতিদিনই নদীতে ঝিনুক তুলতে আসেন তারা। নদীর পানিতে ডুব দিয়ে ঝিনুক সংগ্রহ করেন। এসব ঝিনুক বাড়িতে নিয়ে কেউ রান্না করে খান আবার অনেকে বিক্রিও করেন। এই ঝিনুক দিয়ে প্রোটিনের চাহিদা পূরণের পাশাপাশি অনেকে বাড়তি আয়ও করেন।
স্থানীয়দের মতে, এই ঝিনুক রান্না করে খেলে মাংসের মতো স্বাদ পাওয়া যায়। আর উপকার হিসেবে চোখের জ্যোতি ঠিক থাকে।
তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, ঝিনুক শুধু চোখের জ্যোতিই ঠিক রাখে না, এটি প্রোটিনের একটি ভালো উৎস। তাছাড়া অ্যাজমা ও উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণেও সহায়তা করে ঝিনুক। ঝিনুক থেকে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনও সম্ভব বলে জানিয়েছেন গবেষকরা। রয়েছে ক্যালসিয়াম, জিঙ্ক এবং আয়রনের মতো মিনারেলস।
দিনাজপুরে শীতের প্রকোপ শেষে প্রচণ্ড গরম শুরু হয়েছে। তাপমাত্রা ৩০ থেকে ৩২ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে ওঠানামা করছে। গরমে নদীতে গোসল করা এই জেলার বহুল প্রচলিত দৃশ্য। এখন নদীতে গোসলে নেমে ঝিনুক আহরণে ঝুকছেন অনেকে। এর মধ্যে নদীর আশপাশের এলাকার মানুষই বেশি।
এই নদীতে যারা ঝিনুক সংগ্রহ করছেন তাদের মধ্যে একজন কাহারোল উপজেলার রামচন্দ্রপুর ইউনিয়নের ঈশানপুর এলাকার ক্ষুদ্র নৃ-তাত্ত্বিক গোষ্ঠীর লদীকি টুডু। সকাল ৯টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত ৪ কেজি ঝিনুক সংগ্রহ করতে পেরেছেন।
তিনি বলেন, এই নদীতে প্রতি বছরই ঝিনুক মারি। ঝিনুক সিদ্ধ করে খোলস খুলি। ভেতরে মাংসের মতো পাই, সেটা রান্না করে খাই। এসব খেলে চোখের জ্যোতি ঠিক থাকে।
৫নং সুন্দরপুর ইউনিয়নের পরমেশ্বরপুর এলাকার কৃষ্ণা রানী বলেন, ঝিনুক মেরে কেউ কেউ হাঁস-মুরগিকে খাওয়ায়। আবার নিজেরাও খায়। আমরা নিজেরাই খাই। এই ঝিনুক আবার অনেকে বিক্রি করে। আমরা জানি এতে পুষ্টি হয়। চোখের জ্যোতি বাড়ে। আর খেতেও ভালো লাগে। একদম খাসির মাংসের মতো স্বাদ। প্রতিকেজি ৭০ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হয়।
নয়াবাদ এলাকার সিলু দাস নামে এক জেলে বলেন, নদীতে পানি কমে গেছে। এখন এই ঝিনুক পাওয়া যাবে। কয়েকদিন পর বৃষ্টি হলে নদীতে পানি বাড়বে, তখন আর ঝিনুক পাওয়া যাবে না। ৪-৫ ঘণ্টা নদীতে থাকলে প্রায় আধা মণ (২০ কেজি) ঝিনুক পাওয়া যায়। আমি শুধু না, আমার মতো প্রায় ১৫ হতে ২০ জন জেলে এই ঝিনুক মারে। ৬০ থেকে ৭০ টাকায় বিক্রি হয়। এগুলো মারছি বিক্রি করার জন্য। যখন কাজ-কাম থাকে না তখন ঝিনুক মারি।
এ বিষয়ে দিনাজপুর হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফুড প্রসেসিং এবং প্রিজারভেশন অনুষদের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মারুফ আহম্মেদ বলেন, বর্তমান সময়ে বাংলাদেশে বিভিন্ন জনগোষ্ঠী যারা শামুক-ঝিনুক খাচ্ছেন সত্যিকার অর্থেই তাদের প্রোটিনের ঘাটতি পূরণ হচ্ছে। কারণ শামুক অথবা ঝিনুক প্রোটিনের একটি ভালো সোর্স (উৎস)। এই শামুক-ঝিনুক প্রোটিনের পাশাপাশি মিনারেলের একটি ভালো সোর্স। এতে বিশেষ করে ক্যালসিয়াম, জিঙ্ক এবং আয়রন প্রচুর পরিমাণে রয়েছে। শামুক-ঝিনুকে কোলেস্টেরলের পরিমাণ খুবই কম। এটি হাই ব্লাডপ্রেসার ও অ্যাজমা কমাতে পারে।
শামুক-ঝিনুক কেবল বাংলাদেশের মানুষই নয়, বহির্বিশ্বে যেমন- জাপান, কোরিয়া, চায়না ইত্যাদি দেশগুলোতেও খায়। এটি স্যুপ আকারে ও শুকিয়ে খাওয়া যায়। এই দেশে শামুক- ঝিনুক চাষ করলে বৈদিশেকি মুদ্রা অর্জনেরও সম্ভবনা রয়েছে বলে মনে করেন তিনি।
এফএ/জেআইএম