জামালপুর প্রশাসনে নারীর জয়জয়কার

জামালপুর জেলার সর্বোচ্চ প্রশাসনিক কর্মকর্তাসহ বকশীগঞ্জ, দেওয়ানগঞ্জ ও সরিষাবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নারী। এছাড়া স্থানীয় সরকারের উপ-পরিচালক পদেও রয়েছেন একজন নারী। সব প্রতিকূলতার মাঝেও পুরুষের পাশাপাশি জেলার আর্থসামাজিক উন্নয়নে অবদান রেখে চলেছেন তারা। একসময় সামাজিক প্রতিবন্ধকতার মাধ্যমে নারীদের আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে রাখা হতো। আজ সমাজের সবক্ষেত্রেই নারীর অংশগ্রহণ প্রমাণ করে তাদের অগ্রযাত্রার কথা। বিষয়টিকে নারী ক্ষমতায়নের ইতিবাচক দিক হিসেবে দেখছেন সংশ্লিষ্টরা।
জেলা প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্র জানায়, জামালপুর ময়মনসিংহ বিভাগের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল। ১৯৮০ সালের ১ মে এ জেলার প্রশাসনিক কার্যক্রম শুরু হয়। এর আগে ১৯৭৮ সালের ২৬ ডিসেম্বর সাতটি উপজেলা নিয়ে জামালপুরকে দেশের ২০তম জেলা হিসেবে ঘোষণা করা হয়। জেলার উত্তরে ভারতের মেঘালয় রাজ্য ও গারো পাহাড়, কুড়িগ্রাম জেলা, পূর্বে শেরপুর ও ময়মনসিংহ জেলা, দক্ষিণে টাঙ্গাইল এবং পশ্চিমে যমুনা নদীর তীরবর্তী সিরাজগঞ্জ, বগুড়া, গাইবান্ধা ও কুড়িগ্রাম জেলা।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাংলাদেশ এখন বিশ্বের উন্নয়নের রোল মডেল। তথ্যপ্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে দুর্বার গতিতে এগিয়ে চলছে দেশ। আমাদের জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক নারী। তাই সমাজের সবক্ষেত্রে সুষম উন্নয়নের জন্য প্রয়োজন সবখানে নারীদের সমান অংশগ্রহণ। এক্ষেত্রে সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের কারণে মাঠপর্যায়ে নারী কর্মকর্তার সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলছে। উপযুক্ত পরিবেশ পেলে ভবিষ্যতে সব বিভাগেই নারীদের অংশগ্রহণ আরও ত্বরান্বিত হবে বলেও মনে করেন তারা।
গত ৮ মার্চ ছিল আন্তর্জাতিক নারী দিবস। দিবসটি উপলক্ষে প্রশাসনে নারীদের বিভিন্ন দিক নিয়ে জাগো নিউজের সঙ্গে কথা বলেছেন জেলা প্রশাসনে কর্মরত নারী কর্মকর্তারা।
প্রশাসনে নারীর অবস্থান মূল্যায়নের বিষয়ে প্রথমেই জানতে চাওয়া হয়েছিল বকশীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুনমুন জাহানের কাছে। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, বর্তমানে প্রশাসন থেকে শুরু করে প্রত্যেকটা সেক্টরে নারীদের অংশগ্রহণ বাড়ছে। জামালপুরের জেলা প্রশাসকও একজন নারী। ডিডিএলজি যিনি উপ-সচিব পদমর্যাদায় রয়েছেন তিনিও একজন নারী। এছাড়া বর্তমান প্রধানমন্ত্রী উনিও একজন নারী। উনি যেভাবে নারীদের ক্ষমতায়নে কাজ করছেন, যার জন্য আমরা সব প্রতিকূলতার মাঝেও কাজ করতে পারছি। তবে আমাদের সমাজে এখনো অনেক নারী রয়েছেন, যারা উপযুক্ত পরিবেশের অভাবে পিছিয়ে। উপযুক্ত পরিবেশ পেলে তারাও গুরুত্বপূর্ণ পদে আসতে পারবে বলে মনে করেন তিনি।
প্রশাসনে নারীদের হয়রানির প্রতিকার বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়েছিল দেওয়ানগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কামরুন্নাহার শেফার কাছে। তিনি বলেন, কর্মক্ষেত্রে যেসব পুরুষ সহকর্মী রয়েছেন তাদের মানসিকতার পরিবর্তন হলেই হয়রানি বন্ধ হতে পারে। কাজ করতে গিয়ে এ সমাজে নারীদের অনেক সময় তুচ্ছতাচ্ছিল্য হতে হয়। নারী হিসেবে ট্রিট (মূল্যায়ন) করা হয়, এমন মানসিকতার যখন পরিবর্তন ঘটবে তখনই নারীদের কাজের গতি ফিরে আসবে এবং হয়রানি বন্ধ হবে।
নারীরা প্রশাসনে কতটা সততার সঙ্গে প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে এগিয়ে চলেছেন বলে জানতে চাওয়া হয়েছিল সরিষাবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) উপমা ফারিসার কাছে। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, সততার বিষয়টি আমার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাই ভালো বলতে পারবেন। তবে নারীরা এখন আর কোনোক্ষেত্রেই পিছিয়ে নেই। সব ক্ষেত্রেই তারা তাদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করছেন।
প্রশাসনে নারীদের চ্যালেঞ্জ ও প্রতিবন্ধকতা কী, এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়েছিল সরিষাবাড়ী উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) ফাইযুল ওয়াসীমা নাহাতের কাছে। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, নারী হয়ে জন্ম নেওয়াটাই চ্যালেঞ্জ। মানুষ মনে করে নারী মানেই তারা কাজ করে না। যদিও নারীরা পুরুষের চেয়ে অনেকাংশে বেশি কাজ করে। তারপরও নারী হিসেবে তাদের এটাই শুনতে হয়; নারী তাদের ঘর-সংসার রেখে কর্মক্ষেত্রে সময় দিতে পারে না। কিন্তু আমি মনে করি, নারীরা তাদের পরিবার, ঘর-সংসার দেখে পুরুষের পাশাপাশি তার কর্মক্ষেত্রে সমানতালে বিচরণ করে। তাই তিনি মনে করেন, মানুষের মানসিকতা পরিবর্তন হলে সবক্ষেত্রেই নারীরা আরও এগিয়ে যাবে।
বিভিন্ন ক্ষেত্রে নারীরা এখনো পিছিয়ে থাকার কারণ হিসেবে জানতে চাওয়া হয়েছিল জামালপুর স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক (উপ-সচিব) দিলরুবা আহমেদের কাছে। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, নারীরা এখন আর কোনো সেক্টরে পিছিয়ে নেই। সব প্রতিকূলতা কাটিয়ে পুরুষের পাশাপাশি কাজ করছেন তারা। বরং পুরুষের চেয়ে নারীরা এখন বেশি এগিয়ে আছে বলেও তিনি মনে করেন।
প্রশাসনিক পর্যায়ে জামালপুর জেলায় নারীদের এমন অবস্থানের বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক (ডিসি) মুর্শেদা জামান জাগো নিউজকে বলেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে জামালপুর জেলায় প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে নারীরা কাজ করে যাচ্ছেন। আমি বলবো, পুরুষের পাশাপাশি নারীরা অত্যন্ত আন্তরিকতার সঙ্গে তাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করছেন। শুধু প্রশাসন নয়, দেশব্যাপী সর্বক্ষেত্রে আমি মনে করি, নারীদের ক্ষমতায়ন হয়েছে। জামালপুর জেলায় নকশীকাঁথার ব্যাপক সুনাম রয়েছে, এ কাঁথার সঙ্গে আমাদের নারীরাই সম্পৃক্ত বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
এমআরআর/এমএস