ঠাকুরগাঁওয়ের সেই মডেল মসজিদে জুমার নামাজে মুসল্লির ঢল

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি ঠাকুরগাঁও
প্রকাশিত: ০৯:৫১ এএম, ০৫ মার্চ ২০২২

ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুর উপজেলা চত্বরে উদ্বোধনের আট মাসের মাথায় ফাটল ধরা সেই মডেল মসজিদে প্রথমবারের মতো জুমার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়েছে। আতঙ্ক আর নানা জল্পনা কল্পনাকে পেছনে ফেলে জেলার প্রত্যেকটি উপজেলা থেকে দলে দলে মুসল্লিরা মসজিদটিতে নামাজ আদায় করতে আসেন। পুরুষদের পাশাপাশি মসজিদের তৃতীয় তলায় নামাজ আদায় করেছেন নারীরাও।

সরেজমিনে দেখা যায়, জুমার নামাজের আযানের আগ মুহূর্ত থেকে সাইকেল, মোটরসাইকেল, প্রাইভেটকারে করে জেলা ও উপজেলার বিভিন্ন প্রান্তের মুসল্লিরা দলে দলে আসছেন নামাজ আদায় করতে। মানুষের সমাগমে কানায় কানায় ভরে ওঠে মসজিদ প্রাঙ্গণ। উৎসবমুখোর পরিবেশে প্রথমবারের মতো কাঙ্ক্ষিত মডেল মসজিদটিতে জুম্মার নামাজ আদায় করেন মুসল্লিরা। এদিন মসজিদে নামাজ আদায় করতে দেখা গেছে জেলার উচ্চ পদস্থ সরকারি কর্মকর্তা ও রাজনৈতিক ব্যক্তিদেরও।

নামাজ আদায় শেষে স্থানীয় মুসল্লি মজিবর রহমান জানান, মসজিদটিতে ফাটলের বিষয়ে আতঙ্ক ছড়ানোটাই স্বাভাবিক। আমিও আতঙ্কিত ছিলাম। কিন্তু ইঞ্জিনিয়াররা যেভাবে পরিদর্শন করে মানুষকে সাহস যুগিয়েছেন সেই থেকে আর ভয় লাগছে না। আমরা গ্রামের সহজ সরল মানুষ। বিশ্বাস নিয়ে চলি। মসজিদটিতে সব সময় এমন মানুষ ভরপুর থাক। ইবাদত আদায় করুক। এটাই প্রত্যাশা করি।

মুনতাসিম রহমান বলেন, এত মানুষের সঙ্গে নামাজ আদায় করতে পেরে অনেক ভালো লাগছে। ইসলামি বয়ান, খুৎবাসহ সুরা কিরাত সবকিছু মিলিয়ে মনে হয়েছে অন্যরকম একটা পরিবেশে নামাজ আদায় করছি।

রিয়াদুল চৌধুরি বলেন, বৃহস্পতিবার জানতে পেরেছি হরিপুর মডেল মসজিদে জুম্মার নামাজ আদায় করা হবে। তাই সকাল থেকে মসজিদে আসার প্রস্তুতি নিয়েছিলাম আমরা পাড়ার সকল যুবক ছেলেরা। নামাজ আদায় করতে পেরে অনেক ভালো লাগছে। আশা করি পাঁচ ওয়াক্তই মসজিদটিতে এভাবে নামাজ আদায় করবেন মুসল্লিরা।

গণপূর্ত বিভাগের উপ বিভাগীয় প্রকৌশলী কে. এম নুরুল হাসান বলেন, মসজিদের ফাটলের যে বিষয়টি ছিল সেটি সামান্য ত্রুটি। আমি বারবার বলেছিলাম এটিতে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। আজ মসজিদে দুই হাজারের বেশি মানুষ নামাজ আদায় করেছেন। উৎসবমুখর পরিবেশে জুমার নামাজ আদায় করা হলো। খুব ভালো লাগছে যে মানুষ তাদের ভেতরের আতঙ্ককে জয় করে মসজিদে এসেছেন।

jagonews24

হস্তান্তরের আগে নামাজ আদায়ের কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার মসজিদটি পরিদর্শন করতে এসেছিলেন ধর্ম মন্ত্রণালয়ের উপসচিব আবুল কাসেম মোহাম্মদ শাহীন। তিনি সবকিছু তদন্ত করে দেখবেন। তিনিই অনুমতি দিয়েছিলেন যেন আজ জুমা থেকে মসজিদে নামাজ আদায় করা হয়। তাই আমরা নামাজ আদায়ের জন্য মসজিদটি পরিষ্কার করেছি এবং মুসল্লিদের যাতে কোনো রকম সমস্যা না হয় এজন্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেছি।

মসজিদে জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এত মানুষ এসেছে যে আমাদের সাইকেল ও মোটরসাইকেলের জন্য নির্ধারিত গ্যারেজে জায়গা দিতে পারিনি। তবে যেসব স্থানে ফাটল দেখা দিয়েছে সেগুলো ঠিক করে মেরামত করা হচ্ছে বলে জানান এই প্রকৌশলী।

হরিপুর মডেল মসজিদে জুমার নামাজ আদায় করে জেলা প্রশাসক মাহাবুবুর রহমান মুসল্লিদের উদ্দেশ্যে বলেন, মডেল মসজিদের মাধ্যমে ইসলামের সঠিক চর্চা করতে হবে। ইসলামের সঠিক জ্ঞান অর্জন করে বিভিন্ন রকম ধর্মীয় অপ্রচারের প্রতিরোধ করতে হবে।

তিনি বলেন, এখানে ইসলামিক লাইব্রেরি আছে। যেখান থেকে আমরা সকলে ধর্মীয় চর্চা করতে পারবো এবং জ্ঞান অর্জন করতে পারবো। সেই সঙ্গে সকল ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ বজায় রাখার আহ্বান জানান তিনি।

মডেল মসজিদে মুফতি মাসুদুর রহমান হামিদীর ইমামতিতে জুমার নামাজ আদায় করেন সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আব্দুল করিম, উপজেলা চেয়ারম্যান জিয়াউল হাসান মুকুল, স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাকর্মীসহ জেলা ও উপজেলার পুরুষ ও নারীসহ দুই হাজারের বেশি ধর্মপ্রাণ মুসল্লি।

তানভীর হাসান তানু/এফএ/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।