শিব চতুর্দশী মেলা ঘিরে ঘাট পারাপারে অতিরিক্ত টোল আদায়ের অভিযোগ
কক্সবাজারের মহেশখালীর আদিনাথ মন্দিরে শিব চতুর্দশী মেলাকে কেন্দ্র করে ঘাট পারাপারে অতিরিক্ত টোল আদায়ের অভিযোগ উঠেছে। জন প্রতি ৫ টাকা টোল নেওয়ার নিয়ম থাকলেও ২০ টাকা করে আদায় করছেন ঘাট সংশ্লিষ্টরা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ১ মার্চ থেকে ১০ দিনব্যাপী চলবে শিব চতুর্দশী মেলা। এ মেলাকে কেন্দ্র করে ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে মহেশখালীর আদিনাথ মন্দিরে আসতে শুরু করেছেন সনাতন ধর্মাবলম্বীর লোকজন। কক্সবাজার থেকে স্পিডবোট কিংবা ট্রলারে মহেশখালী যাচ্ছেন তারা। কিন্তু ঘাট পারাপারে ৫ টাকার জায়গায় জনপ্রতি ২০ টাকা টোল আদায় করা হচ্ছে।
এ নিয়ে প্রতিবাদ করলেও অতিরিক্ত টাকা নেওয়া বন্ধ হয়নি, উল্টো ধমক খেয়েছেন টোল আদায়কারীদের। এ নিয়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে চরম ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।
বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোট সভাপতি বুলবুল তালুকদারের মতে, দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে হিন্দু সম্প্রদায়ের পূর্ণার্থীরা আসবে মহেশখালীতে। সে সুযোগে অতিরিক্ত টোল আদায় করে দুর্নাম রটাচ্ছে অসাধু টোল আদায়কারীরা। যেটি পর্যটক ও সনাতন সম্প্রদায়ের অনুষ্ঠানে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
কক্সবাজার জেলা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক প্রিয়তোষ শর্মা চন্দন জাগো নিউজকে বলেন, আমি নিজেও ২০ টাকা টোল দিয়ে ঘাট পার হয়েছি। এটি কোনোমতেই কাম্য নয়। ধর্মীয় অনুষ্ঠানকে পুঁজি পর্যটকের দোহায় দিয়ে অতিরিক্ত টোল আদায় করা বিধি বহির্ভূত। টোল আদায় সংক্রান্তে বিধি বিধানে যদি এমনটি থেকে থাকে তাহলে সেটি আগে থেকেই নোটিশের মাধ্যমে জানানো উচিত ছিল।
অতিরিক্ত টোল আদায় বন্ধের পাশাপাশি জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান তিনি।
জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি উজ্জল কর জাগো নিউজকে বলেন, পূজাকে কেন্দ্র করে বাড়তি টোল আদায় একটি বিশৃঙ্খলার সামিল। এটা কাম্য নয়। নানা প্রান্ত থেকে হিন্দু সম্প্রদায় ও পর্যটকরা শিব দর্শন এবং মেলা দেখতে মহেশখালীতে আসবে। বাড়তি টোল আদায় পর্যটন শিল্পের বদনাম হবে।
তিনি আরও বলেন, আজ কক্সবাজারে ধর্মমন্ত্রীর সঙ্গে আমাদের বৈঠক রয়েছে। সেখানে বিষয়টি তুলে ধরা হবে।
কক্সবাজার ৬ নম্বর জেটি ঘাটের ইজারাদার ওয়ালিউল্লাহ মিন্টু জাগো নিউজকে বলেন, ইজারার নিয়ম অনুসারে আমরা টোল আদায় করছি। বাড়তি টাকা নেওয়ার সুযোগ নেই। কক্সবাজারের স্থানীয়দের পারাপারে ৫ টাকা আর জেলার বাইরের লোকজন হলে ২০ টাকা এবং বিদেশি পর্যটক হলে ১০০ টাকা নেওয়ার নির্দেশনা কর্তৃপক্ষ নির্ধারণ করে দিয়েছে।
এ বিষয়ে মেলা কমিটির সভাপতি ও মহেশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) সাইফুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, অতিরিক্ত টোল আদায় সংক্রান্ত কোনো অভিযোগ পাইনি। ঘাটটি বিআইডব্লিউটিএ’র অধীনে। জানামতে দরপত্রের তালিকা অনুযায়ী টোল নেওয়ার কথা। এছাড়া অভিযুক্ত ঘাট উপজেলার অধীনে নয়। এরপরও অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ জাগো নিউজকে বলেন, এরই মধ্যে অতিরিক্ত টোল আদায়ের বিষয়ে শুনেছি। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালককে (ডিডিএলজি) নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
মহেশখালী যেতে ঘাটে অতিরিক্ত টোল আদায় ও সংশ্লিষ্টদের খারাপ আচরণসহ বিভিন্ন অভিযোগ দীর্ঘদিনের। এ নিয়ে একাধিকবার গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হলেও কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি কর্তৃপক্ষ। ফলে দিনদিন অনিয়মের মাত্রা বেড়েছে। তাই অতিরিক্ত টোল আদায়ের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি সর্বমহলের।
সায়ীদ আলমগীর/এসজে/জেআইএম