জলে ভাসছে ভিক্টোরিয়া কলেজ

জাহিদ পাটোয়ারী
জাহিদ পাটোয়ারী জাহিদ পাটোয়ারী , কুমিল্লা
প্রকাশিত: ০৯:৫২ এএম, ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২২

জলাবদ্ধতায় নাকাল দেশের প্রাচীনতম বিদ্যাপীঠ কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ। শুধু বর্ষাকাল নয়, সকল ঋতুতেই বৃহৎ এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি থাকে জলমগ্ন। যেন জলাশয়ের মাঝে ভাসছে পুরো ক্যাম্পাস।

সামান্য বৃষ্টিতেই পানিবন্দি হয়ে পড়েন শিক্ষার্থীরা। ডুবে যায় প্রশাসনিক ভবনও। স্যাঁতসেঁতে পরিবেশে ক্লাস করতে গিয়ে বিরক্ত হন শিক্ষার্থীরা। তাছাড়া প্রায় ২৮ হাজার শিক্ষার্থীর ক্যাম্পাসে নেই খেলার মাঠও।

জলাবদ্ধতা সমাধানসহ কলেজের অবকাঠামো উন্নয়নের লক্ষ্যে কুমিল্লা শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের মাধ্যমে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে প্রায় ৪শ কোটি টাকার প্রকল্প জমা দেওয়া হয়েছে। তবে তা পাস হতে সময় লাগবে বলে জানিয়েছে জেলা শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর।

jagonews24

সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, ক্যাম্পাসের পূর্ব পাশে বিশাল এক জলাশয়। এর পশ্চিম পাড়ে রয়েছে পদার্থ বিজ্ঞান ভবন, মিলিনিয়াম ও লাইব্রেরি ভবন। পানি নিষ্কাশনের কোনো ব্যবস্থা না থাকায় সামান্য বৃষ্টিতেই ডুবে যায় ভবনগুলোর নিচতলা। পানি কমে গেলে স্যাঁতসেঁতে পরিবেশ সৃষ্টি হয় ক্লাসরুমে।

কলাভবনের পেছনের অংশে ময়লা-আবর্জনা আর পানি জমে নষ্ট হচ্ছে পরিবেশ। বেড়েছে মশার উপদ্রবও। জলাবদ্ধার কারণে কলেজটির একমাত্র ছাত্রী হোস্টেল নওয়াব ফয়জুন্নেসা হলের প্রধান ফটকটিও নির্মাণের পর থেকে বন্ধ রয়েছে। যে মাঠটিতে কলেজ ব্যবস্থাপনায় ১৫-২০ বছর আগেও হয়েছে নিয়মিত খেলাধুলা বর্তমানে সেই মাঠে রয়েছে কচুরিপানা। এতে খেলাধুলা থেকেও বঞ্চিত হচ্ছেন শিক্ষার্থীরাও।

ক্যাম্পাসের পূর্বপাশে রেললাইন, দক্ষিণে আবাসিক এলাকা, উত্তরে ও পশ্চিমে সড়ক থাকায় বেষ্টনীর মধ্যে পড়ে গেছে কলেজটি। পশ্চিমের রাস্তার পাশে একটি মাত্র সরু ড্রেন। যা দিয়ে পানি সরবরাহ হচ্ছে খুবই কম। ফলে পানি আটকা পড়ে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। এছাড়া চারপাশের আবাসিক এলাকার দৈনন্দিন পানিও ক্যাম্পাসেই এসে পড়ে। ড্রেনেজ সুবিধা না থাকা এবং কলেজ ক্যাম্পাসটি সড়কের চেয়ে নিচু হয়ে পড়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।

jagonews24

এখানে মাটি ভরাটসহ ড্রেনেজ সমস্যার সমাধান অতি জরুরি বলে মনে করছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। তা না হলে প্রাচীন এ কলেজের ভবনগুলো ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়বে। জলাবদ্ধতা নিরসনে কলেজ কর্তৃপক্ষকে অগ্রণী ভূমিকা নেওয়ার দাবিও জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।

এ বিষয়ে গণিত বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র আনোয়ার হোসেন জাগো নিউজকে জানান, ভর্তির পর থেকেই ক্যাম্পাসের মধ্যে জলাবদ্ধার দৃশ্য দেখে আসছি। সামান্য বৃষ্টি হলেই আমাদের ভবনটির নিচতলা জলমগ্ন হয়ে যায়। তাছাড়া ক্লাসরুমে সৃষ্টি হয় স্যাঁতসেঁতে পরিবেশ। সব মিলিয়ে খুব খারাপ অবস্থা। আমরা দ্রুততম সময়ের মধ্যে এ সমস্যার সমাধান চাই।

অর্থনীতি বিভাগের ৩য় বর্ষের ছাত্র শাখাওয়াত হোসেন বলেন, দীর্ঘদিন ধরে ক্যাম্পাসে খেলার মাঠ না থাকায় আমরা খেলাধুলা থেকেও বঞ্চিত হচ্ছি।

jagonews24

কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ থিয়েটারের সভাপতি এসএম রুবেল জাগো নিউজকে জানান, ক্যাম্পাসে বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের জায়গা না থাকায় থিয়েটারের অফিস কক্ষে পানি ঢুকে পড়ে। বছরের দীর্ঘ সময় ধরে নির্দিষ্ট কাজ থেকে আমাদের বিরত থাকতে হয়। স্যাঁতসেঁতে পরিবেশের কারণে অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ থেকেও আমাদের বিরত থাকতে হয়। দেশব্যাপী কলেজ থিয়েটার ও বিতর্ক পরিষদের সুনাম রয়েছে। এ সুনাম ধরে রাখতে আমাদের সব সময় মহড়ায় অংশ নিতে হয়। সেখানে যদি ফ্লোরের অবস্থা অনুকূলে না থাকে তাহলে কাজ করতে অনকে সমস্যা হয়।

কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ অধ্যক্ষ ড. আবু জাফর খান জাগো নিউজকে বলেন, কলেজের চারপাশ উঁচু হওয়ার কারণে ক্যাম্পাসটি নিচু হয়ে গেছে। এতে আমাদের তিনটি ভবন এবং খেলার মাঠ প্রায়সময় পানির নিচে তলিয়ে থাকে। এ সমস্যা সমাধানসহ কলেজের অবকাঠামো উন্নয়নের লক্ষ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে ৩৯২ কোটি টাকার একটি প্রকল্প জমা দেওয়া হয়েছে। আশা করছি এটি পাস হলে কলেজের জলাবদ্ধতা ও আবাসন সমস্যাসহ অবকাঠামো উন্নয়নে পাল্টে যাবে কলেজের দৃশ্যপট।

তিনি আরও জানান, শিক্ষা কার্যক্রম যাতে ব্যাহত না হয় তাই শ্রেণিকক্ষ উঁচুকরণের জন্য শিক্ষা প্রকৌশলী অধিদপ্তরের সঙ্গে যোগাযোগ হচ্ছে। আশা করছি আগামী জুনের মধ্যে তারা পদার্থ বিজ্ঞান ভবন, মিলিনিয়াম ও লাইব্রেরি ভবনের মেঝে দুই ফুট উঁচু করে দেবেন। এতে করে ক্লাস রুমে জলাবদ্ধতার সমস্যা আর থাকবে না।

jagonews24

কুমিল্লা জেলা শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী আলী ইমাম জাগো নিউজকে জানান, জলাবদ্ধাতাসহ সার্বিক উন্নয়নে এক বছর আগে একটি মেগা প্রকল্প মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। এটি অনুমোদন হওয়া সময়ের ব্যাপার। তবে প্রকল্পটি পাস না হলে ক্যাম্পাসে দীর্ঘদিনের জলাবদ্ধতার সমস্যার সমাধান হবে না।

১৮৯৯ সালে কুমিল্লা নগরীর কান্দিরপাড় এলাকায় রায় বাহাদুর আনন্দচন্দ্র রায় রানী ভিক্টোরিয়ার নামে কলেজটি প্রতিষ্ঠা করেন। স্থান সংকুলান না হওয়ায় ১৯৬৪ সালে ডিগ্রি শাখা হিসেবে শরহতলীর ধর্মপুরে স্থানান্তর করা হয়। বর্তমানে কলেজটিতে ২০টি বিষয়ে অনার্স ও মাস্টার্স কোর্স চালু রয়েছে। কলেজটিতে বর্তমানে ২৭ হাজার ৮৮৫ জন শিক্ষার্থী রয়েছেন।

এফএ/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।