দেশে লালফিতার দৌরাত্ম্য বড় বেশি: বাণিজ্যমন্ত্রী
দেশে উৎপাদিত আখ দিয়ে চিনিকল চালানো সম্ভব নয় উল্লেখ করে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছেন, এতে লোকসান হবে। শ্রমিকরা বেকার হয়ে আছেন। এই শ্রমিকদের প্রাধান্য দিয়ে বড় বড় ব্যবসায়ীদের দিয়ে লাভজনক কোনো প্রতিষ্ঠান তৈরির পরিকল্পনা নিতে হবে।
তিনি বলেন, আমার কাছে জার্মানির এক ব্যবসায়ী প্রস্তাব দিয়েছিলেন। কিন্তু লালফিতার দৌরাত্ম্য বড় বেশি। আমি নিজেও কিছুটা কাবু হয়ে গেছি। কারণ সারাটা জীবন কাজ করে বেড়িয়েছি। সরকারের এই চেয়ারে (মন্ত্রিত্ব) বসে মনে হয়, এটা কবে বদলাবে? তবে চেষ্টা করা হচ্ছে, আমরা চেষ্টা করছি।
জাতীয় উন্নয়নে অঙ্গীকার শিক্ষা, শোভন কর্মসংস্থান ও জেন্ডার সমতা বিষয়ক রংপুর সংলাপ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। শনিবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) সকালে রংপুর-দিনাজপুর ত্রাণ ও পুনর্বাসন সংস্থার (আরডিআরএস) বেগম রোকেয়া মিলনায়তনে এ সংলাপের আয়োজন করা হয়।
অনুষ্ঠানে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, নির্বাচনের আগে প্রতিটি রাজনৈতিক দলের ইশতেহার থাকে। আওয়ামী লীগেরও তেমন ইশতেহার ছিল। প্রধানমন্ত্রী সে অনুয়ায়ী কাজ করার চেষ্টা করছেন। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে সেই লক্ষ্য কিছুটা বাধাগ্রস্ত হয়েছে। তবে সারা বিশ্বের সামগ্রিক অথনৈতিক অবস্থা বিবেচনায় খুব একটা খারাপ হয়নি আমাদের।
দেশের অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় রংপুর পিছিয়ে আছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, বড় বড় ব্যবসায়ীরা এ অঞ্চলে বিনিয়োগ করতে চান না। তারা তাদের পরিবহন খরচসহ সামগ্রিক অনেক বিষয়ে হিসাব করেন। চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় মালামাল পরিবহনে যতটা ব্যয় হয় তার চেয়ে বেশি ব্যয় হবে চট্টগ্রাম থেকে রংপুরে আনতে। এ অঞ্চলে শ্রমিক সহজলভ্য হলেও নানা কারণে সেটা সম্ভব হয়ে ওঠে না। তবুও প্রধানমন্ত্রী কৃষিনির্ভর এ অঞ্চলের উন্নয়নে চেষ্টা করে চলেছেন।
টিপু মুনশি বলেন, একটা সময়ে যাত্রী সংকটে ভুগছিল সৈয়দপুর বিমানবন্দর। অথচ এখন প্রতিদিন ১৫/১৬টি ফ্লাইট ওঠানামা করছে। আগামী এক বছরের মধ্যে এটা দ্বিগুণ হবে বলে আশা করি। কারণ, মানুষ এখন আসতে শুরু করেছে। সৈয়দপুর থেকে নেপাল, ভুটান ও ভারতে যোগাযোগ স্থাপনে কাজ করা হচ্ছে।
পঞ্চগড়ের চা বাগান ঘিরে নানা পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রী আরও বলেন, ব্যবসায়ীদের সুবিধার্থে ঠাকুরগাঁওয়ে বিমানবন্দর চালু ও পঞ্চগড়ে উন্নতমানের আবাসন ব্যবস্থা তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
কুড়িগ্রামে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন ও চিলমারী বন্দর চালুর কথা জানিয়ে সিরাজগঞ্জ থেকে রংপুর সরাসরি ট্রেন যোগাযোগ, বন্ধ চিনিকলগুলোতে বিকল্প উৎপাদনের ব্যবস্থা গ্রহণ, ইপিজেড স্থাপন, অর্থনৈতিক জোন তৈরি ও তিস্তা নদী ঘিরে মহাপরিকল্পনা গ্রহণসহ এ অঞ্চলের উন্নয়নে নানা পরিকল্পনার কথাও তুলে ধরেন মন্ত্রী।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচাক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম। বিশেষ অতিথি ছিলেন রংপুর সিটি করপোরেশেন মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা। শুভেচ্ছা বক্তব দেন সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার।
এর আগে বর্তমান সরকারের নির্বাচনী ইশতেহার অনুযায়ী গৃহীত কর্মকাণ্ডের অগ্রগতি মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টরের মাধ্যমে তুলে ধরা হয়।
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) ও সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) যৌথভাবে এ সংলাপের আয়োজন করে। এতে বক্তব্য দেন- রংপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মমতাজ উদ্দিন আহমেদ, সনাক-রংপুরের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা সদরুল আলম দুলু, সুজন রংপুর জেলার সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আকবর আলী, নারীনেত্রী মোশফেকা রাজ্জাক এবং আরডিআরএসের হেড অব ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম আব্দুস সামাদ। সংলাপে মুক্ত আলোচনায় রংপুর অঞ্চলের উন্নয়নে কৃষিভিত্তিক আলাদা বাজেট বরাদ্দ, সরকারি স্কুল স্থাপন, শিক্ষিত বেকারদের ভাতা প্রদান, আইটি পার্ক স্থাপন, রেলপথ ও আকাশপথ সম্প্রসারণসহ বিভিন্ন সুপারিশ তুলে ধরা হয়।
জিতু কবীর/কেএসআর/জেআইএম