এখনো নজর কাড়ে ২০০ বছরের ‘চিনি মসজিদ’
বাংলাদেশের প্রাচীন শহরগুলোর মধ্যে অন্যতম নীলফামারীর সৈয়দপুর। ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য এই শহর প্রসিদ্ধ। রয়েছে দেশের অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দর। বিসিক শিল্পনগরীর পাশাপাশি বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ রেলকারখানাও রয়েছে এখানে।
ব্যস্ততম এই শহরের প্রাচীন সৌন্দর্যের স্থাপত্য নিদর্শন হচ্ছে সৈয়দপুরের চিনি মসজিদ। যা অনেকের কাছে ‘চীনা মসজিদ’ নামেও পরিচিত। প্রায় ২০০ বছর আগের নির্মিত এই মসজিদটি দাঁড়িয়ে আছে কালের সাক্ষী হয়ে। এ মসজিদের নির্মাণশৈলী আর সৌন্দর্য নজর কাড়ে সবার। তাই প্রতিদিন দূর-দূরান্ত থেকে অসংখ্য মানুষ এখানে আসেন।
সৈয়দপুর শহরের ইসলামবাগ এলাকায় ১৮৬৩ সালে হাজী বাকেরআলী ও হাজী মুকু শহরের ইসলামবাগে ছন ও বাঁশ দিয়ে এই মসজিদের নির্মাণকাজ শুরু করেন। পরবর্তীতে এলাকাবাসীর সহায়তায় মসজিদে টিন ব্যবহার করা হয়। ১৯২০ সালে হাফিজ আব্দুল করিমের উদ্যোগে ১৫৬০ বর্গফুট আয়তন মসজিদটির প্রথম অংশ পাকাকরণ করা হয়।
লোকমুখে জানা যায়, হাজী আব্দুল করিম নিজেই মসজিদটির নকশা করেন। পরে ১৯৬৫ সালে মসজিদের দক্ষিণ দিকে ২৫/৪০ ফুট আয়তন বিশিষ্ট অংশ পাকা করা হয়।
মসজিদের সৌন্দর্য বাড়াতে এর দেয়ালে চিনামাটির থালার ভগ্নাংশ ও কাঁচের ভগ্নাংশ বসানো হয়। এই পদ্ধতিকে বলা হয় চিনি করা বা চিনি দানার কাজ করা। এখান থেকেই মসজিদের নাম হয় ‘চিনি মসজিদ বা চীনা মসজিদ’। মসজিদটি তৈরিতে মার্বেল পাথরও ব্যবহার করা হয়েছে। মসজিদের কারুকাজ দেখে সবাই মুগ্ধ হয়ে পড়েন।
মসজিদের ইমাম মাওলানা মুহাম্মদ শাহিদ রেজা রাযাভী জাগো নিউজকে বলেন, মসজিদে ৪৫টি মিনারসহ তিনটি বড় গম্বুজ রয়েছে। মসজিদে ২৪৩টি শংকর মর্মর পাথর রয়েছে। মসজিদে একসঙ্গে প্রায় পাঁচ শতাধিক লোক নামাজ আদায় করে থাকেন। ভেতরে প্রবেশের জন্য উত্তর ও দক্ষিণে দরজা রয়েছে। রয়েছে পর্যটকদের থাকার ব্যবস্থাও।
বর্তমানে চিনি মসজিদে স্থান সংকুলানের অভাবসহ বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিয়েছে বলেও জানান এ ইমাম।
চিনি মসজিদ কমিটির সাধারণ সম্পাদক ফজলুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, মসজিদের নিজস্ব সম্পত্তি বলতে রয়েছে ১২টি দোকান। এসব দোকানের ভাড়া ও মুসল্লিদের চাঁদা মসজিদের আয়ের একমাত্র উৎস। এ অর্থ দিয়েই মসজিদের সব ব্যয় ও উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাওয়া কষ্টকর।
তিনি আরও বলেন, এরই মধ্যে আমরা ওজু খানার কাজ শেষ করেছি। তবে ওজুখানাটি মসজিদের সঙ্গে যুক্ত করা যায়নি। অর্থ না থাকায় বর্তমানে সেই কাজ বন্ধ রয়েছে। বর্তমানে মুসল্লি বেড়ে যাওয়ায় জায়গা সংকুলানের অভাবে অনেক মুসুল্লিদের রাস্তায় দাঁড়িয়ে নামাজ পড়তে হয়। আশপাশে জায়গা না থাকায় বাড়ানো যাচ্ছে না।
এ বিষয়ে সৈয়দপুর পৌরসভার মেয়র রাফিকা আক্তার জাহান বেবি জাগো নিউজকে বলেন, চিনি মসজিদ নিয়ে পৌরসভার পরিকল্পনা রয়েছে। বরাদ্দ আসলে সবার সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সেখানে প্রয়োজনীয় বরাদ্দ দেওয়া হতে পারে।
এসজে/এমএস