বাতাসেই ভেঙে পড়ছে ৭০ কোটি টাকার ভবনের জানালা
মাদারীপুরে ৬৯ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত অত্যাধুনিক ১০তলা সরকারি সমন্বিত অফিস ভবন চালু হওয়ার দুই মাস পেরোতেই সামান্য বাতাসে এর বেশ কয়েকটি জানালা ভেঙে গেছে।
শুক্রবার (৪ ফেব্রুয়ারি) রাতে সামান্য ঝড়ো বাতাসে ১০তলা ভবনের ষষ্ঠ তলার পূর্বপাশের ব্লকের তিনটি রুমের জানালা ভেঙে পড়ে। এ সময় এই কক্ষগুলোতে থাকা মন্দির ভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রমের মাদারীপুর জেলা শাখার কার্যালয়ের কক্ষের কম্পিউটার, ফটোকপির মেশিনসহ বেশ কিছু ইলেকট্রনিক মালামালের ক্ষতি হয়েছে বলে জানা যায়। এ ঘটনায় রোববার সকালে জেলা প্রশসাক বিষয়টি সরেজমিনে পরিদর্শন করে তদন্ত কমিটি করার কথা বলেছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মাদারীপুর লেকেরপাড়ে গত ১ ডিসেম্বর থেকে সরকারি সমন্বিত অফিস সমূহের জন্য নির্মিত ১০তলা ভবন ২৫টি অফিসের ব্যবহারের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়। বরাদ্দ পাওয়ার পর থেকে এই ভবনে গত তিন মাস ধরেই বরাদ্দ পাওয়া সরকারি অফিসগুলো আসতে শুরু করে। এরই মধ্যে গত ৪ ফেব্রুয়ারি বৃষ্টি ও হালকা বাতাস হওয়ায় ভবনটির ষষ্ঠতলার পূর্বদিকের উত্তরপাশের ৪২ ফুট দৈর্ঘ্য ও ১০ ফুট উচ্চতার জানালার ২৪টি গ্লাস ভেঙে পড়ে।
যে অংশ ভেঙে গেছে সেই অংশের রুমগুলোর হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের অফিসের জানালার পাশে থাকা কম্পিউটার, ফটোকপি মেশিনসহ আরো সরঞ্জামাদি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই ঘটনায় ত্রুটিপূর্ণভাবে জানালার গ্লাসগুলো স্থাপন করার অভিযোগ উঠলে ঠিকাদার ও গণপূর্ত কর্তৃপক্ষ একে অপরের বিরুদ্ধে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করে।
মাদারীপুর সরকারি সমন্বিত অফিসের ৬তলায় হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের মাদারীপুর জেলা সহকারী পরিচালক মুয়িত উদ্দিন মোল্লা বলেন, গত ২ দিন আগে দমকা হাওয়া প্রবাহিত হয়েছিলো। সেখানে সমন্বিত সরকারি ভবনের ষষ্ঠ তলার পূর্বপাশের ব্লকের ৬০৭ থেকে ৬০৯নং রুমের জানালাগুলো ভেঙে যায়। ভাঙা অংশের কিছু কিছু অংশ অফিস কক্ষে প্রবেশ করে। জানালার পাশে থাকা কম্পিউটার, ফটোকপি মেশিনসহ আরো সরঞ্জামাদি কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এখনো পুরোপুরি পরীক্ষা করিনি। তবে আপাতত আমাদের ফটোকপির মেশিনটি চালু হচ্ছে না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভবনে থাকা একটি দপ্তরের এক কর্মকর্তা বলেন, সামান্য বাতাসেই জানালা ভেঙে গেছে। সামনে ঝড় হলে আমাদের জন্য খুব বিপজ্জনক হয়ে যাবে। তাছাড়া জানালার গ্রিলগুলোও হালকা।
ভবনের স্থানীয় ঠিকাদার সৈয়দ আবুল বাশার বলেন, ছয় তলার জানালার গ্লাসগুলো বাতাসে ভেঙে পড়ার পেছনে আমাদের কোনো ভুল ছিল না। যদি ভুল থেকে থাকে, সেটা গণপূর্ত কর্মকর্তাদের। আমাদের কর্মীরাতো ঠিকমতোই গ্লাসগুলো বসিয়েছে। এটা দেখা ও মনিটর করার কথা ইঞ্জিনিয়ারদের। এখন তারাই ভালো বলতে পারবে, কী কারণে গ্লাসগুলো ভেঙে গেছে।
এ বিষয়ে মাদারীপুরের গণপূর্ত নির্বাহী প্রকৌশলী কামরুল ইসলাম খান বলেন, নতুন দশতলা ভবনের ৬ষ্ঠ তলায় গ্লাসগুলো যখন জানালায় স্থাপন করা হয়, তখন সঠিকভাবে স্থাপন না করার কারণেই বাতাসে ভেঙে পড়ে গেছে। এখন আমরা বিষয়টি ঢাকায় জানিয়েছি। খুব দ্রুত ভবনের আরো কী কী ধরনের সমস্যা আছে, সেসব বিষয় একটি কোম্পানিকে দায়িত্ব দিয়ে খতিয়ে দেখব।
এ বিষয়ে মাদারীপুর জেলা প্রশাসক ড. রহিমা খাতুন বলেন, আমরা এ ব্যাপারে একটা তদন্ত কমিটি গঠন করবো। আসলে গ্লাসটা কেন ভেঙে গিয়েছে, পরিকল্পনা জন্য নাকি মেটেরিয়ালসের জন্য সেটা দেখবো’। এমন ঘটনা যেন সামনে না ঘটে সেটার ব্যাপারেও আমরা পদক্ষেপ নেব।
মাদারীপুর গণপূর্ত প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, শহরের শকুনী মৌজার শকুনী লেকের উত্তর পাড়ের পুরনো জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের ১ একর জমিতে ৬৯ কোটি ৭০ লাখ টাকা খরচে ২০১৬ সালে দশতলা সরকারি সমন্বিত অফিস ভবনটি নির্মাণ কাজ শুরু করে। যা শেষ হয় চলতি বছরের আগস্ট মাসে। গত ৩ আগস্ট ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের জেলাভিত্তিক প্রথম সরকারি সমন্বিত অফিসটির উদ্বোধন করেন। কিছু কাজ অসমাপ্ত থাকায় নভেম্বর মাসে এর নির্মাণকাজ শেষ দেখায় গণপূর্ত বিভাগ। ভবনটিতে চলবে ৪০টি সরকারি অফিসের কার্যক্রম। ১০তলা ভবনটিতে রয়েছে ৪টি লিফট, মাল্টিপারপাস হলরুম, একসাথে ৫৫টি গাড়ি পার্কিংয়ের আলাদা স্থান, আলাদা বিদ্যুৎ সংযোগ ও প্রতিবন্ধীদের জন্য যাতায়াতের আলাদা ব্যবস্থাসহ আধুনিক সব সুবিধা।
নাসিরুল হক/এফএ/জিকেএস