বিদেশে পড়তে যাওয়া মেয়ের ছবি ফেসবুকে, মৌলভীবাজারে ‘একঘরে’ পরিবার

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি মৌলভীবাজার
প্রকাশিত: ০৯:০৮ পিএম, ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২২
ঝর্ণা চৌধুরী। ছবি-সংগৃহীত

উচ্চশিক্ষা লাভের জন্য যুক্তরাষ্ট্র গেছেন মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার ভাটেরা ইউনিয়নের কৃষ্ণপুর গ্রামের বাসিন্দা ঝর্ণা চৌধুরী। তার বিদেশে গিয়ে লেখাপড়ার বিষয়টি ভালোভাবে নেয়নি এলাকাবাসী। এজন্য বিভিন্ন অপবাদ দিয়ে ঝর্ণার পরিবারকে ‘সমাজচ্যুত’ করা হয়েছে। গ্রাম্য পঞ্চায়েতে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

এ ঘটনায় কুলাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী ঝর্ণার বাবা হাজি আব্দুল হাই চৌধুরী।

লিখিত অভিযোগ ও ভুক্তভোগীর পরিবার সূত্রে জানা যায়, আব্দুল হাই চৌধুরীর (৭০) দুই ছেলে ও তিন মেয়ে। এদের মধ্যে ঝর্ণা চৌধুরী দ্বিতীয় সন্তান। ২০০৮ সাল থেকে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘পজিটিভ বাংলাদেশে’র সদস্য এবং ২০১৩ সাল থেকে এর প্রধান সমন্বয়ক ও নারী অধিকার নিয়ে কাজ শুরু করেন ঝর্ণা। এলাকার কিছু মানুষ বিষয়টি নেতিবাচকভাবে দেখছিলেন।

সিলেটে পড়াশোনার সময় এলাকার মানুষ ঝর্ণাকে নিয়ে ফেসবুকে বিভিন্ন অপপ্রচার শুরু করেন। এ বিষয়ে সিলেটের শাহপরাণ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন ঝর্ণা।

jagonews24

ঝর্ণা আইন বিষয়ে সিলেটের একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক শেষ করে গত ২৬ ডিসেম্বর উচ্চশিক্ষার জন্য যুক্তরাষ্ট্র চলে যান। সেখানে তার সংগঠনের চেয়ারম্যান জয়তূর্য চৌধুরীসহ কয়েকজনের সঙ্গে তোলা ছবি ফেসবুকে প্রকাশ করেন। এরপর ঝর্ণার গ্রামের কিছু মানুষ তার বিদেশে যাওয়া, এমন ছবি তুলে ফেসবুকে প্রকাশ এবং তার চালচলন নিয়ে নেতিবাচক মন্তব্য করেন ফেসবুকে। ঝর্ণার পরিবারকেও হেয় করা হয়।

একপর্যায়ে এলাকার পঞ্চায়েতের লোকজন আব্দুল হাই চৌধুরীর কাছে তার মেয়ে ঝর্ণা যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে হিন্দু ছেলে জয়তূর্যর সঙ্গে চলাফেরা এবং ছোট কাপড় পরার কারণ জানতে চান। মেয়ের এমন চালচলনের কারণে তাকে একঘরে করারও হুমকি দেন।

আব্দুল হাই চৌধুরীর অভিযোগ, শুক্রবার (২৮ জানুয়ারি) মসজিদ পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি শামসুল ইসলাম মাখন ও সম্পাদক আমীন আলী সালিশ বৈঠক ডাকেন। তবে অসুস্থ থাকায় তিনি বৈঠকে যেতে পারেননি। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ওই পরিবারকে একঘরে করার সিদ্ধান্ত নেয় পঞ্চায়েত কমিটি। এমন সিদ্ধান্ত ও মিথ্যা অপপ্রচার ছড়ানোর কারণে তার পরিবার নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে।

jagonews24

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি শামছুল ইসলাম মাখন ও সম্পাদক আমিন মিয়া বলেন, ঝর্ণার বিষয়ে পঞ্চায়েতের লোকজন আমাদের চাপ দিচ্ছিলেন। পরে দেড় মাস আগে তার বাবা আব্দুল হাই চৌধুরীর কাছে জানতে চাওয়া হয়। তবে তিনি আমাদের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করেননি। শুক্রবার পঞ্চায়েতের লোকজন মসজিদে বসে বিষয়টি নিয়ে আলাপ করেন। তবে আমরা তাদের সমাজচ্যুত করিনি।

তারা আরও বলেন, ‘তিনি যেহেতু পঞ্চায়েতকে গুরুত্ব দেননি সেহেতু উনি উনার মতো করে চলবেন। আমরা আমাদের মতো চলবো। (পঞ্চায়েত) এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।’

বিষয়টি জেনে তাৎক্ষণিকভাবে মসজিদ পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি ও সম্পাদককে সতর্ক করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এটিএম ফরহাদ চৌধুরী।

তিনি জাগো নিউজকে বলেন, আব্দুল হাই চৌধুরীর পরিবারকে যেন হয়রানি না করা হয় সেজন্য বলা হয়েছে। সেই সঙ্গে থানার ওসি ও স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানকেও বিষয়টি নজরে রাখতে এবং ওই পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে।

অব্দুল আজিজ/এসআর/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।