শৈত্যপ্রবাহে কাঁপছে পাবনা, বেড়েছে শীতজনিত রোগী
পাবনায় গত এক সপ্তাহ ধরে শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। ফলে ঘন কুয়াশা ও হাড় কাঁপানো শীতে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন পদ্মা ও যমুনা নদী তীরবর্তী অঞ্চলের বাসিন্দা ও নিম্ন আয়ের শ্রমজীবী মানুষরা।
এদিকে পুরো জেলায় ঠান্ডাজনিত রোগ সর্দি-কাশি ও নিউমোনিয়ার প্রকোপ দেখা দিয়েছে। রোগীতে ভরে গেছে হাসপাতালগুলো। এর মধ্যে শিশু ও বয়স্কদের সংখ্যা বেশি। বিশেষ করে শিশু ওয়ার্ডে বেড খালি না থাকায় মেঝেতে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। তাদের চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। গত এক সপ্তাহে ঠান্ডাজনিত রোগে অন্তত ৫০০ মানুষ আক্রান্ত হয়েছে।
রোববার (৩০ জানুয়ারি) পাবনা জেনারেল হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ড গিয়ে দেখা যায়, শিশুরোগী ও তাদের স্বজনদের ভিড়ে ওয়ার্ডে পা ফেলার জায়গা নেই। এক বেডে দু-তিনটি শিশুকে রাখা হয়েছে। বেশিরভাগ শিশু রোগীর ঠাঁই হয়েছে হাসপাতালের মেঝেতে।
শিশু রোগীর অভিভাবকরা জানান, দিন কোনোমতে পার হলেও রাত কাটানো তাদের জন্য অবর্ণনীয় কষ্টের হয়ে দাঁড়িয়েছে। এছাড়া হাসপাতাল থেকে তেমন কোনো ওষুধ তারা পাচ্ছেন না। সব ওষুধ বাইরে থেকে কিনতে হচ্ছে।
পাবনা জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তা ডা. জাহিদুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, হাসপাতালে প্রতিদিন নিউমোনিয়াসহ ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে গড়ে শতাধিক রোগী ভর্তি হচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ১১৫ জন শিশুকে ভর্তি করা হয়েছে। ধারণ ক্ষমতার বেশি রোগী আসায় তাদের চিকিৎসা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে চিকিৎসকসহ সংশ্লিষ্টদের।
তিনি আরও বলেন, হাসপাতালে স্থান সংকুলান না হওয়ায় শতাধিক শিশুর অভিভাবক শিশুকে হাসপাতালে এনে চিকিৎসা দিয়ে বাড়িতে নিয়ে রাখছে। এছাড়া হাসপাতালের আউটডোরেও শিশুরোগীর প্রচণ্ড ভিড়। রোববার দুপুর পর্যন্ত ১২৫ শিশু রোগীকে আউটডোরে চিকিৎসা দেওয়া হয়।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, হাসপাতালে রোগীর তুলনায় চিকিৎসক ও নার্সের সংখ্যা অপ্রতুল। শিশু ওয়ার্ডে মাত্র দুজন শিশু বিশেষজ্ঞ, তিনজন নার্স আর ছয়-সাতজন ইন্টার্নি নার্স রয়েছেন। তাই রোগীদের চিকিৎসা সেবা দিতে সংশ্লিষ্টদের হিমশিম খেতে হচ্ছে।
এদিকে পাবনা জেনারেল হাসপাতাল ছাড়াও জেলার ৮ স্বাস্থ্য কেন্দ্রে প্রতিদিনই ভর্তি হচ্ছে ঠাণ্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত মানুষ। গুরুতর রোগীদের রেফার করা হচ্ছে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে।
শিশু বিশেষজ্ঞ ও পাবনা মেডিকেল কলেজের সহকারী অধ্যাপক ডা. নীতিশ কুমার কুন্ডু জাগো নিউজকে বলেন, প্রচণ্ড ঠান্ডার কারণে শিশুরোগীর সংখ্যা বেড়েছে। কোল্ড ডায়রিয়ার চেয়ে নিউমোনিয়ার প্রাদুর্ভাব বেশী লক্ষ্য করা যাচ্ছে। আমরা সাধ্যমত চিকিৎসাসেবা দিয়ে যাচ্ছি। করোনা পরিস্থিতিতেও সতর্কতার সঙ্গে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, প্রতি বছরই শীত মৌসুমে এ ধরনের সমস্যা হয়ে থাকে। এবারেও শীত কমে গেলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যাবে।
পাবনা জেনারেল হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. আবু জাফর জাগো নিউজকে বলেন, হাসপাতালের ইনডোর এবং আউটডোরে শিশুদের চিকিৎসা সুষ্ঠুভাবে চলছে। অধিকাংশ শিশুই সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরছে। তবে স্বল্প সংখ্যক চিকিৎসক আর সীমিত জনবলের কারণে হিমশিম খেতে হচ্ছে।
পাবনার ঈশ্বরদী আবহাওয়া অফিসের ইনচার্জ হেলাল উদ্দিন জাগো নিউজকে বলেন, গত এক সপ্তাহ ধরে তাপমাত্রা ৮ ডিগ্রির কাছে ঘোরাফেরা করছে। রোববার তাপমাত্রা ছিল ৮ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়।
আমিন ইসলাম জুয়েল/এসজে/জেআইএম