সংসার চালাতে নতুন ব্রেইল মেশিন চান দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী হাফেজ

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি জামালপুর
প্রকাশিত: ০৪:৪৪ পিএম, ২৫ জানুয়ারি ২০২২
অন্ধ হাফেজ চাঁন সওদাগর

অন্ধ হাফেজ চাঁন সওদাগরের (৫৩) আয়-রোজগারের একমাত্র অবলম্বন ছিল ব্রেইল মেশিনটি। কিন্তু ছয়মাস ধরে মেশিনটি অকেজো। এতে বন্ধ হয়ে গেছে চাঁন সওদাগরের উপার্জন। একটি নতুন ব্রেইল মেশিনের জন্য বিত্তবানদের সহযোগিতা চেয়েছেন তিনি।

স্থানীয় সূত্র জানায়, চাঁন সওদাগর জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার হাতিভাঙ্গা ইউনিয়নের পূর্ব আমখাওয়া গ্রামের মৃত মনছুর আলীর ছেলে। স্ত্রী-সন্তান নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে তিনি ওই ইউনিয়নে বসবাস করে আসছেন।

ব্রেইল মেশিন দিয়ে অন্ধদের জন্য পবিত্র কোরআন ও হাদিসের বই লিখে সংসার চলতো অন্ধ হাফেজ চাঁন সওদাগরের। কিন্তু ছয়মাস ধরে মেশিনটি বিকল হয়ে পড়ে আছে। বিকল হয়ে যাওয়া মেশিনটি সারাতে বহু জায়গায় ঘুরেছেন চাঁন সওদাগর। কিন্তু কারও কোনো সহযোগিতা পাননি।

১০ বছর আগে কিছুলোক তাকে সাহায্য-সহযোগিতা করেছিলেন একটি ব্রেইল মেশিন কেনার জন্য। সেই মেশিনটি অকেজো হয়ে গেছে। বর্তমানে একটি ব্রেইল মেশিন কিনতে ৬০ হাজার টাকা লাগতে পারে। কিন্তু অর্থের অভাবে নতুন মেশিন কিনতে পারছেন না অন্ধ হাফেজ চাঁন সওদাগর। ফলে কর্মহীন হয়ে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে বিপাকে পড়েছেন তিনি।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চাঁন সওদাগরের সংসারে স্ত্রী ও এক ছেলে রয়েছে। ছেলেটি এবার এসএসসি পাস করেছে। এখন কলেজে ভর্তির চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এর মধ্যে ব্রেইল মেশিনটি নষ্ট হয়ে যাওয়ায় ছেলের পড়ালেখা চালিয়ে যাওয়া নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে চাঁন সওদাগরের।

আরও জানা যায়, অনেক কষ্ট করে বসবাসের জন্য তিন শতক জমি কিনেছিলেন চাঁন সওদাগর। ওই জমির মালিকানা নিয়েও এক ব্যক্তির সঙ্গে তার দ্বন্দ্ব চলছে। যেকোনো সময় বসবাসের ঠিকানা হারানোর শঙ্কায়ও ভুগছেন এই অন্ধ হাফেজ।

চাঁন সওদাগর জাগো নিউজকে বলেন, চার বছর বয়সে গুটি বসন্ত রোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন তিনি। সঠিক চিকিৎসা না পাওয়ায় তার দুই চোখই অন্ধ হয়ে যায়। এমনকি ১৯৭৪ সালে দুর্ভিক্ষের সময় মাকে হারিয়ে হয়ে যান এতিম।

অন্ধ হাফেজ চাঁন সওদাগরের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন ‘জয় বাংলা’ বলার কারণে বাবা মনছুর আলীকে ধরে নিয়ে যায় পাকিস্তানি সেনাবাহিনী। পরে মরদেহ নদীতে ভাসিয়ে দেওয়া হয়। ওই সময় এক ইংরেজ নারীর সহযোগিতায় ঢাকায় অন্ধদের একটি বিদ্যালয়ে ভর্তি হন চাঁন সওদাগর। সেখানে দশম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেন এবং কোরআনে হাফেজ হন।

এর মধ্যে ওই ইংরেজ নারী তার দেশে ফিরে গেলে পুরো অভিভাবকহীন হয়ে পড়েন চাঁন সওদাগর। একটি এতিমখানা থেকে ব্রেইল পদ্ধতিতে মেশিনে তাফসিরুল কোরআনে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হয়ে লেখার প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। সেই থেকে ব্রেইল মেশিনে পবিত্র কোরআন, হাদিসসহ অন্যান্য পাঠ্যবই লিখে জীবিকা নির্বাহ করে আসছিলেন তিনি। কিন্তু ছয়মাস ধরে সেই মেশিনটি অকেজো হয়ে যাওয়ায় এখন সংসার চালানো কষ্টসাধ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে অন্ধ হাফেজ চাঁন সওদাগরের।

এ বিষয়ে দেওয়ানগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কামরুন্নাহার শেফা জাগো নিউজকে বলেন, বিষয়টি গতকালই শুনেছি। তার কাছে লোক পাঠানো হয়েছে। খুব শিগগির উপজেলা প্রশাসন, জেলা প্রশাসন ও স্থানীয় সরকার বিভাগের সঙ্গে সমন্বয় করে তাকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করা হবে।

মো. নাসিম উদ্দিন/এসআর/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।