স্ত্রী ছেড়েছেন, ২০ বছর পঙ্গু ছেলেকে আগলে রেখেছেন মা
একটি দুর্ঘটনা ওলটপালট করে দিয়েছে জিনারুল বিশ্বাসের জীবন। অসুস্থ স্বামীকে রেখে স্ত্রী চলে গেলেও ২০ বছর ধরে ছেলের সেবাযত্ন করছেন বৃদ্ধা জহুরা বেওয়া। সন্তানকে বুকে আগলে রেখে জীবন পার করছেন তিনি।
জিনারুল বিশ্বাস (৩৫) রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার বড়বড়িয়া বেলতলার গ্রামের বাসিন্দা। ছোট বেলা থেকে বাসের হেলপারি করতেন। ২০০১ সালে বিয়েও করেন জিনারুল। পরের বছর একটি দুর্ঘটনায় পঙ্গুত্ব বরণ করতে হয় জিনারুলকে। এতে শরীরের নিচের অংশে পচন ধরে। কর্মহীন স্বামীর সংসার ছেড়ে চলে যান স্ত্রী। সে যে গেলেন আজ অবধি স্বামীর কোনো খোঁজই নেননি তিনি।
স্থানীয়রা জানান, অল্প বয়সে জিনারুল তার বাবাকে হারিয়েছেন। এরপর বাসের হেলপারি করতে গিয়ে চারঘাটের আটঘরিয়ায় বাস-ট্রাকের সংঘর্ষে দুই পা হারান তিনি। বাঁচার সম্ভাবনা না থাকলেও মায়ের সেবা-যত্নে কিছুটা সেরে উঠেন। স্ত্রী চলে যাবার পর ভাইরাও তাকে বাড়ি থেকে বের করে দেন। অসহায় জিনারুলের সব দায়িত্ব এসে পড়ে মায়ের কাঁধে।
সরেজমিনে দেখা যায়, বাড়ির পাশে খোলা স্থানে তাকে রাখা হয়। রোদ-বৃষ্টিতে ভিজে কষ্ট করায় ওই গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য জজ মিয়া ও তার সহোদর কমিউনিটি ক্লিনিকের চাকরিজীবী আব্দুল হাকিম বাঁশ-টিনের একটি চালা তুলে দেন। মানুষের দান করা কম্বল ও পুরনো কাপড়ে ঢাকা জিনারুলের আবাস। রাতের অন্ধকারে মোমবাতি জ্বালিয়ে ছেলের মুখে খাবার তুলে দেন। অন্যের বাসায় কাজ করে কিংবা মানুষের কাছে চেয়ে নিজের ও পঙ্গু ছেলের খাবার জোগাড় করেন বৃদ্ধা জহুরা।
জহুরা বেওয়া জানান, মাঝ বয়সে স্বামীকে হারিয়েছেন। হারিয়েছেন বড় ছেলে জহুরুলকেও। এরপর কামরুল, জিয়ারুল, মিনারুল, জিনারুল ও ছোট ছেলে আমিরুলকে মানুষ করেছেন। এখন সব ছেলেরাই আলাদা সংসার নিয়ে ব্যস্ত। বড় ছেলে জহুরুলের রেখে যাওয়া একখণ্ড জমিতে ছোট ছেলের সঙ্গে থাকেন তিনি। সেখানের ঘরটিও ভেঙ্গে পড়ার উপক্রম।
তিনি জানান, ছোট ছেলে আমিরুলও বাসের হেলপার। সে তার ভাই জিনারুলকে একটু-আধটু দেখতো। করোনায় কর্ম না থাকায় এখন আর দেখাশোনা করতে পারে না। গ্রামের লোকজনের কাজ ও চেয়ে-চিন্তেই জীবন চলে।
বড়বড়িয়া বেলতলার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের নবনির্বাচিত ইউপি মেম্বার জামাল উদ্দিন বলেন, ‘অসুস্থতার জন্য স্বজনরা তাকে বাড়িতে থাকতে দেয়নি। রাস্তার পাশে রেখেছে। তীব্র শীতে কষ্টে আছে জিনারুল।’
তিনি আর বলেন, ‘দায়িত্ব বুঝে পেলেই চেয়ারম্যান ও ইউএনওর কাছে জিনারুলের বিষয়ে বলবো। অসহায় জিনারুল ও তার মায়ের জন্য যেনো সরকারের পক্ষ থেকে থাকার ব্যবস্থা করে দেওয়া হয় সে বিষয়েও জোর দাবি জানাবো।’
রাজশাহী জেলা প্রশাসক মো. আব্দুল জলিল বলেন, ‘অসুস্থ ও দরিদ্রদের জন্য সরকারি ফান্ড রয়েছে। সেখান থেকে তাদের অবস্থা বিবেচনা সাপেক্ষে সাহায্য করা হয়। একটি আবেদন প্রেক্ষিতে তাদের বিষয়টি বিবেচনায় নেওয়া হবে।’
ফয়সাল আহমেদ/আরএইচ/জিকেএস