উপকূলের অসহায়-দরিদ্রদের পাশে একজন ‘মানবিক প্রভাষক’
দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলের পিছিয়ে পড়া মানুষদের যেকোনো সমস্যায় এগিয়ে যান এক কলেজ শিক্ষক। অভাবগ্রস্ত, শারীরিক প্রতিবন্ধী, দরিদ্র শিক্ষার্থী ও এতিমদের পড়াশোনার খরচ থেকে শুরু করে অসহায়, অসুস্থদের চিকিৎসাসহ কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেন তিনি।
বলছিলাম শিক্ষকতার পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক কাজে সম্পৃক্ত এক প্রভাষক ইদ্রিস আলীর কথা। স্থানীয়দের কাছে তিনি ‘মানবিক প্রভাষক’ নামে পরিচিত। উপকূলীয় এলাকায় মানুষের যেকোনো বিপদে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন। গড়ে দেন কর্মসংস্থানও।
ইদ্রিস আলীর বাড়ি সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগর ইউনিয়নের সুভদ্রাকাটি গ্রামে। একটি নিম্নবিত্ত পরিবারে তার জন্ম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাওয়ার পরও অর্থের অভাবে ভর্তি হতে পারছিলেন না মেধাবী এ শিক্ষার্থী। এরপর এক ব্যক্তির সহযোগিতায় ভর্তির সুযোগ পান।
৩৫তম বিসিএসে শিক্ষা ক্যাডারে সুযোগ পেয়ে সাতক্ষীরা সরকারি কলেজে যোগ দেন। বর্তমানে তিনি সেখানেই ইতিহাস বিভাগের প্রভাষক হিসেবে কর্মরত আছেন। এ পেশায় থেকেও অতীতের কথা ভোলেননি। শুরুতে বিপদে পড়া শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়াতেন। এরপর শুরু করেন উপকূলের পিছিয়ে পড়া মানুষদের জন্য একের পর এক মানবিক কাজ।
প্রভাষক ইদ্রিস আলী জাগো নিউজকে বলেন, প্রথমে ব্যক্তিগত উদ্যোগে মানবিক সহযোগিতার কাজ শুরু করেছিলাম। এরপর আমার একার পক্ষে এত মানুষের পাশে দাঁড়ানো সম্ভব হচ্ছিল না। ২০১৮ সালের মে মাসে কিছু বন্ধু ও শুভাকাঙ্ক্ষীর সহযোগিতায় ‘হিউম্যানিটি ফার্স্ট’ নামে একটি সামাজিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের মাধ্যমে আমরা মানুষের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করি। আমাদের প্রধান উদ্দেশ্য উপকূলীয় এলাকায় পিছিয়ে পড়া মানুষের কর্মসংস্থানে সহযোগিতার পাশাপাশি কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা।
তিনি আরও বলেন, এখন পর্যন্ত আমাদের সংগঠনের উদ্যোগে ৫২৫টি মানবিক কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হয়েছে। এর মধ্যে ৭০টি প্রতিবন্ধী, বিধবা, পঙ্গু, স্বামী পরিত্যক্তা পরিবারকে কর্মসংস্থান, টিউবওয়েল স্থাপন, গরিব রোগীর চিকিৎসা, লাইব্রেরি, ঝরেপড়া শিক্ষার্থীদের জন্য স্কুল, গৃহনির্মাণসহ নানা মানবিক কার্যক্রম রয়েছে। এছাড়া আমাদের সংগঠনের পক্ষ থেকে শিক্ষার্থীদের মাসিক বৃত্তি দেওয়া হয়। মাতৃহারা শিশুদের দায়িত্ব নিয়েছি আমরা। করোনা ও আম্ফানে ক্ষতিগ্রস্তদের অর্থ সহযোগিতা, অক্সিজেন সিলিন্ডার সুরক্ষা সামগ্রী বিতরণসহ গ্রাম থেকে অ্যাম্বুলেন্সে শহরে করোনা রোগী আনা-নেওয়া।
এ শিক্ষক বলেন, এর বাইরে প্রতিবন্ধীদের চিকিৎসা, পুনর্বাসন ও হুইলচেয়ার বিতরণ করা হয়েছে। প্রতিবছর শীতবস্ত্র বিতরণ, গরিব মানুষদের মাঝে গরু ও ছাগল কোরবানি, মহানুভবতার দেওয়াল, দরিদ্র শিক্ষার্থীদের ভর্তি, ফর্ম ফিলআপ ও বই কিনতে সহায়তা, প্রাকৃতিক দুর্যোগে সতর্কতা, সাইক্লোন শেল্টারে নিয়ে যাওয়া, দুর্যোগ পরবর্তী পুনর্বাসনে একাধিক কাজ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, কাউকে কোনো সহযোগিতার আগে আমরা তার বিষয়ে খোঁজ-খবর নেই। এরপর আমাদের সংগঠনের সবাই মিলে পরামর্শ করে মানবিক এসব কাজের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ সংগ্রহ করি। কখনো কখনো সামাজিক মাধ্যমে সাহায্যের হাত বাড়ানোর জন্য অনুরোধ করি। প্রবাসীরা আমাদের কাজে সহযোগিতা করেন। মানবিক কাজে সমাজের বিত্তবানদের চেয়ে মধ্যবিত্ত এবং নিম্নবিত্তরা বেশি সাহায্য করে।
প্রভাষক ইদ্রিস আলী বলেন, শুধু সহযোগিতা নয় অসহায়দের কর্মসংস্থান করে তাদের পাশে থাকার চেষ্টা করি আমরা। এসব মানবিক কাজের মধ্যে যে প্রশান্তি পাই তা আর কোথাও নেই। সবাই যদি এভাবে নিজের জায়গা থেকে এগিয়ে আসে তবে এক সময় সমাজে পিছিয়ে পড়া বলতে কেউ থাকবে না।
আহসানুর রহমান রাজীব/এসজে/এমএস