কলেজের পুকুর দখল করে উপাধ্যক্ষের মাছচাষ!
বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার পাতারহাট বন্দরে সরকারি রসিক চন্দ্র (আর সি) ডিগ্রি কলেজের তিনটি পুকুরে ইজারা গ্রহণ বা অনুমতি ছাড়াই মাছচাষ করছেন উপাধ্যক্ষ শহিদুল ইসলাম। এ ঘটনায় তাকে কারণ দর্শাতে (শোকজ) বললেও তিনি উত্তর দেননি। শোকজের জবাব না দেওয়ায় উপাধ্যক্ষ শহিদুল ইসলামের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে কলেজ কর্তৃপক্ষ।
সরকারি আর সি কলেজ সূত্রে জানা গেছে, কলেজের প্রায় আড়াই একর জমিতে তিনটি পুকুর রয়েছে। সর্বশেষ ২০১৫ সালে তিন বছরের জন্য পুকুরগুলো ইজারা দেওয়া হয়েছিল। ইজারার টাকা কলেজ তহবিলে জমা হতো। তবে ইজারা দেওয়ার পর বিভিন্ন ঝামেলার সৃষ্টি হয়। এসব কারণে ২০১৮ সালের পর পুকুরগুলো ইজারা দেওয়া থেকে বিরত থাকে কলেজ কর্তৃপক্ষ।
গতবছর করোনার কারণে শিক্ষাপ্রতষ্ঠান বন্ধ ছিল। তবে গতবছরের মে মাস থেকে কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়াই ওই তিনটি পুকরে বাণিজ্যিকভাবে মাছচাষ শুরু করেন উপাধ্যক্ষ শহিদুল ইসলাম। মাছচাষের জন্য পুকুর তিনটি নেট দিয়ে ঘিরে ফেলা হয়েছে। এতে পুকুরের পানি ব্যবহারে সমস্যা তৈরি হয় আশপাশের লোকজনের। এরপর কলেজ চালু হলে পুকুরে দেওয়া মাছের খাবারে দুর্গন্ধে ভোগান্তিতে পড়েন শিক্ষার্থীরা।
এসব কারণে এবং অনুমতি ছাড়া মাছচাষ করায় উপাধ্যক্ষকে গতবছরের ১১ অক্টোবর কারণ দর্শানোর নোটিশ দেন অধ্যক্ষ এ বি এম মাহবুবল হক। তবে নোটিশের জবাব না দিয়ে উপাধ্যক্ষ মাছচাষ অব্যাহত রেখেছেন।
কলেজ সূত্র আরও জানায়, তিন মাস পেরিয়ে গেলেও এখনও নোটিশের জবাব দেননি বা মাছচাষ বন্ধ করেননি উপাধ্যক্ষ শহিদুল ইসলাম। গতবছরের নভেম্বরের মাঝামাঝি সময় মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কলেজ পরিদর্শনে এলে বিষয়টি তারও দৃষ্টিগোচর হয়। তিনি নিয়ম মেনে ইজারা নেওয়া সাপেক্ষে মাছচাষ করতে বলেন। অন্যথায় মাছচাষ বন্ধের নির্দেশ দেন। তারপরও মাছচাষ অব্যাহত রেখেছেন উপাধ্যক্ষ শহিদুল ইসলাম। উল্টো এ সময়ের মধ্যে পুকুরে মাছচাষ করে তা বিক্রিও করছেন।
অভিযোগ প্রসঙ্গে উপাধ্যক্ষ শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘অধ্যক্ষের মৌখিক অনুমতি নিয়েই মাছচাষ শুরু করেছি। অধ্যক্ষ যদি সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে থাকেন তাহলে আমাকে মৌখিকভাবে জানালেই হতো, কারণ দর্শানোর প্রয়োজন ছিল না। এছাড়া কলেজ অধ্যক্ষ একই ভবনের দোতলায় বসেন। আমি বসি নিচতলায়। এমন না যে তিনি অন্যত্র থাকেন।’
তিনি আরও বলেন, আর সি কলেজের শিক্ষার মান উন্নয়নে তিনি নানা উদ্যোগ নিয়েছেন। শিক্ষার্থীরাও সুফল পাচ্ছেন। এসব কারণে অধ্যক্ষ ঈর্ষান্বিত হয়ে মৌখিক অনুমতি দিয়েও এখন অস্বীকার করছেন।
এ বিষয়ে আর সি কলেজের অধ্যক্ষ এ বি এম মাহবুবল হক বলেন, প্রথমে কলেজের কর্মচারী দিয়ে উপাধ্যক্ষ শহিদুল ইসলামকে শোকজ নোটিশ পাঠানো হয়। তবে তিনি ওই নোটিশ গ্রহণ না করায় পরবর্তী সময়ে ডাকযোগে পাঠানো হয়। তারপরও উপাধ্যক্ষ নোটিশও গ্রহণ করেননি।
তিনি বলেন, আর সি কলেজ ২০১৮ সালে সরকারিকরণের গেজেটভুক্ত হয়। এজন্য কলেজের পুকুর কিংবা অন্য কোনো সম্পত্তি ইজারা দেওয়ার এখতিয়ার তাদের নেই। এ কারণে তাকে মৌখিক অনুমতি দেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। বিষয়টি শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে জানানোর প্রক্রিয়া চলছে।
জানতে চাইলে মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. নুরুন্নবী বলেন, শিগগিরই সেখানে জেলে পাঠিয়ে মাছ ধরে তা বিক্রি করা হবে। মাছ বিক্রির টাকা কলেজ কোষাগারে জমা হবে।
সাইফ আমীন/এসআর/জিকেএস