বিলুপ্তির পথে টুল-পিঁড়িতে বসে চুল-দাড়ি কাটা

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি কুড়িগ্রাম
প্রকাশিত: ০৭:২৯ পিএম, ১১ জানুয়ারি ২০২২
হারিয়ে যেতে বসেছে ভ্রাম্যমাণ নরসুন্দরদের চুল ও দাড়ি কাটার এ দৃশ্য

বর্তমানে শহর-বন্দর ও গ্রামের হাটবাজারগুলোতে রয়েছে এসি ও নন-এসি সেলুন। আছে পুরুষদের জন্য পারলারও। সেসব সেলুন ও পারলারে চুল ও দাড়ি কাটার জন্য রয়েছে আধুনিক যন্ত্রপাতি ও মেশিন। তবে কালক্রমে হারিয়ে যেতে বসেছে ভ্রাম্যমাণ নরসুন্দরদের চুল ও দাড়ি কাটার চিত্র। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অন্য অনেক পেশার মতোই নরসুন্দরের এই পেশা প্রায় বিলুপ্তির পথে। তারপরও কখনও কখনও গ্রামাঞ্চল ও চরাঞ্চলের হাটবাজারে চোখে পড়ে ভ্রাম্যমাণ নরসুন্দরের কর্মযজ্ঞ।

ভ্রাম্যমাণ এসব নরসুন্দর চুল কাটার বা ছাঁটার যন্ত্রপাতি নিয়ে বসেন গ্রামীণ ও চরাঞ্চলের হাটবাজারগুলোতে। হাটবাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে আসা ক্রেতারাই নরসুন্দরদের ‘কাস্টমার’।

সম্প্রতি সরেজমিন কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নে ঐতিহ্যবাহী যাত্রাপুর হাটের বিভিন্ন জায়গা ঘুরে দেখা যায়, হাটের বিভিন্ন স্থানে বসে চুল ও দাড়ি কাটার কাজ করছে নরসুন্দরদের কয়েকটি দল। প্রতিটি দলে রয়েছেন ৮-১২ জন নরসুন্দর। কাস্টমারদের পিঁড়ি বা টুলে বসিয়ে চুল ও দাড়ি কাটছেন তারা। কাস্টমারদের সমাগম ছিল চোখে পড়ার মতো।

jagonews24

নরসুন্দরদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কয়েক যুগ ধরে এভাবেই দাড়ি ও চুল কাটছেন তারা। সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে হাটে আসা মানুষজন তাদের কাস্টমার। তারা বিভিন্ন হাটবাজারে খোলা আকাশের নিচে বসে চুল ও দাড়ি কেটে জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন। তারা চুল কাটতে ২০-৩০ টাকা এবং শেভ বা দাড়ি ঠিক করতে ১৫-২০ টাকা নেন।

সদর উপজেলার চরঘনেশ্যামপুর এলাকা থেকে হাটে আসা আইনুল জাগো নিউজকে বলেন, ‘ছোটবেলায় বাবার সঙ্গে হাটে এসে এই ভ্রাম্যমাণ নরসুন্দরদের কাছে চুল কাটাতাম। এখন আমি সন্তানদের এনে চুল কাটাচ্ছি।’

তিনি বলেন, ‘আমি দিনমজুর মানুষ। সেলুনে চুল ও দাড়ি কাটাতে গেলে ৫০ থেকে ১০০ টাকা লাগে। আর এদের কাছে মাত্র ৩০ থেকে ৫০ টাকায় চুল ও দাড়ি কাটানো যায়। সেলুন আর এদের কাজের মান প্রায় সমান।’

jagonews24

যাত্রাপুর ইউনিয়নের রলাকাটা এলাকার বাসিন্দা করিম মোল্লা বলেন, আমাদের এলাকার বেশিরভাগ মানুষই ভ্রাম্যমাণ এই নরসুন্দরদের দিয়ে চুল-দাড়ি কাটান। তাদের কাছে অনেক কম টাকায় চুল-দাড়ি কাটানো যায়।

নরসুন্দর কার্তিক জাগো নিউজকে বলেন, ‘এ পেশা আমার দাদার ছিল। দাদার মৃত্যুর পরে বাবাও ছিলেন এ পেশায়। বাবার কাছ থেকেই আমার এ পেশার হাতেখড়ি। বাবার মৃত্যুর পরে আমিই হাল ধরেছি। টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করছি।’

তিনি বলেন, যাত্রাপুর হাটে সপ্তাহে দুদিন হাট বসে। হাটে হাজার হাজার মানুষের সমাগম হয়। প্রতিটি হাটে চুল ও দাড়ি কেটে ৫০০-৮০০ টাকা আয় হয়। এ আয় দিয়েই সংসার চালাচ্ছি।

jagonews24

তবে নরসুন্দর আব্দুল আজিজ বললেন ভিন্ন কথা। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, যারা এক সময় আমার বাপ-দাদাদের চুল ও দাড়ি কেটেছেন তাদের সন্তানদের এখন বেশিরভাগই শহরমুখী। কেউ জীবিকার সন্ধানে আবার কেউ কেউ উচ্চশিক্ষার জন্য শহরে পাড়ি জমিয়েছেন। এক সময়ে আনুমানিক পাঁচ শতাধিক নরসুন্দর থাকলেও বর্তমানে তা কমে ২০০-তে দাঁড়িয়েছে।

কুড়িগ্রাম জেলা নরসুন্দর সমিতির সাধারণ সম্পাদক শ্রী নির্মল চন্দ্র শীল বলেন, ভ্রাম্যমাণ নরসুন্দরদের সেলুন নেই। তারা হাটবাজারে কাস্টমারদের চুল ও দাড়ি কাটেন। তারা সামান্য পুঁজি খাটান বলে ৩০-৫০ টাকার মধ্যে চুল ও দাড়ি কেটে দেন।

মাসুদ রানা/এসআর/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।