৬ দশকের অপূর্ণতা ঘুচছে লক্ষাধিক মানুষের
ছয় দশকের অপূর্ণতা ঘুচছে নানিয়ারচরসহ তিন উপজেলার লক্ষাধিক মানুষের। বুধবার (১২ জানুয়ারি) ভিডিও কনফারেন্সে উপজেলার চেঙ্গী সেতুর উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
নানিয়ারচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শিউলি রহমান তিন্নি জানান, বুধবার ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সেতু উদ্বোধন করা হচ্ছে। বুধবার নানিয়ারচরে হাটবার। সবধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে সেদিন হাটবার বন্ধ রাখা হয়েছে। সেতু উদ্বোধনকে কেন্দ্র করে থাকছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর নজরদারী।
স্থানীয়রা জানান, কাপ্তাই হ্রদ সৃষ্টির ৬০ বছর পর নানিয়ারচর সেতুতেই দুঃখ ঘুচল রাঙ্গামাটি জেলার দুর্গম তিন উপজেলার মানুষ। চেঙ্গী নদীর ওপর ৫০০ মিটার দীর্ঘ এ সেতু দিয়ে শুধু নানিয়ারচর উপজেলায় নয়, সহজেই যাওয়া যাবে লংগদু ও বাঘাইছড়ি উপজেলায়। অথচ এক সময় নানিয়ারচর উপজেলা সদরে যাওয়ার মতো সরাসরি কোনো সড়ক ছিল না। নৌপথে যেতে দুই ঘণ্টা সময় লাগতো, এখন এক ঘণ্টারও কম সময়ে নানিয়ারচর সদরে সড়ক পথে যাওয়া যাচ্ছে।
একই সঙ্গে বাঘাইছড়ি ও লংগদু উপজেলায় সড়ক পথে যাওয়ার জন্য রাঙামাটি থেকে খাগড়াছড়ি হয়ে যেতে হতো। কিন্তু পার্বত্যাঞ্চলের সবচে দীর্ঘ এ সেতু নির্মাণ হওয়ায় তিন উপজেলার মানুষ সহজেই জেলা সদরের সঙ্গে যাতায়াতের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। একটি সেতুতেই দুর্গমতা ঘুচছে তিন উপজেলার। পাশাপাশি খুব সহজেই সাজেকে চলে যাওয়া সম্ভব হবে। তবে নানিয়ারচর থেকে লংগদু ১৮ কিলোমিটারের সড়কটি এখনো না নির্মাণ হওয়ায় লংগদু ও বাঘাইছড়িবাসী সেতু উদ্বোধনের দিন থেকে এর সুবিধা পাচ্ছে না। সড়কটির প্রকল্প প্রণয়ন করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সরাসরি রাঙ্গামাটি-নানিয়ারচর-লংগদু-বাঘাইছড়ি সড়ক যোগাযোগ স্থাপনের জন্য ১৯৯৩ সালে নানিয়ারচর অংশে চেঙ্গী নদীর ওপর সেতু নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছিল। অবশেষে নানান পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে ২০১৫ সালের ৩১ অক্টোবর সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের নানিয়ারচরের চেঙ্গী নদীর ওপর সেতু নির্মাণের ঘোষণা দিয়েছিলেন। মন্ত্রীর ঘোষণার দুই বছর পর ২০১৭ সালের ১৬ নভেম্বর সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে শুরু হয় সেতু নির্মাণের কাজ। এটি বাস্তবায়নে কাজ করেছে সেনাবাহিনীর ১৯ ইঞ্জিনিয়ারিং কন্সট্রাকশন ব্যাটেলিয়ন (ইসিবি)।
রাঙামাটি থেকে বর্তমানে বাঘাইছড়িতে সড়ক পথে যেতে পাড়ি দিতে হয় প্রায় ১৫০ কিলোমিটার পথ। সময় লাগে প্রায় ৬-৭ ঘণ্টা। তাছাড়া সরাসরি বাস সার্ভিস চালু না থাকায় এ সময় আরও বেশি লাগে। তাই কাপ্তাই হ্রদ সৃষ্টির পর নৌ-পথেই উপজেলাবাসীকে জেলায় যাতায়াত করতে হতো। তাতেও সময় লাগতো প্রায় ৬-৭ ঘণ্টা। একইভাবে রাঙামাটি থেকে সড়ক পথে লংগদু যেতেও প্রায় ১৪০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে হয়। সময়টাও লাগে ৫-৬ ঘণ্টা। এ উপজেলার সঙ্গেও রাঙামাটি সদরের কোনো বাস সার্ভিস চালু নেই। নৌ-পথেই একমাত্র ভরসা। কিন্তু নানিয়ারচরের চেঙ্গি সেতুর মাধ্যমে সেই দুর্গমতা অনেকাংশে ঘুচিয়ে যাচ্ছে। রাঙামাটি থেকে নানিয়ারচরের দূরত্ব প্রায় ৪০ কিলোমিটার। নানিয়ারচর থেকে লংগদু সদরে দূরত্ব ১৮ কিলোমিটার এবং বাঘাইছড়ির দূরত্ব ৩০ কিলোমিটারের মতো। এতে ঘণ্টা বা দেড় ঘণ্টার মধ্যে সরাসরি লংগদু বা বাঘাইছড়ি যাওয়া সম্ভব হবে।
নানিয়ারচর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান প্রগতি চাকমা বলেন, এক সেতুর মাধ্যমে আমাদের অনেক দিনের স্বপ্ন পূরণ হতে চলেছে। আমরা এখন খুব সহজেই জেলা সদরে যাতায়াত করতে পারবো। তাছাড়া এলাকার উৎপাদিত কৃষি পণ্যের পরিবহন ও বাজারজাত সহজ হবে। একই সঙ্গে বাকি দুই উপজেলা লংগদু, বাঘাইছড়ি হয়ে আমরা সাজেকেও চলে যেতে পারবো।
সেতু নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানের তথ্য মতে, ৫০০ মিটার দৈর্ঘ্য ও ১০ দশমিক ২ মিটার প্রস্থের এ সেতু নির্মাণে প্রায় ১২০ কোটি টাকা খরচ হয়েছে এবং দুই কিলোমিটার সড়ক সংযোগের জন্য ১০০ কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছে। এরমধ্যে ৪৬ কোটি ৬১ লাখ টাকা ভূমি অধিগ্রহণের জন্য ব্যয় করা হয়। ২০১৭ সালের ১৬ নভেম্বর সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু হয়।
রাঙ্গামাটি সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী শাহে আরেফিন বলেন, নানিয়ারচর-লংগদু সড়কটি নির্মাণে একটি প্রকল্প প্রস্তুত করা হয়েছে। আশা করছি শীঘ্রই সড়কটির কাজ শুরু করা সম্ভব হবে।
শংকর হোড়/আরএইচ/এএসএম