‘ভাজা বাদাম’ গান গেয়ে বিক্রি বেড়েছে বরিশালের মুঞ্জয়ারার
প্রায় চার বছর ধরে ফেরি করে বাদাম বিক্রি করে সংসার চালান বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার স্বামী পরিত্যক্তা বৃদ্ধা মুঞ্জয়ারা বেগম (৫২)। ঘুরে ঘুরে বাদাম বিক্রি করে কোনোদিন আয় হতো ১০০ টাকা। আবার কোনোদিন ১০০ টাকারও বিক্রি হতো না। তবে সম্প্রতি তার বাদাম বিক্রি বেড়েছে। ফলে আগের চেয়ে আয়ও বেড়েছে।
এর কারণ হিসেবে বৃদ্ধা মুঞ্জয়ারা বেগম জানান, আগে তিনি পুরোনো দিনের বাংলা গান গেয়ে বাদাম বিক্রি করতেন। সম্প্রতি ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কাঁচাবাদাম বিক্রেতা ভুবন বাবুর গানটি একজনের মোবাইলে কয়েকবার শুনে তিনি মুখস্ত করেছেন। এরপর থেকে তিনি ভুবন বাবুর কাঁচাবাদাম গান গেয়ে বাদাম বিক্রি করছেন। তবে গানের একটি শব্দ তিনি পরিবর্তন করেছেন। ‘কাঁচাবাদামের’ জায়গায় ‘ভাজা বাদাম’ শব্দ দিয়ে গাইছেন। তবে সুর একই রয়েছে। এই গানে তার বিক্রি বেড়েছে।
এই নারী বাদাম বিক্রেতা আরও বলেন, চার বছর ধরে তিনি পুরোনো দিনের বাংলা গান গেয়ে বাদাম বিক্রি করছেন। তবে তার গানে আগে তেমন কেউ মনোযোগ দিতেন না, এখন ‘ভাজা বাদাম’ গান গাওয়ার কারণে মানুষের আগ্রহ বেড়েছে। গান শুনতে তার কাছে মানুষ আসছেন। আনন্দ পাচ্ছেন। কেউ কেউ মোবাইলে তার ছবি তুলছেন ও ভিডিও করছেন। এতে তার আগের চেয়ে বাদাম বিক্রি বেড়েছে। এখন আগের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ আয় হচ্ছে তার।
মুঞ্জয়ারা বেগমের বাবার বাড়ি পিরোজপুরের নেছারাবাদ উপজেলার সোহাগদল গ্রামে। সংসারে অভাব-অনটনের কারণে বরিশালের মুলাদী উপজেলার মীরগঞ্জ এলাকার সেলিম সরদারের সঙ্গে কিশোরী বয়সেই তাকে বিয়ে দেওয়া হয়। বিয়ের পর তাদের এক মেয়ে ও এক ছেলে হয়। তবে সেই সংসার বেশি দিন টেকেনি। টাকা চেয়ে সেলিম সরদার তাকে মারধর করতেন। ছেলেমেয়েকে নিয়ে তাকে তাড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করতেন। পরে সেলিম সরদার আরেকটি বিয়ে করেন। সেই বউকে ঘরে তোলেন। আর মুঞ্জয়ারা বেগমকে তালাক দিয়ে ছেলেমেয়েসহ ঘর থেকে বের করে দেন।
স্বামীর ঘর থেকে তাড়িয়ে দেওয়ার সময় মেয়ে সুলতানার বয়স ছিল পাঁচ বছর। আর ছেলে সাইফুলের দুই বছর। মাথা গোঁজার কোনো ঠাঁই ছিল না। ছেলেমেয়েকে নিয়ে অনেক কষ্টে দিনযাপন করতে থাকেন।
খোলা আকাশের নিচে পলিথিন টানিয়ে অনেক দিন পার করতে হয়েছে। এরপর শুরু হয় সন্তানদের নিয়ে বেঁচে থাকার লড়াই। তবে ভেঙে পড়েনি সংগ্রামী মুঞ্জয়ারা। নিজের আর সন্তানদের জন্য দু’বেলা দু’মুঠো খাবার জোগাতে কখনো মাটি কেটেছেন, আবার কখনো গৃহকর্মীর কাজ করেছেন। যেখানে যখন আশ্রয় পেয়েছেন সেখানেই থেকেছেন। তবে বয়স বেড়ে যাওয়ার কারণে এখন আর ভারী কাজ করতে পারেন না মুঞ্জয়ারা। তাই চার বছর ধরে বাদাম বিক্রি করছেন।
বাদাম বিক্রেতা মুঞ্জয়ারা বেগম জাগো নিউজকে বলেন, ‘মেয়ে সুলতানাকে এসএসসি পাস করিয়ে বিয়ে দিয়েছি। ছেলে সাইফুল এবার এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে। চেয়ারম্যান ও মেম্বার কষ্ট-সংগ্রামের কথা জানতে পেরে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের একটি ঘরের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। মাসখানেক আগে ছেলেকে নিয়ে ওই ঘরে উঠেছি। ভাজা বাদাম বিক্রির আয় দিয়ে ছেলে ও আমার খাবার জুটছে।’
তিনি বলেন, ভাজা বাদাম গানের কারণে বিক্রি আগের তুলনায় বেড়েছে। আগে দিনে কেজিখানেক বাদাম বিক্রি করতে কষ্ট হতো। এতে আয় হতো ৮০ থেকে ১০০ টাকা। এখন ভাজা বাদাম গান গেয়ে মানুষের কাছ থেকে ভালো সাড়া পাচ্ছি। এখন দিনে দুই কেজির মতো বাদাম বিক্রি হচ্ছে। আয় প্রায় দ্বিগুণ হচ্ছে। মুঞ্জয়ারা বেগম আশা করছেন, তার গাওয়া ভাজা বাদাম গানও জনপ্রিয় হবে উঠবে।
এ বিষয়ে বাবুগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আমিনুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, ‘বৃদ্ধা মুঞ্জয়ারা বেগমের বিষয়টি আমি অবগত আছি। গত ১৬ ডিসেম্বর একটি অনুষ্ঠানে তাকে বাদাম বিক্রি করতে দেখেছি। তাকে কীভাবে সহায়তা করা যায় ভাবছি। আমিও চাচ্ছি এই বয়সে তাকে যেন ঘুরে ঘুরে বাদাম বিক্রি করতে না হয়।’
সাইফ আমীন/এসআর/জিকেএস