‘সন্তানের হার্টের চিকিৎসার টাকা জোগাড়ে এসে ধর্ষণের শিকার হয়েছি’

সায়ীদ আলমগীর
সায়ীদ আলমগীর সায়ীদ আলমগীর কক্সবাজার
প্রকাশিত: ০৬:৩৮ পিএম, ২৫ ডিসেম্বর ২০২১
ধর্ষণের শিকার নারী

‘আটমাস বয়সী বাচ্চাটির হার্টে ছিদ্র রয়েছে। তার চিকিৎসায় ১০ লাখ টাকা প্রয়োজন। কোথাও কোনো উপায় না দেখে অসুস্থ বাচ্চার চিকিৎসার টাকা জোগাড়ে স্বামীসহ কক্সবাজার এসেছি। এখানে গত তিনমাস ধরে অবস্থান করছি। টাকা জোগাড়ে যখন যেখানে ডাক পেয়েছি গেছি। এসময়ে সন্ত্রাসীদের খপ্পরে পড়ে চাঁদাবাজির শিকার হই। বাধ্য হয়ে ১০ হাজার টাকা চাঁদাও দিয়েছি। পরে আবার চাঁদা চাইলে স্বামীর সঙ্গে সন্ত্রাসীদের বাগবিতণ্ডা হয়। এর সূত্র ধরে তুলে নিয়ে দলবদ্ধ ধর্ষণ করা হয়েছে।’

আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন কক্সবাজারে ধর্ষণের শিকার ওই নারী। জবানবন্দিতে এভাবেই কথাগুলো বলেছেন তিনি। শুক্রবার (২৪ ডিসেম্বর) বিকেলে কক্সবাজার সদরের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট হামীমুন তানজিনের আদালতে জবানবন্দি দেন ওই নারী।

আদালতে দেওয়া জবানবন্দির বরাত দিয়ে পুলিশের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা দাবি করেন, সন্তান বাঁচানোর জন্য টাকা জোগাড় করতে গিয়ে ওই নারী দেহ ব্যবসায় জড়ান বলে আদালতে স্বীকার করেছেন। সন্ত্রাসী আশিকুল ইসলামের সঙ্গে তার পরিচয় হয়েছে ঘটনার দুইদিন আগে, সোমবার (২০ ডিসেম্বর) সকালে কলাতলী এলাকায় সি-ল্যান্ড নামের একটি গেস্ট হাউজে।

ওইদিন আশিক ওই নারীর কাছ থেকে ৩০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করেন। তিনি বাধ্য হয়ে ১০ হাজার টাকা দেন। আরও টাকা দাবি করলে তার স্বামী সন্ত্রাসীদের সঙ্গে বাগবিতণ্ডায় জড়ান। এ কারণে বুধবার (২২ ডিসেম্বর) রাত ৮টার দিকে ওই নারীকে কলাতলী লাইট হাউজ এলাকার একটি কটেজের সামনে থেকে মোটরসাইকেলে তুলে নিয়ে যান আশিক।

ওই নারী জবানবন্দিতে আরও বলেন, বুধবার রাত ৮টার দিকে সৈকত পোস্ট অফিসের পেছনে একটি ঝুপড়ি চায়ের দোকানের পেছনে নিয়ে যাওয়া হয় তাকে। সেখানে আশিকের দুই বন্ধু তাকে ধর্ষণ করেন। এরপর আশিক তাকে আবার মোটরসাইকেলে তুলে নিয়ে যান কলাতলী এলাকার জিয়া গেস্ট ইন নামের একটি হোটেলে। তাকে নিয়ে ওই হোটেলের একটি কক্ষে ওঠেন আশিক। সেখানে ইয়াবা সেবন করে ধর্ষণ করেন। এক পর্যায়ে একটি ফোন কলে পুলিশের উপস্থিতির কথা জানতে পেরে আশিক কক্ষ থেকে দ্রুত বের হয়ে যান।

ভুক্তভোগী ওই নারী আরও বলেছেন, তিনি হোটেল কক্ষ থেকে বের হয়ে পর্যটন মোটেলের সামনের সড়কে আসেন। সেখানে র‌্যাবের কয়েকজন সদস্যের সঙ্গে স্বামীকে কথা বলতে দেখেন। পরে র‌্যাব তাকে নিয়ে হোটেল জিয়া গেস্ট ইনে আসে।

তবে এর আগে বৃহস্পতিবার (২৩ ডিসেম্বর) ওই নারী অভিযোগ করেছিলেন, বুধবার বিকেলে সৈকতের লাবনী পয়েন্টে তারা বেড়াতে যান। সেখানে অপরিচিত এক যুবকের সঙ্গে তার স্বামীর ধাক্কা লাগলে কথা-কাটাকাটি হয়। এর জের ধরে সন্ধ্যার পর পর্যটন গলফ মাঠের সামনে থেকে তার আট মাসের সন্তান ও স্বামীকে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় করে কয়েকজন তুলে নিয়ে যান। এসময় আরেকটি অটোরিকশায় ওই নারীকে তুলে নেয় তিন যুবক। পর্যটন গলফ মাঠের পেছনে একটি ঝুপড়ি চায়ের দোকানের পেছনে নিয়ে তাকে ধর্ষণ করেন তিনজন।

এরপর তাকে নেওয়া হয় কলাতলীতে জিয়া গেস্ট ইন নামের একটি হোটেলে। সেখানে ইয়াবা সেবনের পর আরেক দফা তাকে ধর্ষণ করেন ওই তিন যুবক। ঘটনা কাউকে জানালে সন্তান ও স্বামীকে হত্যা করা হবে জানিয়ে কক্ষ বাইরে থেকে বন্ধ করে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন তারা। পরে র‌্যাব এসে তাকে উদ্ধার করে।

চাঞ্চল্যকর এ ধর্ষণের ঘটনায় বৃহস্পতিবার রাতে কক্সবাজার সদর থানায় চারজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন ওই নারীর স্বামী। মামলার আসামিরা হলেন- আশিকুল ইসলাম এবং তার তিন সহযোগী আবদুল জব্বার ওরফে ইস্রাফিল হুদা ওরফে জয়, মেহেদী হাসান ওরফে বাবু ও রিয়াজ উদ্দিন ছোটন।

ট্যুরিস্ট পুলিশকে মামলার তদন্তভার দেওয়া হয়েছে। আসামিদের মধ্যে জিয়া গেস্ট ইনের ম্যানেজার রিয়াজ উদ্দিন ছোটনকে বৃহস্পতিবার রাতেই গ্রেফতার করে র‌্যাব। এদের মধ্যে কক্সবাজার সদর থানায় আশিকের নামে অস্ত্র, মাদক, নারী নির্যাতন ও চাঁদাবাজিসহ ১৭টি এবং জয়ের নামে দুটি মামলা রয়েছে। তারা এখনো কক্সবাজার শহরে অবস্থান করছেন বলে একাধিক সূত্র দাবি করেছে।

আদালতে দেওয়া ওই নারীর জবানবন্দির বিষয়টি স্বীকার করে কক্সবাজারে ট্যুরিস্ট পুলিশের এসপি মো. জিল্লুর রহমান বলেন, কারো অসম্মতিতে মিলন করা মানে তাকে ধর্ষণ করা হয়েছে। ওই নারী যদি তার সন্তান বাঁচানোর জন্য অসামাজিক কার্যকলাপের সঙ্গে জড়িত হন এটি তার ব্যক্তিগত এবং পারিপার্শ্বিক বিষয়। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে তিনি দাবি করেছেন তাকে ধর্ষণ করা হয়েছে। এখন আমরা সব বিষয় মাথায় রেখে মামলাটি তদন্ত করছি। একই সঙ্গে সন্ত্রাসীদের গ্রেফতারের জন্য অভিযান অব্যাহত রাখা হয়েছে।

সায়ীদ আলমগীর/এসআর/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।