‘আমাদের সামনেই জ্বলন্ত মানুষ নিচে পড়ছিল’

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি বরগুনা
প্রকাশিত: ০৯:১১ পিএম, ২৪ ডিসেম্বর ২০২১
লঞ্চে ভয়াবহ সেই অগ্নিকাণ্ডের বর্ণনা দিয়েছেন বেঁচে যাওয়া বরগুনার সাব্বির মাহমুদ-

ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা এমভি অভিযান-১০ নামের একটি লঞ্চে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় এ পর্যন্ত ৪০ জনের প্রাণহানি হয়েছে। আহত হয়েছেন আরও শতাধিক যাত্রীয়। নিখোঁজ রয়েছেন অনেকে।

ভয়ংকর এ দুর্ঘটনা থেকে মা, ভাগ্নে ও নানিকে নিয়ে বেঁচে ফিরে এসেছেন রাজধানীর ক্যামব্রিয়ান স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী সাব্বির মাহমুদ (১৮)। তিনি বরগুনা পৌরশহরের পুলিশ লাইন এলাকার বাকির হোসাইনের ছেলে।

দুর্ঘটনার পরে ঝালকাঠি সদর হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে শুক্রবার (২৪ ডিসেম্বর) দুপুরে মা, নানি এনং ভাগ্নেকে নিয়ে বাসায় ফেরেন সাব্বির। গতকালের পুরো ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন তিনি।

সাব্বির মাহমুদ বলেন, ‘আমি এবার এইচএসসি পরীক্ষা দিয়েছি। পরীক্ষা শেষ হওয়ায় আম্মু, নানি এবং নেজাদ নামের এক ভাগ্নেকে নিয়ে ঢাকা থেকে বরগুনা রওনা হই। বৃহস্পতিবার (২৩ ডিসেম্বর) ভোর ৬টায় সদরঘাট থেকে লঞ্চ ছাড়ে। লঞ্চে প্রচুর যাত্রী থাকায় আমরা কেবিন পাচ্ছিলাম না। অনেক খোঁজাখুঁজির পর দ্বিতীয়তলায় পেছনের দিকে ডেকে জায়গা পাই। লঞ্চ কিছুক্ষণ চলার পরে সন্ধ্যা ৭টার দিকে আমরা টের পেলার আমাদের কেবিনের মেঝে অসহ্য রকম গরম হয়ে যাচ্ছে। পরে গরমের তীব্রতা বাড়তে থাকলে ওখানে দায়িত্বরত স্টাফরা আমাদের নিচতলায় মেইন গেটের পাশে অন্য আরেকটি স্টাফ কেবিনে থাকার ব্যবস্থা করে দেন।’

তিনি বলেন, ‘রাত গভীর হলে আমি ঘুমিয়ে পড়ি। আম্মু, নেজাদ ও নানি লুডো খেলছিলেন। হঠাৎ আম্মুর ডাকাডাকিতে আমার ঘুম ভাঙে। বাইরে গিয়ে দেখি ইঞ্জিনরুমের ওদিকে প্রচুর আগুন জ্বলছে। ধোঁয়ায় পুরো লঞ্চ ছেয়ে গেছে। দ্বিতীয় ও তৃতীয়তলা থেকে লোকজন নিচে পড়ছে। মানুষের আহাজারিতে আমরা নিরূপায় হয়ে তাকিয়ে ছিলাম শুধু। আমাদের সামনেই জ্বলন্ত মানুষ নিচে পড়ছিল।’

“এরকম ৪০ থেকে ৫০ মিনিট চলছিল। এরপর লঞ্চ নদীর চরের পাশ বেয়ে যেতে থাকে। সবাই লাফিয়ে তীরে নামছে, অনেকে পুড়ছে। পোড়া মানুষের গন্ধে আশপাশের পরিবেশ দুর্বিষহ হয়ে গিয়েছিল। এমন সময় আমরা দৌড়ে গিয়ে লঞ্চের একদম সামনের খোলা জায়গায় চলে যাই। তখন আম্মু আমাকে বলেন- সাব্বির, আর মনে হয় বাঁচতে পারবি না। কারও সাথে কথা বলার থাকলে কল কর এখনই’। এটা শোনার পরে আমার মনে হচ্ছিল আমি বোধহয় সত্যিই মরে গেছি। তবুও আম্মুকে বললাম, ‘ওদেরকে নিয়ে লাফ দাও’।”

‘আমি নিজেও কোনোকিছু না ভেবে সামনে লাফ দেই। আমার সঙ্গে আম্মু, নানি ও নেজাদও লাফ দেন। আমি লাফিতে তীরে উঠলেও আম্মুরা পানিতে পড়ে যান। পরে তারা তীরে উঠে আসেন। তবে আমি কোমরে ব্যথা পেয়েছি।’

‘এরপর স্থানীয়রা আমাদের ধরে রাস্তায় নিয়ে যায়। আমি রাস্তায় শুয়ে পড়ি। একটু পর অ্যাম্বুলেন্স এসে আমাদের ঝালকাঠি হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে চিকিৎসা নিয়ে আজ দুপুরে বাসায় আসি’, বলেন মৃত্যুপুরী থেকে বেঁচে আসা সাব্বির।

বৃহস্পতিবার দিনগত গভীর রাতে ঢাকা থেকে বরগুনাগামী লঞ্চটিতে আগুন লাগে। খবর পেয়ে বরিশাল, পিরোজপুর, বরগুনা ও ঝালকাঠির কোস্ট গার্ড ও ফায়ার সার্ভিস উদ্ধারকাজ শুরু করে। এখন পর্যন্ত লঞ্চে অগ্নিকাণ্ডে ৪০ জনের মৃত্যুর খবর মিলেছে। দগ্ধদের মধ্যে ৭২ জনকে বরিশাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বাকিদের আশপাশের বিভিন্ন হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।

এসআর/এএসএম

টাইমলাইন  

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।