শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুললেও ফেরেনি ফেনীর ২৫ হাজার শিক্ষার্থী

নুর উল্লাহ কায়সার
নুর উল্লাহ কায়সার নুর উল্লাহ কায়সার , ফেনী
প্রকাশিত: ০৪:১৯ পিএম, ১৯ ডিসেম্বর ২০২১
ফেনী সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় ও শাহীন একাডেমি স্কুল অ্যান্ড কলেজ

করোনা পরবর্তী সময়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুললেও ফেনীতে স্কুলে ফেরেনি ২৫ হাজার ৪৬২ শিক্ষার্থী। এদের মধ্যে উচ্চ মাধ্যমিকে ২৩ হাজার ৪১৭ জন ও প্রাথমিক পর্যায়ে দুই হাজার ৪৫ জন শিক্ষার্থী রয়েছে।

জেলা শিক্ষা অফিস সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ও অভাব-অনটনে কর্মে ঢুকে যাওয়া, পারিবারিক অবস্থান পরিবর্তন, বাল্যবিয়ে ও স্কুলের বকেয়া পরিশোধের ভয়ে অনুপস্থিতির সংখ্যা বড় হয়েছে। তবে অনুপস্থিতির প্রকৃত কারণ ও সংখ্যা নির্ণয়ে হোম ভিজিটসহ শিক্ষার্থীর পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করছে শিক্ষা বিভাগ।

সূত্র জানায়, জেলায় ১৯৫ উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ১০০ দাখিল মাদরাসা ও ৫৫৯ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে করোনাকালীন বন্ধের আগে তিন লাখ ২৯ হাজার ১০৪ শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত ছিলো। করোনা ঝুঁকি কমে আসায় চলতি বছরের ১২ সেপ্টেম্বর থেকে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার পর ১০ অক্টোবর পর্যন্ত অনুপস্থিত শিক্ষার্থীর বিষয়ে প্রতিবেদন তৈরি করে শিক্ষা বিভাগ।

jagonews24

ওই প্রতিবেদন মতে, জেলায় উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে ২৩ হাজার ৪১৭ শিক্ষার্থী অনুপস্থিতির বিষয়টি উঠে আসে। এরমধ্যে দুই হাজার ৭৭ এসএসসি পরীক্ষার্থী। একই সময়ে জেলার ৫৫৯ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দুই হাজার ৪৫ শিক্ষার্থী অনুপস্থিত রয়েছে বলে জানানো হয়।

প্রতিবেদনে দেখা যায়, জেলায় অষ্টম ও নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের উপস্থিতির হার ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। কিন্তু ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণি পর্যায়ে অনুপস্থিতির হার বড়ছে না।

jagonews24

জেলার ছাগলনাইয়া উপজেলার পাঠাননগর ইউনিয়নের আনোয়ারা বেগম আদর্শ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ঝরে পড়া তালিকায় দেখা যায়, করোনার আগে এ বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণিতে ২১ শিক্ষার্থী ছিলো। স্কুল খোলার পর সে সংখ্যা নেমে আসে ১৩ জনে। একই স্কুলের সপ্তম শ্রেণিতে ২৭ জন থেকে ১৯ জনে চলে আসে উপস্থিতির সংখ্যা।

দাগনভূঞা উপজেলায় ষষ্ঠ শ্রেণিতে পাঁচ হাজার ৬০০ শিক্ষার্থী থাকলে করোনার পর সেটি চার হাজার ৭৬০ জনে চলে আসে। এ শ্রেণিতে এখন পর্যন্ত অন্তত ১৫ ভাগ শিক্ষার্থী অনুপস্থিত রয়েছে। একই শ্রেণিতে পরশুরামে এক হাজার ৬৩৯ জনের মধ্যে স্কুলে ফিরেনি ২৪৬ জন। তবে জেলার অন্যান্য উপজেলার তুলনায় সোনাগাজীতে ঝরে পড়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা তুলনামূলক কম রয়েছে।

প্রাপ্ত তথ্য বলছে, ফেনী সদর উপজেলার ৬৫ উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ১১ হাজার ৪১৫ জন ও ২৩ দাখিল মাদরাসায় দুই হাজার ৫০৮ শিক্ষার্থী করোনা পরবর্তী সময়ে বিদ্যালয়ে ফিরেনি। একইভাবে ছাগলনাইয়ার ৩০ বিদ্যালয়ে দুই হাজার ৮৩৭ জন, ফুলগাজীর ২২ বিদ্যালয়ে ৩২১ জন, সোনাগাজীতে এক হাজার ৭৬৮ জন, দাগনভূঞায় তিন হাজার ৩৪৯ জন ও পরশুরাম উপজেলায় এক হাজার ২১৯ জন শিক্ষার্থী করোনা পরবর্তী সময় থেকে স্কুলে অনুপস্থিত রয়েছে।
একই সময়ে জেলার ৫৫৯ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দুই হাজার ৪৫ শিক্ষার্থী অনুপস্থিত রয়েছে।

jagonews24

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক অভিভাবক জানান, ফেনীর একটি স্কুলে তিন ছেলে-মেয়ে পড়াশোনা করে। করোনাকালীন সময়ে পারিবারিক ব্যয় কমাতে গ্রামের বাড়িতে চলে যাই। স্কুল খোলার পর ২৫ হাজার টাকা বকেয়া রয়েছে জানতে পারি। একসঙ্গে এতো টাকা জোগাড় করা পক্ষে সম্ভব নয় বলে সন্তানদের স্কুলে পাঠানো হয়নি। নতুন শিক্ষাবর্ষে শহরের অন্য স্কুলে তাদের ভর্তি করিয়ে নতুন করে বাসা ভাড়া নেব।

তানিয়া সুলতানা নামের এক শিক্ষিকা জানান, দীর্ঘদিন স্কুল বন্ধ থাকায় কিছু শিক্ষার্থী পাড়া-মহল্লায় গড়ে ওঠা মাদরাসায় ভর্তি হয়ে গেছে। পারিবারিক আয় কমে যাওয়ায় আর্থিক অনিশ্চয়তায় কিছু শিক্ষার্থী শহর ছেড়ে গ্রামে চলে গেছে। আবার কেউ কেউ পরিবারকে আর্থিক সহায়তা দিতে কাজে ঢুকে পড়েছে। করোনাকালীন সময়ে অনেক কিশোরীর বিয়ে হয়ে গেছে। এসব কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ঝরে পড়ার হার বেড়ে গেছে।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. নুরুল ইসলাম জাগো নিউজকে জানান, প্রাথমিক পর্যায়ে দুই হাজারের বেশি শিক্ষার্থী অনুপস্থিত রয়েছে। অনুপস্থিতির কারণ নির্ণয় করে তাদের স্কুলে ফেরানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা কাজী সলিম উল্লাহ জাগো নিউজকে জানান, বিভিন্ন উপজেলা থেকে প্রাপ্ত তথ্যগুলো পুরোপুরি সঠিক বলা যাবেনা। করোনা পরবর্তী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে উপস্থিতির হারটি ক্রমবর্ধমান।

নুর উল্লাহ কায়সার/আরএইচ/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।