ওয়াজ মাহফিল নিয়ে দ্বন্দ্বে দুই খুন, এলাকা রণক্ষেত্র

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি ময়মনসিংহ
প্রকাশিত: ০৬:১৯ পিএম, ১১ ডিসেম্বর ২০২১

ময়মনসিংহ সদরে ওয়াজ মাহফিল নিয়ে সংঘর্ষে দুই ভাই নিহত হওয়ার পর এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। এ ঘটনায় এক পক্ষের বাড়িতে চলছে স্বজন হারানোর আহাজারি। অন্য পক্ষের বাড়িতে হয়েছে ব্যাপক ভাঙচুর। নিয়ে গেছে গরু ও ছাগল। পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে কম্বল, লেপ, তোশক। এতে আতঙ্ক বিরাজ করছে পুরো এলাকায়।

শনিবার (১১ ডিসেম্বর) দুপুরে সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, শুক্রবার দুপুর ১২টার দিকে উপজেলার চর সিরতা ইউনিয়নের নয়াপাড়া গ্রামে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে ওই এলাকার আলী আকবরের দুই ছেলে রফিকুল ইসলাম (৩৫) ও সফিকুল ইসলাম (৩০) মারা যান।

স্থানীয়রা জানান, দুই বছর ধরে স্থানীয় তালেবিয়া জামে মসজিদ ও মাদরাসার জমি নিয়ে আলী আকবর ও হাসিম মেম্বারের সঙ্গে বিরোধ চলে আসছে। এনিয়ে সম্প্রতি আলী আকবর ও হাসিম মেম্বার দুটি কমিটি করেন। হাসিমের পক্ষ ২৪ নভেম্বর মাদরাসার মাঠে ওয়াজ মাহফিলের আয়োজন করা হয়। আয়োজন বন্ধে আকবর পুলিশের কাছে আবেদন করেন। এ নিয়ে এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করে। পুলিশ দুপক্ষের সংঘর্ষ ঠেকাতে ওয়াজ মাহফিল বন্ধ করে দেয়।

ওয়াজ মাহফিল নিয়ে দ্বন্দ্বে দুই খুন, এলাকা রণক্ষেত্র

অন্যদিকে স্থানীয় ৫ নম্বর সিরতা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আবু সায়িদ দুপক্ষকে মীমাংসা করার কথা বলে পরিবেশ শান্ত করেন। তবে হাসিম মেম্বার ও তার লোকজন শুক্রবার সকালে দেশীয় অস্ত্র ও লাঠিসোটা নিয়ে আলী আকবর ও তার দুই ছেলের ওপর হামলা চালান।

হামলায় আলী আকবর ও তার দুই ছেলে রফিকুল ইসলাম এবং সফিকুল ইসলাম গুরুতর আহত হন। স্থানীয়রা আহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়ার পথে রফিকুল ইসলাম মারা যান। সফিকুল ইসলামকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় চিকিৎসকরা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করেন। পরে সেখানে রাত ৯টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সফিকুল ইসলামও মারা যান।

এদিকে মৃত্যুর খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে হাসিম মেম্বারের বাড়িতে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর করে গরু-ছাগল নিয়ে যায় উত্তেজিত জনতা।

ওয়াজ মাহফিল নিয়ে দ্বন্দ্বে দুই খুন, এলাকা রণক্ষেত্র

স্থানীয় ইউনুস মিস্ত্রি নামে একজন বলেন, সম্প্রতি মসজিদ কমিটির এক পক্ষ ওয়াজ মাহফিলের আয়োজন করে। কিন্তু অন্যপক্ষ তা করতে দেবে না বলে পুলিশের কাছে আবেদন করে। পরে পুলিশ ওয়াজ মাহফিল বন্ধ করে দেয়। এনিয়ে দুপক্ষের মারামারিতে দুজন মারা গেছে।

কাছম আলী নামে আরেকজন বলেন, মূলত মসজিদের জমি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে দুপক্ষের মধ্যে বিরোধ চলে আসছিল। জমির বিরোধ নিয়ে কমিটি ভেঙে মসজিদ ও মাদরাসার নাম পাল্টে দিয়ে হাসিম মেম্বার ওয়াজ মাহফিলের আয়োজন করেন। পরে পুলিশের হস্তক্ষেপে মাহফিল বন্ধ হয়। তবে কেউ পরাজয় মানতে নারাজ। তাই এ ঘটনা ঘটে।

এ বিষয়ে আলী আকবর জাগো নিউজকে বলেন, বিষয়টি চেয়ারম্যান মীমাংসা করে দেওয়ার কথা বলেছিলেন। তবে হাসিম মেম্বার ও তার লোকজন হামলা চালিয়ে আমার দুই ছেলেকে খুন করেছে।

ওয়াজ মাহফিল নিয়ে দ্বন্দ্বে দুই খুন, এলাকা রণক্ষেত্র

এ বিষয়ে জানতে হাসিম মেম্বারের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। কারণ তারা পলাতক।

এ বিষয়ে ৫ নম্বর সিরতা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু সায়িদের নম্বরে কল দিলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

এ বিষয়ে কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহ কামাল আকন্দ জাগো নিউজকে বলেন, হাসিম মেম্বারের লোকজন ওয়াজ মাহফিলের আয়োজন করে। তবে আলী আকবরের লোকজন মাহফিল করতে দেবে না বলে আবেদন করে। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ওয়াজ মাহফিল বন্ধ করা হয়। কিন্তু এরপরও দুপক্ষের সংঘর্ষে দুজন নিহত হয়েছে। এ ঘটনায় এখনো কোনো মামলা হয়নি। তবে দুজনকে আটক করা হয়েছে।

মঞ্জুরুল ইসলাম/এসজে/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।