জমকালো আয়োজনে পর্দা উঠলো বিচ কার্নিভালের
শীতের আবহে একদিকে সাগরে ঢেউয়ের গর্জন অপরদিকে ঝাউবনের শন শন সুর। এরই মাঝে বেজে উঠলো মাইক্রোফোনে গানের তাল। একটু পরে মঞ্চে উঠে এলো রঙিন সাজের কিশোরীর দল। গানের তালে তালে অসংখ্য সাগরপ্রেমীর মনে দোলা দিয়ে নামে তারা।
এরপর আসে আরেক দল নৃ-গোষ্ঠি। তাদের নিজস্ব গানের তালে নিজস্ব ধারার নাচ বিমোহিত করে দেয় সাগর পাড়ে আগত আবাল-বৃদ্ধ-বণিতাকে। এমনই হরেক রকম অনুষ্ঠানমালায় পর্দা উঠলো মেগা বিচ কার্নিভালের প্রথম আসরের। বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় সমুদ্র সৈকতে বালিয়াড়িতে বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে তিন দিনের বিচ কার্নিভালের উদ্বোধন ঘোষণা করেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত।
উদ্বোধনীতে অর্থমন্ত্রী মুহিত বলেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ দ্রুত গতিতে এগুচ্ছে। এসময়কার অর্থনৈতিক উন্নয়নে পর্যটন শিল্পের অবদানও কম নয়। তাই বর্তমান সরকার কক্সবাজার তথা সারাদেশের পর্যটনে নতুন মাত্রা যোগ করতে নানা পদক্ষেপ হাতে নিয়েছে। বিচ কার্নিভাল দিয়ে শুরু হয়েছে এসব পদক্ষেপগুলোর বাস্তবায়ন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ও র্যালিতে বিভিন্ন স্তরের লাখো মানুষ দেখে অভিভূত হয়ে মন্ত্রী বলেন, এই মেগা বিচ কার্নিভালে পরিণত হয়েছে সম্প্রীতির এক মিলন মেলায়। তিনি নির্বিঘ্নে সকলকে বিচ কার্নিভাল উপভোগ করতে অনুরোধ জানান।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন, বেসামরিক বিমান ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নছরুল হামিদ বিপু, কক্সবাজার সদর আসনের সাংসদ সাইমুম সরওয়ার কমল, মহেশখালী-কুতুবদিয়ার সাংসদ আশেক উল্লাহ রফিক, পর্যটন সচিব খোরশেদ আলম চৌধুরী, পর্যটন বোর্ডের চেয়ারম্যান আখতারুজ্জামান খান কবির।
জেলা প্রশাসক আলী হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন, ট্যুরিস্ট পুলিশের ডিআইজি, কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অ্যাড. একে আহমদ হোসেন, অ্যাড. সিরাজুল মোস্তফা, পুলিশ সুপার শ্যামল কুমার নাথ, পৌর মেয়র মাহবুবুর রহমান প্রমুখ।
উদ্বোধনীতে কক্সবাজার বায়তুশ শরফ জব্বারিয়া একাডেমির শিক্ষার্থীরা এক মনোমুগ্ধকর ডিসপ্লে পরিবেশন করে।
এর আগে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে সকাল সাড়ে ১০টার পর শুরু হয় বিচ কার্নিভাল উপলক্ষ্যে আয়োজিত কার্নিভাল প্যারেড। যে প্যারেডটির শুরুতে ছিল হাতি। হাতি সালামের অভিবাদন, লাল-সবুজের প্রিয় পাতাকা, বিলুপ্ত গ্রামের পালকিতে বধূর যাত্রা, কৃষি-মৎস্যের উপকরণ কাস্তে-লাঙল-নৌকা, উপজাতির সংস্কৃতিসহ দেশ প্রেমবোধ, সংস্কৃতির শেকড়ের নানা উপস্থাপন ছিল প্যারেডটিতে।
বিভিন্ন স্কুল, কলেজ, রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন, সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন দফতরের লোকজনে সমৃদ্ধ প্যারেডটি সৈকতে এসে শেষ হয়। ওখানে বিচ কার্নিভালের উদ্বোধনের পর ৩ দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালা শুরু হয়। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে ফুটবল, ক্রিকেট, ভলিবল, বালু ভাস্কর্য প্রর্দশনী, ড. মুহাম্মদ জাফর ইকবালের নেতৃত্বে ঘুড়ি উৎসব, মাইক্রো লাইট এয়ারক্রাফট, বলিখেলা, প্যারাসেইলিং, ডি জে শো, ফানুস উড়ানো, জবিং এবং সঙ্গীতানুষ্ঠান। প্রথম দিন সঙ্গীত পরিবেশন করে ব্যান্ড দল রেডিও অ্যাক্টিড, মাকসুদ এর ঢাকা, কিরণ চন্দ্র রায় ও চন্দনা মজুমদার, জেমস এর নগর বাউল।
দ্বিতীয় দিন ১ জানুয়ারির অনুষ্ঠান শুরু হবে সকাল সাড়ে ৬ টায় হট এয়ার বেলুন উড়ানোর মধ্য দিয়ে। এরপর কাবাডি, ফুটবল, বালু ভাস্কর্য, সাইক্লিং, ঘুড়ি উৎসব, ক্রিকেট ম্যাচ, লায়ন ড্যান্স, মাইক্রো লাইট এয়ারক্রাফট, সেইলবোট, প্যারাসেল, ফানুস উড়ানো, রাখাইন নৃত্য ও সঙ্গীত অনুষ্ঠান। এতে সঙ্গীত শিল্পের মধ্যে থাকবেন, ফকির শাহাবউদ্দিন, শফি মণ্ডল, ভাইকিংস, চিরকুট, আঁখি আলমগীর ও এলআরবির আইয়ুব বাচ্চু।
অনুষ্ঠানের তৃতীয় দিন ২ জানুয়ারির অনুষ্ঠান শুরু হবে সকাল সাড়ে ৭ টায় এয়ার বেলুন উড়ানোর মধ্য দিয়ে। এতে দিনব্যাপী অনুষ্ঠানে রয়েছে কাবাডি, মোরগ লড়াই, সাফিং, বান্দরবানের শিল্পীদের উপস্থাপনা ও সঙ্গীতানুষ্ঠান। এতে গান পরিবেশন করবেন নিশীতা, ঝিলিক, আতিক হাসান, রাজীব, বারী সিদ্দিকী, মিলা ও জলের গান। তিন দিনব্যাপী অনুষ্ঠান শেষ হবে বিকেল ৫টার আগে।
মেগা বিচ কার্নিভাল উপলক্ষ্যে সমুদ্র সৈকতকে সাজানো হয় এক বর্ণিল সাজে। বালি ভাস্কর্যসহ বিভিন্ন ধরনের আয়োজন পর্যটকদের আনন্দে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। সব মিলিয়ে কার্নিভালটি নানা বয়সের মানুষের মিলন মেলায় পরিণত হয়েছে।
প্রসঙ্গত, সরকার ঘোষিত পর্যটন বর্ষ ২০১৬ তে ১০ লাখ বিদেশি পর্যটককে বাংলাদেশ ভ্রমণে আনার টার্গেট করে ৩ দিনব্যাপী বিচ কার্নিভালের আয়োজন করা হয়েছে।
সায়ীদ আলমগীর/এমজেড/পিআর