দুর্যোগ এলেই দুর্ভোগ বাড়ায় ভাঙা বাঁধ
‘জোয়ার এলে ঘরে হাঁটুপানি হয়ে যায়, রান্নাঘর তলিয়ে যাওয়ায় রান্না করা যায় না। রাত দিনে চারবার এরকম পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে হয়। ভাটায় জেগে গেলে কোনো রকমে একটু উঁচু করে রান্না করি। নোনাপানি চারদিকে ঘিরে থাকলেও এক ফোটা খাবার পানির জন্য হাহাকার পড়ে যায়। সারা রাত জেগে বসে থাকতে হয়, জোয়ারের পানির তোড়ে সব ভেসে না যায় সেই ভয়ে।’
কথাগুলো বলছিলেন খুলনার উপকূলীয় কয়রা উপজেলার উত্তর বেদকাশী ইউনিয়নের হরিহরপুর গ্রামের শুভাসিনী রানী মন্ডল।
একই গ্রামের কবিতা রানী মন্ডল বলেন, ছেলেমেয়ে নিয়ে খুব কষ্টে আছি। রান্না করার কোনো ব্যবস্থা নেই, খাবার পানির চরম সংকট দেখা দিয়েছে। টয়লেট করারও কোনো উপায় নেই। ছোট বাচ্চাদের ঘরে আটকে রাখাও দূরহ হয়ে পড়েছে।
জানা গেছে, উপজেলার উত্তর বেদকাশি ইউনিয়নের গাতিরঘেরী ও হরিহরপুর গ্রামে দিনে দুইবার জোয়ারের পানি ওঠে। পানিতে ভাসছে প্রায় দু’শ পরিবার। জোয়ার এলে ওই এলাকার মানুষের ঘরে কপোতাক্ষ নদীর পানি ঢুকছে। টিউবওয়েল ও শৌচাগারগুলো ডুবে যাচ্ছে। এতে করে ওই এলাকার বাসিন্দারা রয়েছেন স্বাস্থ্যঝুঁকিতে।
উত্তর বেদকাশি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সরদার নুরুল ইসলাম বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষের নজরদারি ও দায়িত্বহীনতার কারণে অদক্ষ লোকজন কাজের অনুমতি পায়। তারা কাজের মূল নকশা অনুসরণ না করে টাকা বাঁচাতে ইচ্ছামতো কাজ করে। ফলে যেকোনো দুর্যোগ এলেই বাঁধ ভাঙে, দুর্ভোগ বাড়ে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শামীম হাসনাইন মাহমুদ বলেন, পর পর কয়েকটি দুর্যোগের কারণে এলাকার বেশিরভাগ বাঁধ দুর্বল হয়ে পড়েছে। এসব বাঁধ স্থায়ীভাবে সংস্কারের জন্য বরাদ্দ অনুমোদন হয়েছে। ওই কাজ শেষ হলে আর ঝুঁকি থাকবে না।
কয়রা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি এস এম শফিকুল ইসলাম বলেন, ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদের প্রভাবে বর্তমানে যে স্থানে বাঁধ ভেঙেছে সেখানে কাজ চলমান ছিল। এ অবস্থায় কেন ভাঙলো, এরজন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বে অবহেলা ছিল কিনা তা খতিয়ে দেখা হবে।
এফএ/এমএস