১৬ বছরে ব্যয় বেড়েছে ১৪ গুণ, তবুও হয়নি সড়ক

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক বগুড়া
প্রকাশিত: ০১:৪৭ পিএম, ০৪ ডিসেম্বর ২০২১

বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপালের সাড়ে চার কিলোমিটার দৈর্ঘ্য ও ৬০ ফুট প্রস্থ রাস্তার নির্মাণ কাজ শুরু হয় ১৬ বছর আগে। সে সময় ব্যয় ধরা হয়েছিল ১৩ কোটি ৭০ লাখ ৬৮ হাজার টাকা। নানা জটিলতায় সড়কের দৈর্ঘ্য কমিয়ে আড়াই কিলোমিটার করা হলেও দীর্ঘ ১৬ বছরেও শেষ হয়নি সেই সড়কের নির্মাণ কাজ। সর্বশেষ সড়কের নির্মাণ কাজ শেষ করতে খরচ ধরা হয়েছে ১৮৪ কোটি ৭১ লাখ টাকা। তবে তাতেও লাভ হয়নি। ব্যয় ১৪ গুণ বাড়ানো হলেও সড়কের ৬৫০ মিটার অংশের কাজে এখনো হাত দেয়নি সওজ। ফলে এক ভুলের কারণে প্রকল্পে গচ্চা দিতে হচ্ছে অতিরিক্ত ১৭১ কোটি টাকা।

২০০৪ সালে বগুড়া শহরের সাতমাথা থেকে সাত কিলোমিটার দূরে প্রথম বাইপাস সড়কের সিলিমপুর এলাকায় স্থাপিত হয় শজিমেক হাসপাতাল। সাতমাথার সঙ্গে শজিমেক যাওয়ার সরাসরি কোনো রাস্তা না থাকায় স্টেশন সড়কের তিনমাথা ও শেরপুর সড়কের বনানী হয়ে সাত কিলোমিটার পথ ঘুরে হাসপাতালে যাতায়াত করতে হয়। এতে মুমূর্ষু রোগী এবং রোগীর সঙ্গে আসা স্বজনদের চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়। দুর্ভোগ লাঘবে ২০০৪ সালে শহরের রেল স্টেশনের সামনে থেকে সেউজগাড়ি ও মোহাম্মদ আলী হাসপাতাল হয়ে সরাসরি শজিমেক পর্যন্ত একটি সংযোগ সড়ক নির্মাণে প্রকল্প নেয় সওজ।

সাড়ে চার কিলোমিটার দৈর্ঘ্য ও ৬০ ফুট প্রস্থ রেখে নকশা অনুমোদনের পর জমি অধিগ্রহণ, মাটি কাটা এবং কার্পেটিংসহ ওই সময় সড়কটির নির্মাণ ব্যয় ধরা হয় ১৩ কোটি ৭০ লাখ ৬৮ হাজার টাকা। ২০০৫ সালের ২ মে পরিকল্পনা কমিশন থেকে প্রকল্পটি অনুমোদনের পর রাস্তার জন্য ১ দশমিক ১২ হেক্টর জমি অধিগ্রহণও করা হয়। পরে দৈর্ঘ্য সাড়ে চার থেকে কমিয়ে আড়াই কিলোমিটার করা এ রাস্তা নির্মাণে প্রকল্পের মেয়াদ তিন বছর ধরা হয়। কিন্তু পরবর্তী ১২ বছরে কাজ হয়েছে মাত্র ৮০০ মিটার।

jagonews24

সড়ক ও জনপথ বিভাগ জানায়, শুরুর পর নানা জটিলতায় ২০০৬ সালের মধ্যেই কাজ বন্ধ হয়ে যায়। যা ২০১৭ সাল পর্যন্ত কাজ বন্ধ ছিলো।

প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ভূমি অধিগ্রহণ থেকে শুরু করে নতুন রেট শিডিউলে অনেক কিছুর খরচই বেড়েছে। অন্যদিকে সড়ক নির্মাণে এত বেশি সময় লাগার পেছনে ভূমি অধিগ্রহণ সংক্রান্ত জটিলতাকে দায়ী করছেন তারা।

পরিকল্পনা কমিশন এবং সড়ক ও জনপথ অধিদফতর সূত্র জানায়, অসমাপ্ত সংযোগ সড়ক নির্মাণে ২০১৭ সালের নভেম্বর থেকে ২০১৯ সালের জুনের মধ্যে এটি সম্পূর্ণ বাস্তবায়নের কথা ছিল। ওই সময় সড়কে অবশিষ্ট অংশ নির্মাণে খরচ ধরা হয়েছিল ১০৪ কোটি ৯৯ লাখ টাকা। প্রকল্পটি পুনরায় একনেকে অনুমোদন পায় ২০১৮ সালের ২৩ জানুয়ারি। তবে নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে এর কাজ শেষ করা যায়নি। পরে প্রকল্প সংশোধন ছাড়াই তিন দফায় নির্মাণ সময় বাড়ানো হয়। প্রথমবার ২০২০ সালের জুন, দ্বিতীয়বার ২০২১ সালের জুন এবং তৃতীয়বার ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত সময় নেওয়া হয়েছে।

তবে ২০২১ সালের শেষে দেখা যাচ্ছে প্রকল্পের ৬৫০ মিটার অংশের কাজ পুরোটাই বাকি রয়েছে। সেখানে রাস্তা সম্প্রসারণে প্রাথমিক কাজটিও শুরু হয়নি। ঘরবাড়িসহ বিভিন্ন স্থাপনাগুলোও রয়েছে আগের মতোই। ভুল সিদ্ধান্ত ও ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতায় নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করতে না পারায় সড়কটি নির্মাণের খরচ বেড়ে যাচ্ছে বলে বলছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা।

jagonews24

শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. আব্দুল ওয়াদুদ জানান, শহর থেকে হাসপাতাল দূরে হওয়ায় অনেক সময়ই জরুরি প্রয়োজনেও চিকিৎসকরা তাড়াতাড়ি হাসপাতালে আসতে পারেন না। সড়কটি নির্মাণ হলে শহরের কেন্দ্রস্থল সাতমাথা থেকে শজিমেকে আসতে সময় এবং টাকা দুটাই বাঁচবে।

প্রকল্পের দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য সচিব মামুন আল-রশীদ বলেন, শজিমেক সড়ক প্রকল্পটি বাস্তবায়নে দেরি হওয়ার অন্যতম কারণ ভূমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া। প্রকল্প অনুমোদনের পর সরকার অধিগ্রহণ নীতিমালা সংশোধন করে তিনগুণ দাম দেওয়ার নিয়ম চালু করে। এজন্য প্রকল্পটি সংশোধন না করা পর্যন্ত ভূমি অধিগ্রহণে টাকা পাওয়া যাচ্ছিল না।

তিনি আরও বলেন, প্রকল্পটি ছোট হলেও গুরুত্বপূর্ণ। এটি বাস্তবায়ন হলে বগুড়া শহর থেকে মেডিকেল কলেজের দূরত্ব প্রায় পাঁচ কিলোমিটার কমবে।

সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী আসাদুজ্জামান বলেন, গুরুত্বপূর্ণ এ প্রকল্পে অর্থ ছাড় স্থগিতের কারণে আবারও দীর্ঘসূত্রতা তৈরি হয়েছে। অধিগ্রহণ ও নির্মাণসহ এখনো ৯৯ কোটি টাকা পাওয়া যায়নি। এটির প্রস্তাবনা জমা দেয়া রয়েছে। একনেকের বৈঠকে এই প্রকল্পের বাকি অর্থ ছাড় করা হলেই কাজ শুরু হবে।

এএইচ/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।