সিলেটে ১৬ পৌরসভায় ভোটগ্রহণ শেষ, চলছে গণনা
সিলেট বিভাগের ১৬টি পৌরসভায় বড় ধরনের নাশকতার ঘটনা ছাড়াই শান্তিপূর্ণভাবে ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ভোট গণনা চলছে।
তবে হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ ও মৌলভীবাজারে কিছু বিছিন্ন ঘটনার খবর পাওয়া গেছে। হবিগঞ্জে ৮টি কেন্দ্র সাময়িক স্থগিত করার পর ফের চালু করা হয়। দুপুরে সুনামগঞ্জ ও মৌলভীবাজারের গণমাধ্যম কর্মীদের লাঞ্ছিত করার খবর পাওয়া গেছে। মৌলভীবাজার সদর পৌরসভায় একটি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
এছাড়া সিলেট জেলার তিন পৌরসভায় শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোটগ্রহণ হয়েছে। কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। যদিও এই পৌরসভাগুলোকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে ভোটের আগে চিহ্নিত করেছিলো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
গোলাপগঞ্জ পৌরসভায় সকাল থেকেই উৎসব মুখর পরিবেশে ভোটগ্রহণ শুরু হয়। পৌষের শীত উপেক্ষা করে সব শ্রেণির নারী-পুরুষরা লাইন ধরে ভোট প্রদান করেন। ভোট প্রদানকালে আওয়ামী লীগের প্রার্থী জাকারিয়া পাপলু ধীর গতিতে ভোট গ্রহণ হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছিলেন।
আর বিএনপি প্রার্থী গোলাম কিবরিয়া শাহীন অভিযোগ করে বলেন- অতিরিক্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকায় তিনি শঙ্কিত। তার ভোটাররা ভয়ে কেন্দ্রে আসতে সাহস পাচ্ছে না। তিনি বলেন, উপজেলা পরিষদে ভোট গণনা হবে এমন গুঞ্জণ শুনছি, আমি আমার এজেন্টদের বলে দিয়েছে গণনা শেষ না করে যেন কেউ কেন্দ্র ত্যাগ না করে।
আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থী সিরাজুল জব্বার চৌধুরী ভোট গ্রহণের গতি শ্লথ থাকার অভিযোগ করলেও শান্তিপূর্ণ পরিবেশের জন্য সন্তোষ প্রকাশ করেন।
এদিকে কানাইঘাটেও বড় কোন গোলযোগ ছাড়াই দিনভর ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হয়। তবে দুপুরের দিকে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী মো. নিজাম উদ্দিন আল মিজানের বিরুদ্ধে টাকা দিয়ে ভোট কেনার অভিযোগ করেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী বর্তমান মেয়র মো. লুৎফুর রহমান।
কানাইঘাটে পুরুষের চাইতে নারী ভোটারদের উপস্থিতি বেশি : কানাইঘাট পৌরসভার নির্বাচনে পুরুষ ভোটারদের চেয়ে নারী ভোটারদের উপস্থিতি ভোট কেন্দ্রগুলোতে ছিল লক্ষণীয়। সকাল ৮টা থেকে দুপুর ৪টায় পর্যন্ত নারী ভোটারদের দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে ভোট দিতে দেখা যায়।
পৌরসভার ১নং ওয়ার্ডে রামপুর বেসরকারি পৌর প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ৭ নং ওয়ার্ডের ইউটিডিসি হল কেন্দ্রে গিয়ে দেখা গেল এমনই চিত্র।
ইউটিডিসি হল কেন্দ্রে কথা হয় ৪৫ বছর বয়স্ক তেরাবান বেগমের সাথে। তিনি জানান ‘ভোট দেওয়া যখন লাগবো তে আগে দেওয়াউ ভালা, ঘরও তো বউত কাম কাজ আছে’।
জকিগঞ্জে বিএনপি-জাপা ও আওয়ামী লীগ মেয়র প্রার্থীদের পাল্টাপাল্টি বিভিন্ন অভিযোগ ছাড়া ভোটগ্রহণ শান্তিপূর্ণই ছিল। জকিগঞ্জে বিএনপি সমর্থিত মেয়র প্রার্থী বদরুল হক বাদল, আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী, স্বতন্ত্র প্রার্থী ফারুক আহমদ ও জাতীয় পার্টি সমর্থিত প্রার্থী আবদুল মালেক ফারুক আওয়ামী লীগের প্রার্থীর বিরুদ্ধে প্রভাববিস্তারসহ বিভিন্ন অভিযোগ করেছেন।
আর আওয়ামী লীগের প্রার্থী মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার খলিলুর রহমান এসব অভিযোগ অস্বীকার করে পাল্টা অভিযোগ করে বলেছেন, এরা আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়ে ভোটারদের বিভ্রান্ত করতে চাচ্ছে।
বিএনপি প্রাথী বদরুল হক বাদল অভিযোগ করে বলেন, ‘পৌরসভার ৫ নং ওয়ার্ড হচ্ছে পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতির এলাকা। তিনি ওই ওয়ার্ডের মধুদত্ত এফআইবিডিবি ভোটকেন্দ্রে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা চালাচ্ছেন। সেখানে জাল ভোট দেয়া হচ্ছে। কেন্দ্রটি আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা দখর করার পাঁয়তারা চালাচ্ছে।’
আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী, স্বতন্ত্র প্রার্থী ফারুক আহমদ অভিযোগ করে বলেন, ‘আনন্দপুর, তীরেরচক ও গোপীর চক নিয়ে গঠিত জকিগঞ্জ পৌরসভার ৩ নং ওয়ার্ডের তীরেরচক কেন্দ্রে তাঁর এজেন্টকে দলীয় প্রার্থীর এজেন্টরা হুমকি-ধামকি দিচ্ছে। আমি বিষয়টি প্রিজাইডিং অফিসারকে জানিয়েছি।’ ফারুক আহমদ জগ প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে লড়ছেন।
জকিগঞ্জ পৌরসভার বর্তমান মেয়র, জাতীয় পার্টি সমর্থিত মেয়র প্রার্থী আবদুল মালেক ফারুক অভিযোগ করে বলেন, ‘পৌরসভার ৭ নং ওয়ার্ডের আনসার ক্যাম্পে আঞ্জুমানে আল ইসলাহ’র কর্মী আজমল আলী লাঙ্গল প্রতীকের ভোটারদের ভোট প্রদানে হুমকি দিচ্ছে। সে লাঙ্গল প্রতীকে ভোট না দিয়ে আল ইসলাহ সমর্থিত প্রার্থী হিফজুর রহমানের মোবাইল ফোনে ভোট দেয়ার জন্য হুমকি দিচ্ছে।’
প্রার্থীদের অভিযোগ প্রসঙ্গে জকিগঞ্জ পৌরসভার রিটার্নিং অফিসার মোবাশ্বেরুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, ‘অভিযোগ পাওয়া মাত্রই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। বিএনপি প্রার্থীর অভিযোগের ভিত্তিতে সেখানে ম্যাজিস্ট্রেট পাঠানো হয়েছে। জাল ভোটের প্রমাণ পেলেই কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
এছাড়া সুনামগঞ্জ জেলার সুনামগঞ্জ, জগন্নাথপুর, ছাতক ও দিরাই, মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া, বড়লেখা, কমলগঞ্জ, হবিগঞ্জ জেলার, নবীগঞ্জ, মাধবপুর, সায়েস্তাগঞ্জ ও চনারুঘাট পৌরসভা। পৌরসভায় বিকেল ৪টায় ভোটগ্রহণ শান্তিপূর্ণভাবেই শেষ হয়। সবগুলো কেন্দ্রে এখন চলছে গণনা।
সিলেট বিভাগের সিলেট জেলায় ৩ টি, সুনামগঞ্জে ৪টি, মৌলভীবাজারে ৪টি এবং হবিগঞ্জের ৫টি পৌরসভায় এবার পৌর নির্বাচন সম্পন্ন হচ্ছে।
ছামির মাহমুদ/এসকেডি/আরআইপি