হাফেজ-অসহায়দের জন্য হোটেলের খাবার ফ্রি স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতার
কুমিল্লার চান্দিনায় একটি পরিচিত নাম ‘মামা-ভাগিনা হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট’। হোটেলটির বিশেষ পরিচিতির কারণ হলো এখানে টাকা ছাড়াই প্রতিদিন তৃপ্তি সহকারে খাওয়ানো হয় হাফেজদের। পাঁচ মাস ধরে এ ধারাবাহিকতা অব্যাহত রয়েছে। ব্যতিক্রমী এ উদ্যোগ প্রশংসা কুড়িয়েছে।
হাফেজদের পাশাপাশি হোটেলটিতে খেতে আসা আলেম-ওলামা ও অসহায়দের কাছ থেকেও নেওয়া হয় না টাকা। ‘হাফেজদের জন্য খাবার ফ্রি’ লিখে একটি সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে হোটেলের সামনে।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চট্টগ্রামমুখী লেনের পাশে চান্দিনার বাগুর বাসস্ট্যান্ডে ‘মামা-ভাগিনা হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্টের’ অবস্থান। প্রায় চার বছর আগে কুমিল্লা উত্তর জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা লিটন সরকার ও তার ভাগনে মো. অনিক যৌথভাবে হোটেলটি প্রতিষ্ঠা করেন।
পাঁচ মাস আগে তারা দুজন সিদ্ধান্ত নেন তাদের হোটেলে কোনো হাফেজ খাবার খেতে এলে তার কাছ থেকে টাকা-পয়সা নেওয়া হবে না। একইসঙ্গে আলেম কিংবা অসহায় ব্যক্তিদেরও ফ্রিতে খাওয়ানোর সিদ্ধান্ত নেন মামা-ভাগনে।
গত পাঁচ মাসে অন্তত চার হাজার হাফেজ, আলেম ও অসহায় ব্যক্তিকে খাওয়ানো হয়েছে। ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানটি যতদিন চালু থাকবে ততদিন এ শ্রেণির লোকদের ফ্রিতে খাওয়ানোর ঘোষণা দিয়েছে হোটেল কর্তৃপক্ষ।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, লিটন সরকার দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় গরিব ও অসহায় মানুষদের সহযোগিতা করে আসছেন। কারও সমস্যার কথা শুনলে তিনি সবার আগে এগিয়ে যান। আর্থিক ও সামাজিকভাবে সমাধানের চেষ্টা করেন।
শুধু খাওয়ানো নয়, করোনাকালীন কুমিল্লার বিভিন্ন স্থানে শতাধিক মুসলিম ও হিন্দু সম্প্রদায়ের মৃত ব্যক্তিদের সৎকারের ব্যবস্থা করেছেন লিটন সরকার। এসব কাজে অংশগ্রহণ করায় এলাকার লোকের মুখে মুখে তার নাম।
লিটন সরকার জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমার বোনজামাই এবং ভাগনেকে নিয়ে চার বছর আগে হোটেলটি চালু করি। রাজনীতি ও সামাজিক কর্মকাণ্ডে সক্রিয় থাকার কারণে হোটেলে বসা সম্ভব হয় না। বেশিরভাগ সময় ভাগনে হোটেল পরিচালনা করে।’
হাফেজদের জন্য ফ্রিতে খাওয়ার ব্যবস্থা করার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমার এক ছেলে ও এক মেয়েকে হাফেজ বানাতে মাদরাসায় ভর্তি করিয়েছি। এ সুবাদে আলেমদের সঙ্গে আমার ওঠাবসা এবং তাদের জন্য ভালোবাসা তৈরি হয়। চার পাঁচ মাস আগে ভাগনের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিই হাফেজদের ফ্রিতে খাওয়ানো হবে। এরপর হোটেলের সামনে একটি সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দেই।’
এ পর্যন্ত প্রায় চার হাজার হাফেজ, আলেম ও অসহায়দের ফ্রিতে খাইয়েছে হোটেল কর্তৃপক্ষ। লিটন সরকার বলেন, যতদিন হোটেলটি চালু থাকবে ততদিন আমাদের এ সেবাও চালু থাকবে।
জাহিদ পাটোয়ারী/এসআর/এএসএম