কাঞ্চনজঙ্ঘার লুকোচুরি দেখছেন পর্যটকরা

সফিকুল আলম
সফিকুল আলম সফিকুল আলম , জেলা প্রতিনিধি পঞ্চগড়
প্রকাশিত: ০৪:৪৯ পিএম, ২০ নভেম্বর ২০২১

প্রতি বছরের মতো এবারও পঞ্চগড়ের উত্তরাকাশে জেগে উঠেছে নয়নাভিরাম কাঞ্চনজঙ্ঘা। অক্টোবরের মাঝামাঝি থেকে নভেম্বরজুড়ে তেঁতুলিয়া থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘার অপরূপ দৃশ্য দেখা যায়। এছাড়া শীতের আমেজ উপভোগ করতে বছরের এ সময়ে দেশের বিভিন্ন এলাকার পর্যটকরা ছুটে আসেন জেলাটিতে।

জেলার বিভিন্ন জায়গা থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা গেলেও তেঁতুলিয়ার ডাকবাংলো এলাকার মহানন্দা নদীর পাড় থেকে বেশ কাছাকাছি ভেসে ওঠে পর্যটকদের চোখে। কুয়াশা আর মেঘের কারণে কাঞ্চনজঙ্ঘার লুকোচুরি কম দেখেছেন পর্যটকরা। আকাশ পরিষ্কার থাকলে দিনভর দেখা যায় কাঞ্চনজঙ্ঘা। তবে বিকেলের পর এবং ভোরের আকাশে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখার অনুভূতিটাই আলাদা।

jagonews24

শুক্রবার (১৯ নভেম্বর) সূর্যোদয়ের পর সরেজমিনে তেঁতুলিয়ার ডাকবাংলো এলাকার মহানন্দার পাড়ে কাঞ্চনজঙ্ঘার অপরূপ দৃশ্য দেখা গেছে। সূর্যের আলো বাড়ার সঙ্গে কাঞ্চনজঙ্ঘার রূপ বদলে যেতে থাকে। কখনো রূপালি স্বেতশুভ্র, আবার বিকেলের পর সোনালি আভায় ভরে ওঠে কাঞ্চনজঙ্ঘা।

তবে এবার সময়-অসময়ে আকাশে কুয়াশা আর মেঘ থাকায় কাঞ্চনজঙ্ঘা না পেয়ে ফেরত গেছে অনেকেই। তবে উত্তরের পঞ্চগড়ের বর্তমান সময়ের শীতের আমেজ তাদের হতাশ হতে দেয়নি। এখনকার শীতও যেন পর্যটকদের জন্য একটা উপভোগ্য বিষয়।

jagonews24

শীতের এমন আমেজ এবং কাঞ্চনজঙ্ঘার অপরূপ দৃশ্য পঞ্চগড়ের একটি ঐতিহ্যে পরিণত হয়েছে। প্রতি বছর এই সময়ে ভ্রমণপিপাসুরা পঞ্চগড় আর তেঁতুলিয়া ঘুরে তৃপ্ত হন। তেঁতুলিয়া উপজেলার বাংলাবান্ধা সীমান্ত থেকে ভারতের শিলিগুড়ির দূরত্ব মাত্র আট কিলোমিটার। শিলিগুড়ি থেকে ভারতের দার্জিলিংয়ের দূরত্ব প্রায় ৭৭ কিলোমিটার। এজন্যই মূলত হিমালয় পর্বতমালার তৃতীয় সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ কাঞ্চনজঙ্ঘা তেঁতুলিয়া থেকেই পরিষ্কার দেখা যায়।

কাঞ্চনজঙ্ঘা আর উপভোগ্য শীতের কারণে পঞ্চগড় এবং তেঁতুলিয়ায় পর্যটকদের উপস্থিতি বেড়ে গেছে। স্থানীয় হোটেল রেস্তোঁরা, আবাসিক হোটেলে স্থান সংকুলান হচ্ছে না। রিকশা-ভ্যান আর ইজিবাইকের মতো ছোট যানবাহনগুলোর যাত্রী সংখ্যা বেড়ে গেছে। তেঁতুলিয়া উপজেলার সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ডাকবাংলোগুলোও প্রতিদিন ভিড় থাকছে। অনেকে ছয়-সাতদিন আগে বুকিং দিয়েও রাতে ঘুমানোর জায়গা পাচ্ছেন না। তবে এ এলাকায় কমিউনিটি ট্যুরিজম সিস্টেম উন্নয়নের পরামর্শ দিচ্ছেন পর্যটকসহ স্থানীয়রা।

jagonews24

কুষ্টিয়ার কুমারখালী থেকে পরিবার নিয়ে আসা রইসুল ইসলাম বলেন, ‘আমি যোগাযোগ করে পাঁচদিন আগে হোটেল বুকিং দিয়েছি। এখানে এসে খুব ভালো লেগেছে। ভোরের আলোয় কাঞ্চনজঙ্ঘার অপরূপ দৃশ্য দেখেছি। এখানকার শীতও বেশ উপভোগ্য। এখন এ এলাকা ঘুরে বেড়ানোর উপযুক্ত সময়।’

নারায়ণগঞ্জ থেকে আসা কলেজছাত্র আবিদ সুলতান বলেন, আমাদের হয়তো কপাল খারাপ। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম অথবা ছবিতে যেমন কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখেছি, বাস্তবে এসে তেমনটা দেখা গেলো না। আমরা তিনদিন থেকেও ভালোভাবে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে পারিনি। তবে সমতলে চা বাগান, বাংলাবান্ধা জিরোপয়েন্ট, মহানন্দা নদীর রাতের দৃশ্য এবং বর্তমানে চমৎকার শীতের আমেজ আমাদের পুলকিত করেছে। আমরা এখন থেকে প্রতি বছর এ সময়ে তেঁতুলিয়ায় আসার চেষ্টা করবো।

পঞ্চগড় পর্যটন উন্নয়ন পরিষদের সভাপতি হাসনুর রশিদ বাবু বলেন, পর্যটনের জন্য পঞ্চগড় একটি অপার সম্ভাবনাময় এলাকা। বিশেষ করে তেঁতুলিয়া নামটার সঙ্গে পর্যটন শব্দটি মিশে আছে। সারা বছর পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় দেশের বিভিন্ন এলাকার ভ্রমণ-পিপাসুরা ঘুরতে আসেন। বিশেষ করে অক্টোবর এবং নভেম্বরজুড়ে পর্যটকদের ব্যাপক আসা যাওয়া থাকে।

jagonews24

এবারও এর ব্যতিক্রম হয়নি। গত বছর সম্ভবত করোনার কারণে বায়ুদূষণ কম হয়েছিল। এজন্য গত বছর কাঞ্চনজঙ্ঘা অনেক স্বচ্ছভাবে দেখা গেছে। এবার কুয়াশা আর মাঝে মধ্যে মেঘের কারণে প্রতিদিন কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা যাচ্ছে না। তবে এখনো আকাশ মেঘমুক্ত এবং কুয়াশামুক্ত থাকলে কাঞ্চনজঙ্ঘার অপরূপ দৃশ্য দেখা যায়। বর্তমান সময়ে এখানকার শীতের আমেজ আসলেই অনেকের জন্য উপভোগ্য।

জেলা প্রশাসক জহুরুল ইসলাম বলেন, পঞ্চগড় একটি শান্তিপূর্ণ এলাকা। এখানকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিও বেশ উন্নত। পর্যটকরা স্বাচ্ছন্দ্যে এসে ঘুরে যান। কেউ যেন কোনোভাবে হয়রানির শিকার না হন এজন্য ট্যুরিস্ট পুলিশ কাজ করছে।

কাঞ্চনজঙ্ঘা ছাড়াও জেলায় সমতল ভূমির চা বাগান, বাংলাবান্ধা জিরোপয়েন্ট, আনন্দধারা, ঐতিহাসিক তেঁতুলিয়া ডাকবাংলো, তেঁতুলিয়া যেতেই ভিতরগর দুর্গমগরিসহ জেলায় অসংখ্য পর্যটন স্পট রয়েছে। এছাড়া বর্তমানে এখানে শীতের চমৎকার আমেজ বিরাজ করছে। ভ্রমণপিপাসুরা পরিবার নিয়ে এসে ঘুরে বেড়ানোর এখনই উপযুক্ত সময়।

এমআরএম/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।